এ বিষয়ে আমি আমাদের প্লটের গল্পটা বলি । তাহলে পুরো গল্প ক্লিয়ার হবে । ১৯৮৯ সালে সব কিস্তি পরিশোধ করে এই জমি দখল বুঝে নেই হাউজিং থেকে আমার আব্বার নামে । এর পরে সেখানে আমাদের চটায় ঘেরা দখল ছিল । কিছু তরিতরকারি ফলাতাম । আমাদের জমিটা দেখা শোনার জন্য একটা ছেলে ওখানে থাকত, সে গরু পালত, তরকারির ক্ষেত করত । নিজেও খেত, আমাদেরকেও কিছু দিত । এভাবে চলছিলাম ।
হঠাৎ ১৯৯৬ সালে কতগুলো হাইব্রিড গুন্ডা বংগবন্ধুর ছবি ঝুলিয়ে একটা মিথ্যা বয়ান তৈরী করে পাশের বাস্তহারা কলোনীর অংশ হিসেবে দাবী করে আমাদের অল্প কয়েকটা দখলকৃত জমি এবং অন্যান্য জমি যেগুলোর কিস্তি পরিশোধের কাজ চলছিল, সেগুলো বোমা ফাটিয়ে রাম দা দিয়ে কোপানোর ভয় দেখিয়ে দখল করে । এতে বহুকাল যাবৎ বাস্তহারার বৈধ অধিবাসীরাও ভড়কে যায় । তারা বলাবলি করে, আমরাতো জীবনেও শুনিনি এই যায়গা বাস্তহারার ? তাহলে এরা কারা আমাদের নাম ভাংগিয়ে এই কাজ করছে ? বোমা আতংকে তারাও ভয় পেয়ে কোন কথা আর বলেনি । তখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নাসিম সাহেবের কাছে বিষয়টা তুলে ধরলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে খুলনার ডিসিকে ফোন করে বলেন, আমাদের নাম ভাংগিয়ে যারা এসব সন্ত্রাসী কাজ করেছে, তাদের ২৪ ঘন্টার মধ্যে উচ্ছেদ করে গ্রেফতার করুন ।
কিন্তু জানিনা কী এক রহস্যসময় কারণে গ্রেফতারতো হলোই না, বরং একটার পর একটা বয়ান খাড়া করে সময় ক্ষ্যাপন চলছিল । পরে জানা গেল স্থানীয় হাইব্রিড নেতারা ( যাদের আসলে কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, যখন যে দল ক্ষমতায় যায়, সেই দলের ঘাড়ে সওয়ার হয় ) তারা চাঁদা তুলে প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে এলাকাটা বাস্তহারাবাসীদের নামেই চালিয়ে দিয়ে বাস্তহারার লোকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের দলে ভিড়তে বাধ্য করে । মানে তারা যদি জানে বাঁচতে চায়, তাহলে তাদেরকে সাপোর্ট করতে হবে । এভাবে বাস্তহারা বাসীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে নানা রকম মানবিক কারণ দেখিয়ে উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা দিয়ে আসছে । এই হাইব্রীডগুলো একটা বয়ান তৈরী করেছিল এভাবে “ এই যায়গা নাকি জাতির জনক বংগবন্ধু বাস্তহারাকে দিয়েছিল, হাউজিং কর্তৃপক্ষ তাদেরকে উচ্ছেদ করে বিক্রি করেছে বিভিন্ন মালিকের কাছে । এই মিথ্যা বয়ানে সমর্থন করতে পাশের বাস্তহারা কলোনীর দুর্বল লোকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের পাশে থাকার জন্য চাপ দিতে থাকে । অথচ বাস্তব সত্য হলো এই যে, বাস্তহারা কলোনী এই প্লটগুলোর পাশেই অবস্থিত । যা বহু পুরাতন কলোনী, যারা বহু আগে থেকে এখানে বাস করছে।
এই উড়ে এসে জুড়ে বসা দখলদাররা মূলতঃ স্থানীয় প্রশাসনের কিছু দুর্নীতিবাজদের ম্যানেজ করে ভোটের রাজনীতির ক্ষপ্পরে ফেলে দিয়ে এবং বস্তিবাসীদের অসহায় গরীব মানুষ বলে মানবিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে বার বার উচ্ছেদে বাঁধা দিয়ে আসছে । আমি অনেক দৌড় ঝাপ করতে থাকি, কেননা তখন অল্প কয়েকজন প্লটবাসীর পুরো কিস্তি পরিশোধ হয়ে দখল হস্তান্তর হয়েছিল । অনেকেরই পুরো কিস্তি পরিশোধ না হওয়ায় তাদের কাজ চলমান ছিল । দখলদারকে তাড়াতে সহায়তা পাবার জন্য শোনা যায় কোন এক হাইব্রিড নেতা উচ্ছেদ করার আইনী প্রক্রিয়া চলছে জেনেও একদিন এক দখলদারকে বলছে এত সোজা না, “ মালিক সেজে যে যাবে, আগে দাও দিয়ে কোপাবে, তারপর আমাদের কাছে আসবে ।” তার পর ২০০১ এ যখন বি এনপি আসল, তখন আজকে যেমন বকুলকে নিয়ে তারা মিছিল করছে, বিএনপি সেজেছে । সেইম নাটক তৎকালিন হুইপ আশরাফকে দিয়ে ঘটিয়ে এই কাজ করেছে ।
