somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ শূন্যস্থান পূরণ !! !! !!

০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রানার মনে বিরহের আগুন জ্বালিয়ে একদিন তার প্রেমিকা শোভা লাল শাড়ি আর সোনালী গহনায় শোভিত হয়ে চিরচেনা শহর ছেড়ে অচেনা শহরে উড়াল দিলো হঠাৎই। শোভা স্বেচ্ছায় না, তার জাঁদরেল টাকলা বাবাই যে তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিয়েছে-- এই অটুট বিশ্বাস রানার বিরহের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিতে লাগলো ক্রমাগত। রাতের ঘুম, দিনের ক্লাস বাদ দিয়ে সে অহর্নিশি শুধু বিরহের গান শুনে। টানা একসপ্তাহ তাকে ক্লাসে না পেয়ে আজ নীলা তার বাড়িতে এসে হাজির হলো। নীলা হলো তার টুকটুকি বন্ধু। টুকটুক করে তারা দু’জন সবসময় ঝগড়া করে। মধুর ঝগড়া।
বাড়িতে ঢুকে নীলা দেখলো রানা যথারীতি নির্জন ঘরের মধ্যে বসে মধ্যম সুরে বিরহের গান শুনছে, তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম---
নীলাকে দেখে রানা একটুও বিস্মিত হলো না। সে নির্বিকার। নীলা নিজেই একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসতে বসতে বললো, ‘কিরে তুই এখন রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনিস না-কি?’
রানা ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হুম।’
-- ‘রবি ঠাকুরের এতো গান থাকতে তোকে এই গানটাই শুনতে হবে।’
-- ‘ক্যান? এই গানে সমস্যা কি?’
-- ‘এই গানে কোন সমস্যা নেই, সমস্যা হলো তোর মনে। তোর মনের জন্য এই গান এখন ক্ষতিকর।’
-- ‘এতো ভাষণ দিতে হবে না। তুই আসছিস ক্যান সেটা বল?’
-- ‘কারণ ছাড়া আসা যাবে না না-কি?’
-- ‘প্যাঁচাল রাখ। মন মেজাজ খারাপ। ক্যান আসছিস বল?’
-- ‘তুই ক্লাসে যাচ্ছিস না ক্যান?’
-- ‘এমনিতেই।’
-- ‘আচ্ছা ক্লাসের কথা ছাড়। মিতু তো তোকে পছন্দ করে। তুই কি সত্যি আর প্রেম-ট্রেম করবি না?
নীলার কথা শুনে রানা এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার দীর্ঘশ্বাসে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে গেলো।’
-- ‘নারে দোস্ত প্রেম আর না। প্রেম একবারই এসেছিলো নীরবে।’
-- ‘কি বলিস এসব! প্রেম তো তোর সরবেই এসেছিলো আর চলছিলোও বেশ সরবে। ভাঙা ইটের রাস্তায় গরুর গাড়ী যেমন শব্দ করে চলে ঠিক সে রকম। বল যে, প্রেম একেবারই চলে গেলো নীরবে।’
রানা নীলার এই রসিকতায় কান দিলো না। প্রেমিকরা আবার এই টাইপের রসিকতা শুনতে পায় না। সে এবার তার উড়ালপঙ্খীর গুণগান শুরু করলো, ‘শোভা অনেক ভালো ছিলো রে। ওর মতো মেয়ে এই পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা খুঁজে পাওয়া যাবে না। আমার জন্য সে ঠিকই কাঁদছে।’
-- ‘হুম ঠিকই বলছিস। শুনলাম, ওর না-কি একটা বাচ্চা হইছে। বাচ্চাটাও না-কি খুব কান্নাকাটি করে। হয়তো তোরই বিরহে কাঁদে।’
-- ‘তুই কি আমার সাথে ফাজলামি করছিস।’
-- ‘হুম ফাজলামি করছি।’
-- ‘ক্যান করছিস?’
