somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নড়াইল ও মাশরাফিকে নিয়ে কিছু স্মৃতি

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি যখন ক্লাস এইটের ছাত্র,তখন বাবার চাকরীর সূত্রে গিয়েছিলাম নড়াইলে।সময়টা ছিল ২০০৩ ।নড়াইলে যাওয়ার পরপরই জানতে পারলাম,বাংলাদেশের নবীন পেশ বলার মাশরফি বিন মূ্র্তজার বাড়ি এই নড়াইলেই। এমনি আমার ভাগ্য,এক বছর পর সেই মাশরাফিদের বাসাই ভাড়া নিলাম আমরা ।মাশরাফি ভাইয়ার ডাক নাম, “কৌশিক”।কৌশিক নামেই এলাকায় পরিচিত তিনি ।কৌশিক ভাইদের পরিবারের সাথে দারূণ সম্পর্ক ছিল আমাদের;এটাকে নিছক বাড়িওয়ালা ভাড়াটিয়া সম্পর্ক ভাব্লে ভুল হবে। ।কৌশিক ভায়ের মা, বলাকা আন্টি প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায় ।জাতীয় দলের ব্যস্ত কর্মসূচির ফাঁকে সুযোগ পেলেই বাড়ি চলে আসত কৌশিক ভাই ।কৌশিক ভাইদের বাসার সামনে শীত কালে আমরা ব্যাডমিন্টন খেলতাম।সে খেলায় কৌশিক ভায়ের বাবা স্বপন কাকুও অংশ নিতেন মাঝে মাঝে ।অনেকেই হয়তো জানেন না, কৌশিক ভায়ের বাবা স্বপন কাকুও কিন্তু ভালো ব্যাডমিন্টন খেলোয়ার ।আসলে,খেলাধূলায় যে নড়াইল এত উন্নত, নড়াইলে না গেলে সেটা বুঝতে পারতেম না।শুধু ক্রিকেট খেলায় নয়, টেবিল টেনিসসহ বিভিন্ন খেলায় নড়াইলের ছেলেমেয়ারা খুবই খুবই।এই নড়াইলেই কেটেছে আমার স্কুল জীবনের শেষ অধ্যায় । কয়েকটি মজার ঘটনা শেয়ার করছি।
একদিন মাঠে খেলতে গিয়ে সিজার নামে একটা ছেলের বলে বেশ ভাল রান করলাম।(খেলাধূলায় আমি খুব একটা ভালো নই।). খেলা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে জানতে পারলাম যার বলে এত পেটালাম সে বাংলাদেশ দলের সেরা পেশ বোলার মাশরাফি বিন মূর্তজার ছোট ভাই,সিজার ।ব্যাপরটা আমার জন্য ছিল রিতীমত রোমানঞ্চকর।
মাঠে একদিন হঠাৎ দেখলাম কৌশিক ভাইকে।ফুটবল খেলছিলেন তিনি ।আমার মনে হচ্ছিল যেন কোনো দানবকে দেখছি মাঠে ।আসলে বাংলাদেশের মানুষের গর উচ্চতার চেয়ে ওনার উচ্চতা এতই বেশি যে হঠাৎ দেখলে তা চমকে উঠার মতই।
আমাদের স্কুলের তৃ্তীয়তলা থেকে একবার পড়ে গিয়েছিলেন কৌশিক ভাই ।সেই জায়গাটাও দেখলাম ।আসলে,যে স্কুলে পড়েছি সেই স্কুলের প্রতিটা বিন্দুতে মিশে আছে,কৌশিক ভায়ের স্মৃতি।
কৌশিক ভাই নড়াইলে আসলে সবসময়ই দেখতাম ওনার নিজের ক্লাবের ছেলেদের প্র্যক্টিস করানোর দ্বায়িত্ব নিতে।স্বাভাবিকভাবেই নিজের এলাকায় ওনার কোন স্টার সুলভ আচরণ আমি দেখিনি।কেউ কেউ বলত উনি নাকি নিজের এলাকার ছেলেমেয়েদেরকে কখোন অটগ্রাফ দেননা।অনেকে অনেক নেতিবাচক কথা বলত উনার সম্পর্কে।সেগুলো এখানে উল্লেখ করছি না।আসলে উনি ছিলেন "দুষ্টু ছেলে" !!উনার সাথে খেলার সৌভাগ্য অবশ্য নড়াইলের অনেকের মত আমারো হয়েছে।
মনে হলে হাসিই পায়,কৌশিক ভায়ের বাবা একবার মিষ্টি নিয়ে আসলেন আমাদের বাসায়।উপলক্ষ জানতে চাইলে বললেন,"ছেলে দার্শনিক হবে।" "মানে?" মানে কৌশিক ভাই,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে খেলোয়ার কোঠায় দর্শনে চাঞ্চ পেয়েছে।খুবই খুশির খবর!এখন অবশ্য উনি ওখানে পড়ছেন না।
