somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রিয় ক্রিকেটার: এবি ডিভি লিয়ার্স

১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিনটার কথা এখনো মনে আছে ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ। কোন একটা কারণে মামা বাড়ি যাওয়া হয় সেদিন। ঐদিনই আবার ওয়েস্ট ইন্ডিস বনাম সাউথ আফ্রিকার ম্যাচের মধ্য দিয়ে ২০০৩ বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়। এরই কিছুদিন আগে আমি ঠিক করে রাখি আমি হবো সাউথ আফ্রিকার সার্পোটার। ফুটবলে যেমন বন্ধুদের মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল নিয়ে বৈরি সম্পর্ক দেখে জার্মানির সমর্থক হয়েছিলাম এবার ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের মারামারি-কাটাকাটি অবস্থা দেখে পছন্দ করলাম সাউথ আফ্রিকা। তখন কে জানত সাউথ আফ্রিকার আরেক নাম ‘চোকার্স’! তবে তাতে কি প্রেমের বৌ কালা হলেও ভালো বলে তো একটা কথা আছে। আর আমার পছন্দের দলটিকে চোকার্স বলেও তো দেখি এদের খেলা গোগ্রাসে গিলে অনেকে।


বরাবরই আমি ছাত্র হিসেবে একটু স্লো প্রকৃতির। মানে ‘কুইক লার্নার’ বলে যে কথাটা আছে তা আমার জন্য প্রযোজ্য না। মনে পড়ে ২০১৩/২০১৪ সালে এসে ক্রিকেট খেলার সমীকরণ কিংবা ড্রেসিং রুমের হিসেব-নিকেশ খানিকটা বুঝতে শিখেছি এর আগে শুধু ব্যাট আর বলের সংঘর্ষ, আউটের কয়েকটা ধরণ তাছাড়া কিছুই বুঝতাম না। তবে অনেক ভেবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছি যে ক্রিকেট আসলে জীবনের খেলা। জীবনের উত্থান-পতনের মতো ক্রিকেটের মাঠেও উত্থান-পতন হয়। আইপিএল শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন মহলে ক্রিকেটের অন্ধকার ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছিল এবং এই তো কিছুদিন আগে ভারতের এক কুখ্যাত ক্রিকেট জুয়াড়ি ধরা পড়ে ক্রিকেট নিয়ে লোমহর্ষক তথ্য দিলো। বিশ্বকাপ ফাইনালের ম্যাচও অনেক সময় পাতানো হয়েছিল। সেদিক থেকে ভাবতে গেলে ক্রিকেট ক্রমশ জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ সত্যি অন্ধকার। তবু আজ আমার এই ক্ষুদ্র লেখায় আমার সবসময়ের প্রিয় ক্রিকেটার এবি ডিভি লিয়ার্সকে নিয়ে সামান্য বর্ণনা করবো।


আব্রাহাম বেঞ্জামিন ডিভি লিয়ার্স সংক্ষেপে এবি ডিভি লিয়ার্স মূলত ৩৬০ ডিগ্রি নামে ব্যাপক পরিচিত। এই ৩৬০ ডিগ্রি মানে তিনি ব্যাটিং করতে পারেন যেকোনো এ্যাঙ্গেলে এবং ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরেও তাঁর ৬/৪ মারার রেকর্ড আছে। অনেকে তাঁকে সংক্ষেপে এবিডি বলেও ডাকেন। যে নামেই ডাকুন না কেন দেশের জার্সিতে ১৭ নম্বর টি-শার্ট পরা এই খেলোয়ার কেবল দলের হয়েই না প্রায় দশ বছর আইপিএলে খেলে করেছেন অসংখ্য রেকর্ড। তাঁর বাবা ছিলেন পেশায় ডাক্তার কিন্তু তিনি সবসময় খেলাধুলাকে প্রাধান্য দিতেন। নিজে রাগবি খেলতেন এবং ছেলেকে নানা ধরণের খেলায় উদ্বুদ্ধ করতেন। এবি অনেক ধরণের খেলাই ছোটবেলায় খেলতেন। ব্যাটমিন্টনে একবার নাকি চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। যদিও অবসরে যাওয়ার বহু আগেই তিনি অবসর নিয়ে নিয়েছেন তবু ২০২০ বিশ্বকাপে দেশের হয়ে খেলার সম্ভাবনাও তিনি জানিয়েছিলেন। এবি এমন একজন খেলোয়ার যাঁর তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই রানের এভারেজ ৫০+, যা বিরল এক রেকর্ড। এছাড়া ১৬ বলে হাফ-সেঞ্চুরি, ৩১ বলে সেঞ্চুরি এবং ৬১ বলে ১৫০ রান করে সবগুলোতেই তিনি একক কৃর্তিত্ব বজায় রেখেছেন। সাউথ আফ্রিকার ২য় খেলোয়ার হিসেবে দ্রুততম সময়ে টেস্ট ম্যাচে ৭০০০+ রান তিনি করেছেন। ১২ বছরের ক্যারিয়ারে তিনবার বর্ষসেরা খেলোয়ারের খেতাবও তাঁর রয়েছে।

