চাঁদ দেখে রোজা থাক, চাঁদ দেখে রোজা ভাংগ । এই নির্দেশ কি পৃথিবীর মানচিত্র ভিত্তিক
তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখেই তা ভঙ্গ কর (অর্থাৎ ঈদ কর)। হাদীস নং- বুখারী : ১৯০৯ ।
যে সকল সম্মানিত আলেমগণ এখনো এই হাদীস এর দোহাই দিয়ে গোঁ ধরে বসে আছেন, তারা কুরআন এর সূরা বাক্বর’হ এর ১৮৯ নম্বর আয়াতের আদেশ মানছেন না । রাসুল(সঃ) এর এই হাদীস এর মর্ম বুঝতেও চাচ্ছেন না। উনারা মুসলিম উম্মাহকে মানচিত্র ভেদে পৃথক করে ফেলছেন । আমি যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করছি, উনারা আসলে মানছেন না । ভুল ব্যাখ্যা করছেন হাদীসের ।
অকাট্য যুক্তিঃ- রাসুল(সঃ) এর যামানায় পৃথিবীতে মানব জাতির আবাস কতদূর বিস্তৃত ছিল ? তিনি কি সূরা বাক্ক’রহ্ এর ১৮৯ নম্বর আয়াত মোতাবেক নবচাঁদ পৃথিবীতে কোথায় উদয় হয়েছে সেটা অনুভব করতেন না ? করতেন কিন্তু । তার প্রমাণ তিনি ২৯ দিন অতিক্রম হলেই হিলাল( নবচাঁদ) দেখার জন্য যতদূর পশ্চিমে দূত পাঠানো সম্ভব, ততদূর পাঠিয়ে হিলাল(নবচাঁদ) উদয়ের খবর নিয়ে তবে সিদ্ধান্ত দিতেন । এর মানে কি ? সেই যামানায় যদি কা’বা থেকে সর্বশেষ পশ্চিমে দূত পাঠিয়ে চাঁদ দেখার সহজ ব্যবস্থা আজকের যুগের মত থাকত, তাহলে রাসুল(সঃ) এর সিদ্ধান্ত কি সেটাই হত না ? তখন কি মানতেন না ?
এবার আসুন বিজ্ঞান কি বলে ? আর এটা সত্য যে, কুরআন হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান । যে বিজ্ঞানের সামনে পৃথিবীর তাবৎ মানুষের জ্ঞানের বিজ্ঞান মাথা নত করে আছেন । বিজ্ঞানীরা আজও পৃথিবীর কেন্দ্র কোথায় অবস্থিত তা নিরূপণ করতে পারেনাই । কেবল অনুমান করে সবাই একমত হয়েছেন যে, “ আরব দেশেগুলোর যে কোন একটা অবস্থানে পৃথিবীর কেন্দ্র রয়েছে ।
আর কুরআন এবং হাদীস পরোক্ষভাবে ইংগিত করেছে পৃথিবীর কেন্দ্র হচ্ছে ক্বাবা সূরা বাক্বর’হ এর ১৮৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ হিলাল বা নবচাঁদ সম্পর্কে বলেছেন, এটার উদয় ঘটানো হয় হজ্জ্ব এর সময় নির্ধারণ এবং মানুষের জন্য দিন, মাস ও বছর গননার জন্য ।
তাহলে এটা ঠিক যে, মক্কা কেন্দ্রিক নবচাঁদ উদয়ের মাধ্যমেই চান্দ্রমাস গণনা শুরু হবে । এখান থেকেই তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নবচাঁদ দেখা গিয়েছে, তা মুহুর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীর মাবজমিনে পৌঁছে দিতে হবে । কেন্দ্র থেকে যে মুসলিম চাঁদ দেখে সারা পৃথিবীর মানুষকে নবচাঁদ উদিত হওয়ার খবর জানাবে, পৃথিবীর সকল মুসলিম রাষ্ট্রকে ঐদিন চান্দ্র মাসের ১ তারিখ গণনা করতে হবে । কেননা মুসলিম উম্মাহ কোন মানচিত্র দিয়ে পৃথক করার অবকাশ নেই । মুসলিম উম্মাহ এক শরীরের অংগের মত। অতএব বিজ্ঞানের এ যুগে মানচিত্র ভেদে খালি চোখে চাঁদ দেখে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত কোন যুক্তিতেই টেকে না । তাতে মুসলিম উম্মাহকে অস্বীকার করা হয় । যে মুসলিম নবচাঁদ দেখেছেন বলে আমাকে জানিয়ে দিলেন, আমি তার কথা না মেনে আমাদের মানচিত্রের সরকারের কথা মানলাম ? এটা কি ঠিক ?
এরকম অকাট্য যুক্তির সামনে হেরে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিভাজিত আলেম সমাজ কি বলছেন ?
সরকার ঘোষণা না দিলে এটা মানা যাবে না । কেননা তাতে আপনি অধিকাংশ মানুষের বিপক্ষে চলে গেলেন।
এটা খুবই আপত্তিকর দুঃখজনক একটা বেহুদা যুক্তি । কোন একটা দেশের সরকার কি গোটা জাহানের মুসলিম উম্মাহ্’র ঠিকাদারী নিয়েছে না কি ? ৫৪ দেশ কি তাহলে ভুল করছে ?
