somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ১০ বিদেশি কোম্পানি বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের শীর্ষ ক্রেতা

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও ব্র্যান্ড তৈরি পোশাক কেনে। তাদের মধ্যে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানই নেয় রপ্তানি হওয়া তৈরি পোশাকের প্রায় ২৯ শতাংশ। বাংলাদেশি তৈরি পোশাক কেনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে সুইডেনের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শীর্ষ ক্রেতার তালিকায় আছে যথাক্রমে স্পেনের ইন্ডিটেক্স ও আয়ারল্যান্ডের প্রাইমার্ক। বিদায়ী অর্থবছরে এই তিন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি মার্কিন ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ক্রেতাদের তথ্য পর্যালোচনা করে বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পোশাকের শীর্ষ ক্রেতার এই তালিকা তৈরি করেছে প্রথম আলো। তালিকা তৈরিতে গত অর্থবছরে রপ্তানি হওয়া প্রায় ২১ লাখ চালান বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এসব চালান থেকে ক্রেতার মূল কোম্পানির পাশাপাশি সহযোগী কোম্পানির আমদানির তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন শীর্ষ ১০ ক্রেতার ১ হাজার ২৬৪টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের তথ্য নেওয়া হয়েছে। তবে বায়িং হাউস বা এজেন্টের মাধ্যমে নেওয়া পোশাকের হিসাব তালিকায় রাখা হয়নি।

এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী অর্থবছরে কয়েক হাজার ক্রেতার কাছে ৩ হাজার ৬৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে শীর্ষ ১০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ৫০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ মোট রপ্তানির ২৯ শতাংশই নিয়েছে এই ১০ বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। তারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক নিয়ে মূলত বড় বাজারগুলোতে বিক্রি করছে। বাংলাদেশি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ১০ ক্রেতার তালিকায় এইচঅ্যান্ডএম, ইন্ডিটেক্স ও প্রাইমার্কের পরে আছে ডেনমার্কের বেস্টসেলার, যুক্তরাজ্যের মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, নেদারল্যান্ডসের সিঅ্যান্ডএ, জাপানের ইউনিক্লো, পোল্যান্ডের এলপিপি, যুক্তরাজ্যের নেক্সট ও পোল্যান্ডের পেপকো। বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা ওয়ালমার্ট গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ৪০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। প্রতিষ্ঠানটি বায়িং হাউসের মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ পোশাক কিনে থাকে, যা শনাক্ত করা যায়নি। ওয়ালমার্ট কর্তৃপক্ষ কেনাকাটার তথ্য প্রকাশ করতে চায়নি। না হলে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষ দশে জায়গা করে নিত।

“বাংলাদেশ আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নিজস্ব প্রোডাকশন অফিসসহ উপস্থিতি আছে এইচঅ্যান্ডএম গ্রুপের।

অলবিন নরডিন প্রেস অফিসার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট এইচঅ্যান্ডএম গ্লোবাল কমিউনিকেশন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ালমার্টের করপোরেট অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক (গ্লোবাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড সোর্সিং) ব্লেয়ার ক্রোমওয়েল ই-মেইলে জানান, তাঁরা পরিসংখ্যান সর্বজনীনভাবে প্রকাশ করবে না। তবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক দিন ধরেই ওয়ালমার্টের গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহকারী দেশ। বাংলাদেশে থেকে পোশাক কেনার কৌশল অপরিবর্তিত রয়েছে।

বাংলাদেশের কারখানাগুলো মূলত সস্তায় তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শীর্ষ দশে জায়গা করে নেওয়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোও বাংলাদেশ থেকে গড়পড়তা সস্তা পোশাক কিনছে। তারা প্রতি পিস পোশাক কিনেছে গড়ে তিন ডলারে। শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে ইউনিক্লো সবচেয়ে বেশি—প্রতি পিস পোশাক ৫ দশমিক ৪১ ডলারে কিনেছে।

ফ্রান্সের লুই ভিতোঁ, ডিওর ও শ্যানেল, ইতালির গুচি, যুক্তরাষ্ট্রের নাইকির মতো বিশ্বের অভিজাত ব্র্যান্ডগুলো গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি পোশাক কিনেছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে জার্মানির স্পোর্টসওয়্যার ব্র্যান্ড অ্যাডিডাস বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে। গত অর্থবছরে ২ কোটি ৫৬ লাখ ডলারের পোশাক কিনেছে অ্যাডিডাস। প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ছিল সাড়ে ২৩ ডলার বা ২ হাজার ৮৩৪ টাকা। আবার পরিমাণে কম হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রালফ লরেন, কানাডার লুলুলেমনের মতো বিখ্যাত ক্রেতারাও বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনছে। বাংলাদেশ থেকে বিলাসবহুল ব্র্যান্ডগুলো অল্প কিছু পোশাক কিনছে, যেগুলো প্রতি পিসের রপ্তানি মূল্য ৩০০ থেকে ৫০০ ডলার।

