somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাহসী সন্তান
{♥ যদি কখনো নিজেকে একা ভাবো, তাহলে ঐ দূর আকাশের অসীম সীমান্তের দিকে তাকিয়ে থাকো! কখনো নিরাশ হয়ে যেও না! হয়তো বা একটা বাজপাখিও তোমার দিকে উড়ে আসতে পারে! ♥}

ছোট গল্পঃ- "অপার্থিব মায়া!"

২০ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বসর সময় কাটানোর মত কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে এক দিকভ্রান্ত পথিক দম্পতিকে ডেকে পাশে বসিয়ে বললাম, 'ভাই আপনারা মনেহয় অনেক ক্লান্ত। আসেন এই গাছের ছায়ায় বসে একটু জিরিয়ে নেন। আর ততক্ষণে আমরা দু'জনে মিলে একটা খেলা খেলি।'

পথিক কিছুটা উৎসুক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, 'কি খেলা ভাই?'

সম্ভবত মনে মনে সে ভীষণ উত্তেজিত। আমি তার উত্তেজনাকে আরো কিছুটা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বললাম, 'দারুণ খেলা! তবে শর্ত হল, খেলায় হেরে গেলে কিন্তু তার প্রতিদান দিতে হবে? আর শর্ত শোনার পরে কিন্তু খেলা থেকে বিরত থাকা যাবে না?'

পথিক উত্তেজিত ভঙ্গীতে মুখের উপরে একবার হাত চালিয়ে নিয়ে তারপর গম্ভীর কণ্ঠে বলল, 'হুম, আমি রাজি। আপনি খেলা আর শর্ত বলেন!'

পথিকের বউ চোখ বড় বড় করে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটাতে সেও যে মনে মনে বেশ আনন্দ পাচ্ছে, সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি পথিকের দিকে তাকিয়ে বললাম-

'খেলাটা হল ডুয়েল। আপনি এবং আমি দু'জনে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে একজন আর একজনের দিকে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়বো। এটাতে যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাবে, সে কোন ধরনের বাঁধা ছাড়াই অন্যজনের বউ'কে নিয়ে চলে যেতে পারবে। রেফারি থাকবে আপনার স্ত্রী!'

ক্লান্ত পথিক কিছুক্ষণ নির্বাক আমার মুখের পানে চেয়ে রইল। আমাকে তার পাগল মনে হচ্ছে কিনা কে জানে? তারপর বিরক্ত মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, 'তো সেজন্য ডুয়েল খেলার কি দরকার? চাইলে তো আমি এমনিতেই আমার বউরে আপনাকে দিয়ে দিতে পারি। আমি মরতে চাই না, এই থাকলো আমার বউ!'

পথিক আর আমার কাছে বিন্দু পরিমাণ সময় নষ্ট করলো না। উঠে হনহন করে একদিকে চলে গেল। আমি নির্বাক তাকিয়ে থেকে একবার পথিকের বউয়ের মুখের দিকে, আর একবার পথিকের গমন পথের দিকে তাকাতে লাগলাম। পথিক আনন্দচিত্ত্ব মুখে শিষ দিতে দিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তার ক্লান্তি দূর হয়েছে কিনা ঠিক বোঝা গেল না।

আমি পথিকের দিকে তাকিয়ে একটা বিদ্রুপাত্মক শব্দ ব্যবহার করে বললাম, 'নিশ্চিৎ পাগল মনেহয়!'

তারপর আনমনা ভাবে তার বউয়ের হাত ধরতে গিয়ে বেশ অবাক হলাম! এখানে তো আসলে কোন বউ নেই। বরং তার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার একটা নেড়ি কুত্তা। মানে কি এসবের!

আমি তীব্রবেগে আবারও দূর দিয়ে হেঁটে যাওয়া পথিকের গমন পথের দিকে তাকালাম। এখনো তার শিষের শব্দ স্পষ্ট আমার কানে আসছে। পথিকের কোন দিকে খেয়াল নেই। সে তার বউয়ের হাত ধরে আনন্দিত মনে এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। বউ তো নয়, যেন স্বর্গের অপ্সরী! তার সাথে থাকা সুন্দরী মেয়েটার চেহারা দেখিয়ে আজ সারাদিনে আরো কত যুবককে যে সে পাগল বানাবে তা কে জানে!

- 'আচ্ছা এই পাগল পথিককে কেউ থামাচ্ছে না কেন?'

এমন সময় কানের কাছে মৃদু আওয়াজে কে যেন বলে উঠলো, 'ওরে বোকা, ওটা সুন্দর নয়; মায়া। তোর সত্ত্বাকে ধ্বংস করার জন্যই আবির্ভূত হয়েছিল!'

পুনশ্চঃ- সে আজ বছর দু'য়েক আগের ঘটনা। আমি আজও সেই গাছের ছায়ায় বসে অপেক্ষার প্রহর গুনি পথিক দম্পতি দু'জনের জন্য। কিন্তু তারা আর আসেনি। তার পরিবর্তে অন্যকিছু দিকভ্রান্ত পথিক এই ছায়ায় বসে শরীর শীতল করতে করতে নিজেদের মধ্যে গল্প করে। আমি শুনি তাদের গল্প। তবে মুখে কিছু বলি না। তারা ভাবে, আমি বলি না বলে হয়তো কিছু বুঝিও না। কিন্তু তারা তো জানে না, এই গাছের ছায়ায় বসে তারা নিজেদের মধ্যে যে গল্পের সূত্রপাত করে; সেই গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র আর কেউ নয়। স্বয়ং আমি নিজে...

তারা আমার গল্প আমার কাছে বসে বেশ রসিয়ে রসিয়ে বর্ননা করে। শুনতে শুনতে সেটা আমার নিজেরও মুখস্ত হয়ে গেছে! আমি অনেক চেষ্টা করেছি সেদিনের সেই ঘটনাকে ভুলে যেতে। কিন্তু পারি না। যখনই ভুলে যাওয়ার মত কোন পরিবেশ সৃষ্টি হয়, ঠিক তখনই আবারও কোন দিকভ্রান্ত পথিক এসে হয়তো নতুন করে তা মনে করিয়ে দিয়ে যায়। বেশ ভালই লাগে। তবে অনেকদিন থেকে এইসব পথিকের কাছে একটা প্রশ্ন আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে। আচ্ছা পথিক কি কখনো পথের শত্রু হতে পারে...??


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ- এই গল্পের বিষয়বস্তু সহ যাবতিয় চরিত্র কাল্পনিক। যদি কারো ব্যক্তিগত জীবনের সাথে মিলে যায়, তাহলে সেটা নিতান্তই কাকতালীয় ব্যাপার। সেজন্য লেখক কোন অংশেই দ্বায়ী থাকবে না। তাছাড়া টাইপিংয়ের ভুলের কারনে হয়তো অনেক জায়গায় বানানে ভুল থাকতে পারে। সেটাকে বিবেচ্য বিষয় হিসাবে না ধরে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখলে কৃতার্থ হবো!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮
২৭টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×