সরকার যদি ইসলাম না বোঝে, কুরআনের আয়াত না বোঝে, মুসলিম উম্মাহ্ কনসেপ্ট না বোঝে, তাহলে সেই সরকারের ঘোষণা মানতে গিয়ে মুসলিম উম্মাহ্ তার বৈধ আকিদা থেকে বিমুখ থাকতে কেন বাধ্য থাকবে? আমাকে দয়া করে যুক্তি দিয়ে বোঝাবেন ।
আপনারা এটাও মানেন, একবার রাসুল(সঃ) ২৯ রোজা শেষে চাঁদ দেখতে না পেয়ে ৩০ তম রোজা রাখতে বললেন সবাইকে । কিন্তু এক বেদুঈন এসে খবর দিয়েছিল যে গতকাল সে চাঁদ দেখেছে । তিনি সাথে সাথে সকলকে নিয়ে রোজা ভেংগে ঈদ উদযাপন করলেন । এতে প্রমাণ হয়, নবচাঁদ দেখার ঘোষণা হলে সেই ঘোষণা শুনে চাঁদের মাসের হিসাব গণনা শুরু করতে হবে । তাহলেই সারা পৃথিবীর মুসলিম উম্মাহ এক শক্তিশালী উম্মাহ এ পরিণত হবে । যে শক্তির সামনে পৃথিবীর কোন বাতিল শক্তি টিকতেই পারবে না । আফসোস ! আমাদের মুসলিম জাতি এমনই বোকা যে, তারা অনেকেই মুসলিম উম্মাহর এই ঐক্যবদ্ধ শক্তি নিয়ে মোটেই ভাবছেন না ।
আসুন, বিভ্রান্তির জাল ছিন্ন করে ফেলি আমরা সকল মুসলিম ঐক্যবদ্ধভাবে । কুরআন হচ্ছে সবচেয়ে বড় বিজ্ঞান । যে বিজ্ঞানের কাছে সকল রথি-মহারথিরা নতযানু হতে বাধ্য হয়েছে । তাহলে সেই মহা বিজ্ঞান আল্-কুরআন বলছে, পৃথিবীতে নবচাঁদ উদয়ের সাথে সাথে তোমাদের হজ্জ্ এর মাস গননা এবং দিন , মাস, বছর গননা শুরু করতে হবে । আর সেই বিজ্ঞানের কাছে মাথানত করা সকল বিজ্ঞানীরা নবচাঁদ উদয়ের খবর মুহুর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিচ্ছে । আর এই জানানোর ঘোষণা শুনে ও আই সি এর ৫৭টা সদস্য দেশের মধ্যে ৫৪টা দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়ে একই চান্দ্র ক্যালেন্ডার ফলো করছে । অথচ আমাদের পাক-ভারত-বাংলাদেশের সরকারগুলো চাঁদ দেখা কমিটি করে চান্দ্র ক্যালেন্ডার বদলে নিজেদের ইচ্ছামত সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন কিসের ভিত্তিতে ? তারা নিজেরা এত বোঝেন ? ও আইসির সিদ্ধান্ত তারা মানবেন না ? আপনাদের একটা খোড়া যুক্তি হচ্ছে-অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতবিরোধ রয়েছে, সেই কারণে সরকার সিদ্ধান্ত পারছে না। এটা কোন যুক্তির কথা হলো না ।
জাহিলিয়াতের যুগে জাহেল বা অশিক্ষিতরা চিরকালই সংখ্যায়, ক্ষমতায় অধিক পাওয়ারফুল ছিল । ক্ষমতার জোরে তারা হক্ব এর পথে বাঁধা সৃষ্টি করেছে । আজও করবে । বাতিল পক্ষের জনগন চিরকাল বেশী ছিল, এখনো আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে । কিন্তু তাই বলে কি হক্ব প্রতিষ্ঠিত হবে না ? হ্যা, হবে । যিনি হক্ব আর বাতিল এর পার্থক্য বুঝবেন, তিনিই সেটা করবেন ।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় যারা বসেন, তাদের যদি সেটা বোঝার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে হক্ব যারা বুঝেছেন, তারা কি সরকারের ঘোষণায় ভুল পথে হাটবে ? মোটেই না । কারণ এটা আকিদার বিষয় । সরকার কোন নাগরিকের হক্ব আকিদায় বাঁধা প্রধান করতে পারে না ।
রাসুল(সঃ) এর হাদীস এবং কুরআনের উল্লেখিত আয়াতের আদেশ এখানে উল্লেখিত যুক্তি সমর্থন করে । সুতরাং মুসলিম উম্মাহ পৃথিবীর যে প্রান্ত থেকে খবর দিবে ”নবচাঁদ” উদিত হয়েছে, এই খবর শোনার পর ঐ হাদীসকেই যারা অমান্য করছেন, তারা মুসলিম উম্মাহকে মানচিত্র দিয়ে পৃথক করে ফেলছেন । তারা জুলুম করছেন । উম্মাহ কনসেপ্ট এর ধারনাকে ধুলিস্যাৎ করতে চাইছেন ।
কোন মুসলিম দেশের সরকার যদি “মুসলিম উম্মাহ” এর বিভাজন চান, তাহলে সে ব্যর্থতার দায় সেই সরকারগুলোর । কোন হক্কপন্থী মানুষকে আপনারা আন্তর্জাতিক চান্দ্র ক্যালেন্ডার মানার বিরোধীতা করতে পারেন না । সে অধিকার আপনাদের নেই ।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