আমরা ক্রমে বুঝতে পারি তলে তলে কারা মোনাফেকী করে হাইব্রীড নেতা সেজে ভোটের রাজনীতির নামে একুল, ওকুল দুকুল থেকে মাল কামিয়ে আমাদের ৪২ জন প্লটবাসীকে দুর্বল পেয়ে এই কাজ করে আসছে । ঠিক তাদের চরিত্র আবারও প্রকাশ পেয়েছে কি না ? বকুলের ভিডিও কি প্রমাণ করেছে ? ঠিক আশরাফ সাহেব যেমন করে আমাদের সাথে অভিনয় করেছে এই বলে যে, আপনারা মামলা করেন । আমি কি করতে পারি ? কত বড় গাদ্দার ! ভাবতে পারেন ? এর পর মামলা হলো । মামলার শুনানীর দিন পিছিয়ে দেয় বার বার । তারা যতকাল ক্ষমতায় ছিল, ততকাল মামলার রায় হয়নি। এই রায় হয় ফখরুদ্দিন মইনুদ্দিন সরকারের আমলে । রায়ের কপি হাউজিং অফিসে আছে । তারা সেই রায় নিয়ে দখলদারদের নামের তালিকা করে বার বার উচ্ছেদের বাজেট করিয়েছে । কিন্তু মামলার রায়ের প্রেক্ষিতে কাজ চলতে থাকে ।
দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে আমরা আশা করেছিলাম, এই সরকার আমাদের প্রতি সুবিচার করবে । কিন্তু সেই মানবিক ঢাল নাটক করে দখলদারকে দিয়ে আতংক তৈরী করে পুরণ সেই অমানবিক বয়ান তৈরী করে সিন ক্রিয়েট করা হলো ? অভিযানকারি আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অনেকের মাথা ফাটিয়ে প্রশাসনকে বেকায়দায় ফেলে উচ্ছেদ অভিযান পন্ড করে দেয়া হলো ?
এভাবে সন্ত্রাসীরা বার বার ভয় ভীতি সৃষ্টি করে বিগত সময়ে সব সরকারের আমলেই দুষ্টচক্র দখলদারদের এমন শক্তি যুগিয়েছে যে, তারা পাকা বসতবাড়ি বানিয়ে এখনও রাজার হালে আছে । এই হলো গল্প । যা বাস্তব সত্য । কিন্তু বর্তমান পরিবর্তিত রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ও যে এই রাষ্ট্র মাত্র ৪২ জন দুর্বল মালিকদের পক্ষে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে পারল না , এটাই বড় আফসোসের বিষয়। প্রশ্ন জাগছে বকুলরা ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই নাটক করে এই বেইনসাফী করার সাহস পেল কি করে ? কে দিল তাদের সাহস ? এই সরকার ?
হে আল্লাহ ! বিচারের ভার তোমার হাতেই ।
বি এনপির গাদ্দারী যেমন ২০০১ সালে দেখেছি তেমনি আবারো বকুল সাহেব এর ভিডিও দেখে মনে হচ্ছে তিনিও হুইপ আশরাফের মতই গাদ্দারী করলেন ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই ? যদি তাই না হয়, তাহলে নাটের গুরু আসলে কারা ? তারা যদি মনে করে থাকে, তারা ভয়ভীতি প্রদর্শণকারিদের পক্ষ নিয়ে পুরণ সিষ্টেমে ভোটের রাজনীতি করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাবে, তাহলে তারা চরম ভুল করবে। এই দেশে আবারো বিপ্লব হবে । আবারও মানুষ জীবন দেবে । আমরাতো মজুলম হয়েই রইলাম । আমি মনে করি, আমাদের মজলুম করেছে দুষ্ট রাজনীতি আর রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রে যারা ছিল এবং এখনো যারা আছে, তারা সবাই ।
বর্তমান তথ্য প্রবাহের যুগে বিএনপি যদি ফ্যাসিবাদী চরিত্র নিয়ে মজলুমদের আরো মজলুম করে মাল কামানোর রাজনীতি করতে চায়, তাহলে তারা বোকার স্বর্গে আছে। ডাকসু, জাকসুর নির্বাচনের ফলাফল তার উজ্জল দৃষ্টান্ত । এই বেকুবগুলো যদি সেটা বুঝত, তাহলে তারা আবারও একই নাটক করে কিছু দুর্বল মানুষদের বিরুদ্ধে গিয়ে দখলদারদের সাথে কুলাকুলি করে অবৈধ কাজে সহায়তা করত না ।
আল্লাহ আমাদের সহায় ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




