[ বাণী চিরন্তনিঃ
যেই ছেলে বা মেয়ে ভার্সিটি তে পড়াশোনা করেছে কিন্তু ভার্সিটির আবাসিক হলের ডাল খায় নাই তার ক্যাম্পাস জীবন অপূর্ণই থেকে গেল, ঠিক যেমন মাঝি ছাড়া নৌকা অপূর্ণ থেকে যায় – জনৈক ক্যাম্পাস মনীষী]
সময়টা ২০০২ সাল। সবেমাত্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তি হয়েছি (২ মাসের বেশি অবশ্য থাকিনি, মাইগ্রেশন করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এ চলে গিয়েছিলাম)। উঠেছিলাম হাসান কটেজে যেটা শাহ্ আমানত হলের পাশেই। খাওয়া-দাওয়া করতাম আমানত হলের ডাইনিং এ। সেই সময় বিশ্বকাপ ফুটবল চলছিল। আমাদের প্রতিদিনকার রুটিন ছিল রাতে খাবার খেয়ে দ্রুত চলে যেতাম হলের টিভিরুমে। তা না হলে বসার জায়গা পেতাম না। যদিও বেশিরভাগ ছাত্রদেরকেই দাঁড়িয়ে খেলা দেখতে হত।
যে দিনের ঘটনা লিখছি সেদিন ছিল আর্জেন্টিনা আর ইংল্যান্ড এর প্রথম পর্বের খেলা। স্বাভাবিকভাবেই সেদিন ছিল প্রচণ্ড ভিড়। ডাইনিং এ গিয়ে কোনভাবে একটা সিট দখল করে বসলাম। হলের ডাইনিং এ যাদের খাবার অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন যে একটা বড় গামলা তে করে ডাল দেওয়া হয়। আর ভার্সিটির ডালের একটা সুখ্যাতি আছে যে সেটা এমন পাতলা হয় সাধারন কেউ ধরতেই পারবে না যে ডালের মাঝে পানি দেওয়া হয়েছে নাকি পানির মাঝে ডাল দেওয়া হয়েছে। যখন আশেপাশে পানি থাকে না তখন পানির তৃষ্ণা আমাদেরকে ডাল দিয়েই মেটাতে হয়েছ
যা বলছিলাম। আমানত হলের ডাইনিং এ একটা গামলায় থাকত ডাল আর আরেকটা গামলা থাকত যেটাতে খাবার পর আমরা হাত ধুয়ে পানিটা রেখে দিতাম, সোজা বাংলায় হাত ধোওয়া পানি। যেহেতু মশলা জাতীয় খাবার বেশি দিত তাই হাত ধোওয়ার পর সেই পানিটার রঙ হয়ে যেত হালকা হলুদ যা কিনা অতি পাতলা ডালের রঙ এর সাথে মিলে যেত।
খেলা দেখার জন্য সেদিন সবাই খুব তাড়াহুড়ো করছিল। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে খাবার শেষে হাত ধুতে গিয়ে খেয়াল করলাম ময়লা পানির গামলায় হাত না ধুয়ে আমি হাত ধুয়েছি ডালের গামলায়। জায়গায় জমে গেলাম। কারন কেউ দেখে থাকলে খবর আছে। চারপাশে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম কেউ খেয়াল করে নি। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। দ্রুত টেবিল থেকে উঠে পড়লাম। ডাইনিং রুম থেকে বের হবার আগে পেছনে তাকিয়ে দেখলাম অন্যরা সেই ডালের গামলা থেকে অবলীলায় ডাল খাচ্ছে। আমি পা চালালাম টিভি রুমের উদ্দেশ্যে।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৪১