“বাংলাদেশ ছোটো–বড় এক হাজারের বেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি পোশাক উৎপাদন করে। এটিই আমাদের পোশাক খাতকে শক্তিশালী করছে।

ফারুক হাসান সাবেক সভাপতি বিজিএমইএ

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ১০ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টির শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে প্রথম আলো। তাঁরা প্রত্যেকে নিশ্চিত করেছেন, সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার হিসাবটি প্রায় কাছাকাছি। যদিও তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি। কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানের সদর দপ্তরের বিধিনিষেধের কথা বলেছেন তাঁরা।

শীর্ষ ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম। গত অর্থবছরে বিশ্বের ৪৪টি দেশের সহস্রাধিক আউটলেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাক তুলেছে এই কোম্পানি। যদিও অনলাইনে তাদের পোশাক কিনতে পারে ৬০টি দেশের মানুষ। বাংলাদেশে তৈরি এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে পোল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে।

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে এইচঅ্যান্ডএম। বাংলাদেশের দুই শতাধিক কারখানা থেকে এই পোশাক কিনেছে তারা। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতিদিনের চালানে থাকছে এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক। গড়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার ৪২টি চালান জাহাজ বা উড়োজাহাজে তোলা হচ্ছে। তাতে নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পোশাক রয়েছে।

১৯৪৭ সালে একটি স্টোর দিয়ে যাত্রা শুরু করা এইচঅ্যান্ডএমের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৪ হাজার ২৯৮টি। গত বছর কোম্পানিটি ২১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। নাসডাক নর্ডিক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির প্রধান ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, কজ, উইকডে, মানকি, চিফ মানডে, এফাউন্ড, অ্যান্ড আদার স্টোরিজ।

এইচঅ্যান্ডএমের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের ৪১ দেশের ৯১৬ সরবরাহকারী থেকে পোশাক, হোম টেক্সটাইল, জুতা ও প্রসাধন পণ্য নেয় তারা। বাংলাদেশে থেকে তিন দশক ধরে তৈরি পোশাক নিচ্ছে তারা। এমনকি অনেক দিন ধরে কোম্পানিটি বাংলাদেশি পোশাকের শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা। গত ২০২১-২২ অর্থবছর সবচেয়ে বেশি ২৯০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। এরপর কিছুটা কমলেও সেরার তালিকায় রয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে এইচঅ্যান্ডএম গ্লোবাল কমিউনিকেশনের প্রেস অফিসার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট অলবিন নরডিন ই–মেইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নিজস্ব প্রোডাকশন অফিসসহ উপস্থিতি আছে এইচএন্ডএম গ্রুপের। আমাদের শীর্ষস্থানীয় পণ্য উৎপাদনকারী দেশে নিজস্ব টিম থাকা সব সময়ই সুবিধার বিষয়।’ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার।’

২০০ কোটি ডলার ছাড়াল ইন্ডিটেক্সের কেনা

বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা ইন্ডিটেক্স। স্পেনের বহুজাতিক এই কোম্পানি প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বাড়াচ্ছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২১৮ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে ইন্ডিটেক্স। এর আগে তারা বাংলাদেশ থেকে এক অর্থবছরে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কেনেনি।

বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৩টি দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে পোশাক পাঠায় ইন্ডিটেক্স। তবে সবচেয়ে বেশি গেছে স্পেনে—১৮৭ কোটি ডলারের পোশাক। কোম্পানির প্রধান ব্র্যান্ড জারা, পুল অ্যান্ড বিয়ার, বারস্কা, স্ট্র্যাডিভারিয়াস, ওইশো, ম্যাসিমো দত্তি। বাংলাদেশ থেকে কেনা এই কোম্পানির পোশাকের তালিকায় অন্তর্বাস থেকে শুরু করে ওভারকোট—সবই আছে। আর পোশাক সরবরাহ করেছে বাংলাদেশের ২৫০টি কারখানা।

কম দামের পোশাক নেয় প্রাইমার্ক

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শতকোটি ডলারের ক্রেতার তালিকায় রয়েছে আয়ারল্যান্ডের বহুজাতিক খুচরা বিক্রেতা কোম্পানি প্রাইমার্ক। গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে কোম্পানিটি।

বিশ্বের ১৭টি দেশে প্রাইমার্কের ৪৫১টি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া অর্থবছরে কোম্পানির রাজস্ব আয় দাঁড়ায় ৯৪৪ কোটি ইউরো। প্রাইমার্কের মূল বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাজ্যের বাজারের জন্য বেশি নিচ্ছে তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাইমার্ক বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তাঁদের কোম্পানি।

সাড়ে ৪ ডলারের পোশাক কেনে বেস্টসেলার

ডেনমার্কের বহুজাতিক কোম্পানি বেস্টসেলার বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চতুর্থ শীর্ষ ক্রেতা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭৯ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে তারা। প্রতি পিস পোশাকের গড় দাম ৪ দশমিক ৬৬ ডলার, যা শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ৯৫টি কারখানায় তৈরি হওয়ায় পোশাক বেস্টসেলারের ১১ দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে যায়।