যখনই এমন সব নামকরা, বিখ্যাত রেকর্ড এবি-এর নামের পাশে দেখি, আনন্দে মনটা ভরে যায়। কেউ একজন প্রিয় খেলোয়ার হলে তাঁর কৃর্তিত্ব যেন সমর্থকের ঝুড়িতে গিয়ে পড়ে। মনে পরে আইপিএল-এ আরসিবি-তে এবি-র দুর্দান্ত খেলাগুলোর কথা। এবি নিজেই তাঁর প্রিয় খেলোয়ার হিসেবে বিরাট কোহোলির কথা বলেছেন। তাঁদের জুটি দেখে বোঝা যায় বিরাটও তাঁকে যথেষ্ট ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন। গেইল, বিরাট আর এবি-র ব্যাটিং তাণ্ডবে আরসিবি-এর কাছে অনেক দলই দাঁড়াতে পারত না কিন্তু এখানেও আরসিবি যেন ‘চোকার্স’! কোনো আইপিএল শিরোপা তো নেই বরং বরাবরই প্রথম থেকেই পয়েন্ট তালিকায় নিচের দিকে তাদের অবস্থান। নিউজিল্যান্ড বনাম সাউথ আফ্রিকার একটা ম্যাচের কথা মনে পড়ে। যেখানে অনেক কষ্টে সাউথ আফ্রিকা জিতেছিল এবং আমি পরম আনন্দে সেই স্মৃতি এখনও বুকে রেখে দিয়েছি।
এবি-কে ঠিক কীভাবে ভালো লাগা তা এখন মনে করতে পারি না। সাউথ আফ্রিকার একটা দুর্দান্ত দল ছিল গ্রাহাম স্মিথ, গিবস্, শন পলক, মাক বাউচারসহ অন্যান্য খেলোয়ারদের নিয়ে। এবির দলে আসা সেসময়েই, তাঁদের ছত্রছায়ায় ধীরে ধীরে তাঁর বেড়ে ওঠা। হাশিম আমলা, ডুপ্লেসিস, ডি ককসহ আরো কিছু খেলোয়ারও সেসময় ধীরে ধীরে দলে জায়গা করে নেন। মোটামুটি আগের সাউথ আফ্রিকা আর নাই বলেও একটা নতুন শক্তিশালী সাউথ আফ্রিকা গড়ে উঠেছিল এবি-এর সময়। বেশ অনেকগুলো ম্যাচে তিনি অধিনায়কত্বও করেন এবং অধিনায়ক হিসেবেও তিনি চমৎকার ছিলেন। কারো সঙ্গে মন-মালিন্য নেই।
এই যে এবি-কে নিয়ে এত গুণকীতর্ন করছি কিন্তু তবু বলতে হয় সাউথ আফ্রিকা আজও বিশ্বকাপ অর্জন করতে পারেনি। বৃষ্টি-বিঘ্নিত অনেকগুলো ম্যাচই তাঁদের সেমি-ফাইনাল বা ফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ধূলিসাৎ করেছিল। অনেকটা দুর্ভাগা দল বলা যেতে পারে সাউথ আফ্রিকাকে। তবু ভালোবাসি এই দলকে আর ভালোবাসি এবি-কে।
এবি-র ব্যক্তিজীবনটাও চমকপ্রদ। গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে প্রায় ৫ বছর ডেট করার পর ২০১৩ এর একদিন তাজমহলে ঘুরতে গিয়ে ভালোবাসার কথা বলে ফেলেন। ব্যাপারটা অনেকটা নাটকীয় ঢঙে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে একটা সুখ জীবন তিনি অতিবাহিত করছেন।



খেলার পাশাপাশি এবি একজন লেখক এবং সঙ্গীতশিল্পী। এটা জানার পর আমার ভালোবাসাটা যেন আরো কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রিয় ক্রিকেটার যদি লেখক হন তবে তো আনন্দিত হওয়ারই কথা। ‘এবি দ্য অটোবায়োগ্রাফি’ তাঁর লেখা আত্মজীবনী। এছাড়া তাঁর জনপ্রিয় একটি গান হলো- ‘I have a dream what the world needs to see’।




এবির জন্য শুভকামনা সবসময়।

এবির একটি মিউজিক ভিডিওটি দেখুন-





সুব্রত দত্ত
জুলাই ২২, ২০২০ খ্রিস্টাব্দ
উত্তরখান, উত্তরা, ঢাকা

[বি.দ্র: তথ্য, ছবি ও ভিডিও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত]
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫৮
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×