-- ‘আচ্ছা তুই আমাকে বল, পৃথিবীতে কি এই একটাই ভালো মেয়ে আছে? তুই যাকে ভালোবাসিস সেই ট্রয়ের হেলেনা আর বাকী সব ফ্যালনা এই ভ্রম থেকে বের হয়ে আয় বুঝলি। যে চলে গেছে তাকে অকারণ কৈ মাছ বানিয়ে মনের মধ্যে লালন করলে ক্ষতি বৈকি লাভ নেই। সে তো শুধু মনের মধ্যে লাফাবে। তার কাঁটার গুঁতাই শুধু তোর মনে জুটবে। সে নীরবে আছে তাকে নীরবেই থাকতে দে। এভাবে বিরহ-সাধনায় তাকে সরব করে তোলার দরকার নেই। তোর তো দুই বছরের প্রেম। অথচ এই যে আমার পাঁচ বছরের প্রেমিক কিভাবে পলটি মারলো। কই আমি তো তোর মতো এমন বিরহের গান কানে লাগিয়ে ঘরের মধ্যে বসে থাকিনি। যার কাছে বিশ্বাসের মূল্য নেই তার জন্য নিজেকে কষ্ট দেয়ার মতো বোকা আমি নই।’
-- ‘তুই কি বলছিস শোভা আমাকে ইচ্ছে করেই ছেড়ে গেছে?’
--‘হ্যাঁ গেছে এবং এতে তার অন্যায় দেখি না। তুই কেবল মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে। ও কতোদিন বিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে পারতো। শোন, শূন্যস্থান কখনো অপূর্ণ থাকে না, শূন্যস্থান একসময় পূর্ণ হয়ে যায়। আশপাশে চোখ মেলে তাকা। অনেক ভালো মেয়ে আছে।’
-- ‘আশপাশে অনেক ভালো ছেলেও তো আছে। তুই চোখ মেলে তাকাস না ক্যান? সব ছেলেই খারাপ না বুঝলি।’
-- ‘আচ্ছা বাদ দে বাইরে চল আমাকে কিছু খাওয়াবি।’
-- ‘বাড়িতে হাজার রকমের খাদ্য আছে। এখানে খা।’
-- ‘এখানে না। বাইরে খাবো, তারপর ঘুরবো চল। আজ থেকে তোর বিরহ-দশার ছুটি।’
-- ‘তার মানে কি? তুই কি শূন্যস্থান পূরণ করতে চাইছিস?’
-- ‘ইস! গাধার সখ দেখো।’
-- ‘তুই-ই তো আশপাশে তাকাতে বললি।’
-- ‘আশপাশে তাকাতে বলছি। আমার দিকে না। মিতুর দিকে তাকা। মিতু অনেক ভালো মেয়ে।’
-- ‘মিতু-টিতু আমি কিছু বুঝি না। আমি এখন থেকে তোর দিকেই তাকাবো। তুইয়ো আমার দিকে তাকা।’
-- ‘এটা সম্ভব না।’
-- ‘প্রেমে পড়লে সবই সম্ভব। কারণ কি জানিস? কারণ হলো, প্রেম পড়লে মানুষের কল্পনাশক্তি বৃদ্ধি পায়। মানুষ তখন কল্পনায় সব কিছু সম্ভব করে ফেলে। তুই এখন টুপ করে আমার প্রেমে পড়ে যা। দেখবি, অসম্ভবের ‘অ’ দূর হয়ে যাবে।’
নীলা মুচকি হেসে বললো, ‘তোর ওই শোভা-বিরহ কাটুক। তারপর বিবেচনা করা যাবে।’
আজকের আবহাওয়াটা একটু অন্যরকম। ধানমণ্ডি লেকের ভেতর রানার সাথে নীলা নামের যে মেয়েটা হেঁটে চলেছে এ সে আগের নীলা নয়। এ এক অন্যরকম নীলা। এই অন্যরকম নীলার সংস্পর্শে রানার শোভা-বিরহ-ব্যথা দূর হয়ে গেছে নিমেষেই। শূন্যস্থান যে এতো অদ্ভুত সুন্দরভাবে পূর্ণ হতে পারে রানার সেটা জানা ছিলো না। নীলা যেন তার মনের ভেতর সূর্য হয়ে এলো এবং তার এই হঠাৎ আগমনে মনের সকল মেঘ কেটে চারিপাশ কেমন প্রফুল্ল হয়ে উঠলো---ঝলমল--- প্রাণবন্ত !!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৬ রাত ৮:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×