এমঅ্যান্ডএস ব্যবসা বাড়াচ্ছে

ব্রিটিশ বহুজাতিক কোম্পানি মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস) বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের পঞ্চম শীর্ষ ক্রেতা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭৮ কোটি ডলারে ২১ কোটি পিস পোশাক কিনেছে কোম্পানিটি। তাতে প্রতি পিস পোশাকের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৪ ডলার।

কোম্পানিটির প্রধান ব্র্যান্ড এমঅ্যান্ডএস ও অটোগ্রাফ। বাংলাদেশ থেকে কেনা পোশাকের ৯১ শতাংশই তাদের যুক্তরাজ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশের ৫১টি কারখানা থেকে পোশাক কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য ব্রিটিশ ব্র্যান্ডের মতো এমঅ্যান্ডএসও বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনা বাড়াচ্ছে বলে জানান ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।

সিঅ্যান্ডএর অর্ধেকই ‘মেড ইন বাংলাদেশ’

বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনায় অংশীদারি বাড়িয়েছে সিঅ্যান্ডএ। ২০২০ সালে তাদের মোট তৈরি পোশাকের ৩৬ শতাংশের উৎস ছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানির টেকসই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর চীন থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ তৈরি পোশাক কেনে সিঅ্যান্ডএ।

১৮৪১ সালে নেদারল্যান্ডসের দুই ভাইয়ের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় সিঅ্যান্ডএর। এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ষষ্ঠ শীর্ষ ক্রেতা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭২ কোটি ডলারে ২০ কোটি পিস পোশাক কিনেছে তারা। তাদের কেনা প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ৩ দশমিক ৬২ ডলার। বাংলাদেশের অন্তত ৫০ কারখানা থেকে পোশাক কেনে সিঅ্যান্ডএ।

দামি পোশাক নেয় ইউনিক্লো

জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিক্লো গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৭১ কোটি ডলারের ১৩ কোটি ২১ লাখ পিস পোশাক কিনেছে। তাদের কেনা প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ছিল ৫ দশমিক ৪১ ডলার, যা শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে সর্বোচ্চ।

ইউনিক্লোর মূল গ্রুপ ফাস্ট রিটেইলিং। তাদের ইউনিক্লো ছাড়াও জিইউ, থিওরি, জে ব্র্যান্ডসহ মোট সাতটি ব্র্যান্ডের ৩ হাজার ৫৯৫টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের ২৪ দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করে ইউনিক্লো। গত অর্থবছর ২৬টি পোশাক কারখানা তাদের পোশাক সরবরাহ করে। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ করেছে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ।

এলপিপিকে পোশাক দেয় আড়াই শ কারখানা

পোল্যান্ডের বহুজাতিক কোম্পানি এলপিপি বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পোশাক নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ২৫০টি কারখানা এই পোশাক সরবরাহ করেছে। ২০১৫ সালে ঢাকায় শাখা অফিস চালু করে বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠান।

এলপিপির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪০টি দেশে বিক্রি হচ্ছে এলপিপির পাঁচ ব্র্যান্ডের পোশাক। ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে রিজার্ভড, ক্রপ, মোহিতো, হাউস, সিনসে।

অর্ধবিলিয়ন ডলারের পোশাক নেয় নেক্সট

১৬০ বছরের পুরোনো যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক কোম্পানি নেক্সট প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অর্ধবিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক নিচ্ছে। গত অর্থবছরে ৫৩ কোটি ডলারে ১৬ কোটি পিস তৈরি পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ নেক্সট গড়ে ৩ দশমিক ২৪ ডলারে প্রতি পিস পোশাক কিনেছে।

কম দামি পোশাক কেনে পেপকো

পোল্যান্ডের বহুজাতিক এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পেপকো বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কম দামে পোশাক কিনছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৬ কোটি ডলারে ২৬ কোটি পিস পোশাক নিয়েছে। তাতে প্রতি পিস পোশাকের গড় দাম দাঁড়িয়েছে পৌনে দুই ডলার, যা শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে সর্বনিম্ন।

ইউরোপের ২১ দেশে সাড়ে চার হাজারের বেশি বিক্রয়কেন্দ্র আছে পেপকোর। তাদের পোশাক সংগ্রহের বড় তিনটি উৎস দেশ—বাংলাদেশ, চীন ও ভারত। চারটি ব্র্যান্ড—পেপকো, পাউন্ডল্যান্ড, পিজিএস, ডিলজ নামে পোশাক বাজারজাত করছে পেপকো।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ছোটো বড় এক হাজারের বেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি পোশাক উৎপাদন করে। এটিই আমাদের পোশাক খাতকে শক্তিশালী করছে। যেহেতু হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনে ফলে এটিকে ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি এই ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্যও বিক্রি করার বড় সুযোগ রয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×