গত তিনদিন যাবত দেশের নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র পেটানোর হিড়িক দেখেছি। যারা মার খেয়েছে তারাও ছাত্র আর যারা মেরেছে তারাও নাকি ছাত্র !! কিন্তু প্রহারের নমুনা কোনভাবেই ছাত্র মার্কা মনে হয়নি আমার। মনে হলো, কুকুরে কুকুরে মারামারি হচ্ছে। আবার ভাবলাম, কোন কুকুরও হয়ত অন্য কুকুরকে এভাবে নির্মম আঘাত করেনা। তাহলে এমন বর্বর আচরন শুধু মানুষই করতে পারে, পশু না। ক্ষমতার রোগ কিভাবে ছোঁয়াচে হয়ে আক্রান্ত করতে পারে ছাত্র সংগঠণগুলোকে তার উদাহরন ছাত্রলীগ এবং ছাত্রদল। আক্রান্তরা একে অন্যকে দেখলেই কামড়ানোর মত করে আক্রমন করতে শুরু করে। কিন্তু এই রাজনীতি তো ১৯৫২ তে কিংবা ১৯৬৯ অথবা ১৯৯০ এ ছিলো না। ১৯৯০ এর পর থেকেই কতিপয় অসুস্থ্য চিন্তার ব্যাক্তি তাদের নিজ স্বার্থ ও ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য দলগুলোকে ড্রয়িংরুম কেন্দ্রিক করে ফেলে। মেধাহীন, অযোগ্য, পেশীকেন্দ্রিক ছাত্র-অছাত্রদেরকে ছাত্রসংগঠণের কর্তার আসনে বসিয়ে লাঠিয়াল বাহিনী গড়ে তোলা হয়। চাঁদাবাজি, দখলবাজির লোভ তাদের সন্ত্রাসের ঘাড়ে চড়ে ছড়িয়ে গেলো ভয়ানক সংক্রামক ব্যাধির মত। রোগের বয়স বাড়তে বাড়তে এ সরকারের সময়কালে দেখা গেছে সবচেয়ে ভয়াবহ চিত্রগুলো। খোলা রামদা, ছোরা, হকিস্টিক, রড, হ্যান্ডগানসহ নানান অস্ত্রের মহড়ায় ছাত্র-অছাত্র মিলে আহত-নিহতের সংখ্যা কম নয়। বুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা, জাহাঙ্গীরনগরে ভিসির লাঠিয়াল হিসেবে পরিচিতিলাভ এসব কিছুই ছাত্রলীগের অর্জন। আগামীতে যদি ক্ষমতার হাতবদল হয় হয়তো ছাত্রদল এর চেয়েও ভয়ানক রূপ ধারন করবেনা এমন কথা বলা যায় না। এই সংক্রামক রোগ বিস্তারে আমার চোখে দুটি কারন খুব বড় হয়ে ধরা পড়েছে, ১. উর্দ্ধতন নেতাদের আস্কারা, আর ২. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত তাবেদার ও অযোগ্য প্রশাসন/ভিসি। এ রোগের বিস্তার রোধে আমাদের অবশ্যই করণীয় আছে। অযোগ্য এবং কাপুরুষ নেতা নির্বাচন করবোনা আমরা, যেন তারা এই লাঠিয়ালবাহিনীকে আস্কার দিতে না পারে, আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নির্বাচনের মাধ্যমে ভিসি নিয়োগ করা, সরকারের গোলামী করা কোন লোক যেন এসব পদে না যেতে পারে সে বিষয়ে জোর দাবি তুলতে হবে, আন্দোলন করতে হবে।
--এস.এম.সৈকত
[১২ সেপ্টেম্বর, ২০১২]
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:০৭