কৌশিক ভাই যখন ইনজুরিতে পড়লেন তখন বলাকা আন্টির মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল সে ভাষায় বর্ণণা করা সম্ভব না ।মানষিকভাবে যতটুকু স্বান্তনা জানানো সম্ভব আমরা জানিয়েছিলাম।খুব খারাপ লেগেছিল যেদিন আন্টিকে কাঁদতে দেখেছিলাম।
সকালে আমি প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় দেখতাম কৌশিক ভাই মাঠে দৌড়াচ্ছেন,নিজেকে তৈরী করছেন। অসম্ভব মনের জোর ছিল ওনার।সেই মনের জোর দিয়েই জয় করেছিলেন সকল বাধা ।বলাকা আন্টি যেদিন আমাদের বাসায় এসে অতি আনন্দের সাথে জানালেন যে,কৌশিক ভাই এখন খেলার জন্য পুরপুরি ফিট, সেদিন তার আনন্দে আমরাও সামিল হয়েছিলাম ।
দূর্ভাগ্য আমার, কৌশিক ভায়ের বিয়েতে থাকতে পারিনি, কারণ তার মাত্র কয়েকদিন আগেই বাবার বদলির কারণে আমরা পাড়ি জমালাম পাবনায়।২০০৬সালে অনেক ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল কৌশিক ভায়ের ।যোগাযগ প্রায় ছিলইনা বলতেগেলে ওনাদের সাথে ।এর মাঝে অনেক বড় স্টার হয়েছেন তিনি।আইসিএল বিতর্কে না জড়ান তাকে আরো সম্মানিত করেছে।ইঞ্জুরি সমস্যাও আর অতটা ভোগায় না তাকে।পেয়েছেন বাংলাদেশের সহ অধিনায়ক হওয়ার সম্মান ।
২০০৯ এর জানুয়ারি মাসে বেড়াতে গিয়েছিলাম নড়াইলে।বন্ধুদের সাথে দেখা করাই ছিল উদ্দেশ্য । কৌশিক ভাইদের বাড়ি “ছোট্ট কুঠি”-র পাশ দিয়ে যাওয়ার মনে হলো একবার বলাকা আন্টির সাথে দেখা করা উচিত। কিন্তু কিছুটা দ্বিধান্বিতও হলাম;নড়াইলে থাকতে যা মনে কখনো মনে হয় নি তাই তখন মনে হলো। মনে হলো,এত বড় একজন স্টারের বাড়িতে ঢুকব?আন্টি আমাকে চিনবেনতো!
আন্টিকে দেখে ছালাম দিলাম ।অবাক হলাম,আন্টি আমাকে চিনতে একটুও সময় নিলেন না।অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে কথা বললেন ।আমার আরো দুইজন বন্ধু ছিল সেখানে।আমাদের তিনজনকেই নিমত্রন জানালেন রাতে খাওয়ার জন্য।খুব অস্বস্তি হচ্ছিল,কিন্তু এতটাই আন্তরিকতার সাথে তিনি বললেন,"না বললে হবে না,খেতেই হবে ",যে আমি রাজি না হয়ে পারলাম না।তিন বন্ধু মিলে এক সাথে খেলাম।খেতে বসে অনেক গল্প করলাম।কৌশিক ভায়ের সাথে যুবরাজ,এরফান পাঠান, শ্রীসান্থ এর ঘনিষ্ট সম্পর্কের কথা বললেন বলাকা আন্টি।বাংলাদেশ দলের বিরল অনেক তথ্যও জানলাম যেসব তথ্য বাংলাদেশের সাংবাদিকদের কাছে নেই।(গোপনীয়তার কারনে সেগুলো উল্লেখ করলাম না)।
মাঝখানে কেটে গেছে চার বছর কিন্তু তিনি ঠিকই মনে রেখেছেন,যে আমি খাওয়ার ব্যপারে খুব সিম্পল ।ডিম বেশি খাই না,চিংরি মাছ পছন্দ করি,ইত্যাদি কনো কিছুই তিনি ভলেননি।ব্যপারটা আমার কাছে রিতীমত বিষ্ময়কর মনে হয়েছে।এলাকায় কৌশিক ভাইদের ইমেজ খুবই ভাল। সবাইকে তাদেরকে জানে পরোপকারি হিসেবে।পণ্ডিত রবি শংকর,উদয় শংকর,এস.এম.সুলতানের দেশে মাশরাফি আর নড়াইলের কৌশিক এক নতুন বিষ্ময়।ইঞ্জুরির সাথে এত লড়াই করতে না হলে,তার ক্যারিয়ার এর চেয়ে অনেক ভাল হতে পারত,এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।যাহোক,খুব ভাল এক স্মৃতি নিয়ে ফিরলাম সেখান থেকে।খুব সাধারণ হলেও আমার কাছে তা সম্পদের মতই ।
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×