চোখ বন্ধ করে মাঝে মাঝে কিছু দৃশ্য কল্পনা করি। কল্পনা করে ভীষণ আনন্দ পাই...ভীষণ...
আমার বয়স যখন ৯০ বছর হবে তখন কোন এক পার্কে গোলমোল হয়ে বসে থাকব। তখন কোন একজন বৃদ্ধ লাঠিতে ভর করে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে তিন মিনিট সময় নিয়ে বলবে, তুই জয়নাল আবেদীন না? হারামী, তোরে কত বছর ধরে খুঁজে বেড়াই!
আমি চিৎকার করে বলব, আরে এটা তো দেখি বকুল!
আমরা দুই বৃদ্ধ অতি আবেগে কোলাকুলি করব।
কোলাকুলি করতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবো।আমদের মুখ দিয়ে কুৎ করে শব্দ বের হবে। মনে হবে শরীরের সব হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে গেছে।
বন্ধু হাসিমুখে বলবে, আয় চা খাই?
আমি বলব, না রে, শরীরে ডায়বেটিস ভর করেছে। রক্তে চিনির গোদাম তৈরি করেছি। চিনি এখন হারাম।
- বাহ! তুই দেখি এখন বেশ নিয়ম নীতির মধ্যে আছিস। একসময় তো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করতি না।
আমি ফাঁকা মাড়ি বের করে বলব, মরণ ভয় ঢুকছে রে। যত বুড়া হইতেছি ততই মরণ ভয় ঢুকতেছে। দেখ আজীবন কুঁড়ে ছিলাম। ঘর থেকে বের হতাম না। এখন ভোর রাতে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। বাঁচার বড়ই ইচ্ছা।
বন্ধু হাহা করে হেসে বলবে, এটা দোষের কিছু না। মরণ ভয় কঠিন জিনিষ। যুবক বয়সে রক্ত গরম থাকে। মরার ভয় থাকে না। যে রবীন্দ্রনাথ প্রথম বয়সে বলেছিলেন "মরণরে, তুহে মেরা শ্যাম সম" সেই রবি বাবুও শেষ বয়সে "মরিতে চাহি না" বলে কান্নাকাটি করছেন।আর আমরা তো রবীন্দ্রনাথ না, পৃথিবীর কাছে অনাথ। জীবনের মায়া আমাদের আরো বেশি।
বন্ধু হাসবে।
হাসির সময় হিসাব করে দেখা যাবে তার দাঁত আমার চেয়ে দুইটা কম।
কোন খাবারটা আমাদের এই বয়সের জন্য সেফ সেটা ভাবতে ভাবতে আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যাবে। প্রতিটা খাবারেই কোন না কোন সমস্যা আছে।
অনেক বিবেচনা করে কোন একটা খাবার খাওয়ার সময় আমার একটা দাঁত ফট করে পড়ে যাবে।
বন্ধু হাসতে হাসতে বলবে, কত নাম্বার উইকেট গেল?
আমি বলব, ২২ নাম্বার।
- অলআউট হইতে বেশি বাকি নাই!
- তাও তোর চেয়ে একটা বেশি।
দুই বুড়োর কান্ড কারখানা দেখে রেস্টুরেন্টে আইফোন ৪২ নিয়ে ডেট করতে আসা ছেলেমেয়েরা বিরক্তিবোধ করবে। তারা ঘনঘন চোখ মুখ কুঁচকাবে।
....কিংবা স্কুল জীবনের শেষ দিন যে মেয়ে বন্ধুরা কান্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল জীবনের শেষভাগে তাদের কোন একজনের সাথে আবার দেখা হবে।
তার নাতি নাতনীদের গল্প বলে আমার কান ঝাঁলাপালা করে দেবে। কোন নাতি কিসে পড়ে, কোন নাতনীর বর কেমন, কোন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি তার চুলের দিকে তাকাব। তার একসময়ের পাগল করা লম্বা কালো ঘন চুল পুরোপুরি কাঁশফুলের মতো সাদা হয়ে যাবে। আমি ফিক করে হেসে দেব।
সে বলবে, বেয়াদব তোর স্বভাব বুড়া বয়সেও গেল না। দাঁত বের করে লুচ্চার মতো হাসছিস কেন?
আমি বলব, তুই বড় বেয়াদব। আমার তো দাঁতই নাই। দাঁত বের করে হাসব কেমনে?
সে হাসবে। আমি শুনব ৭০ বছর আগে শোনা কোন কিশোরীর হাসি।
..অথবা দেখা হবে এমন কারো সাথে যে ৫০ বছর ধরে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
আমরা ৮২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলব।
তারপর আমার ফ্রেন্ড উইন্ডোজ ৬২ দিয়ে সেটা আপলোড করবে।
ক্যাপশন দেবে, সেলিব্রেটিং হাফ সেঞ্চুরি অব ফ্রেন্ডশীপ!
:
:
..পৃথিবী অস্বাভাবিক সুন্দর একটা জায়গা, জীবন অসম্ভব সুন্দর একটা উপহার।
আপনি স্রেফ রাস্তা ধরে হাঁটবেন, কিছু মানুষ আপনার হাত ধরবেই। তাদের সবাই হয়তো আপনার বন্ধু হবে না, কেউ কেউ হাত ধরে পেছনে টানতে চাইবে..কিংবা হাতটাই কেটে নিয়ে যেতে চাইবে।
তবে..
বিশ্বাস করুন এমন কেউ না কেউ আসবেই যে হাত ধরার পর মনে হবে "তুই পারলে আমার কলিজাটা কেটে নিয়ে আমাকে ধন্য কর।"
হাঁ, এমন কেউ আসবেই...
সিস্টেমটা সৃষ্টিকর্তাই করে রেখেছেন।
প্রাণের বন্ধুর সাথে মান-অভিমান থাকলে এখনই ভুলে যান। রাগ থাকলে এখনই হজম করে নিন। এই মুহুর্তে একটা ফোন করুন।
ভার্চুয়ালে যত বন্ধু পাবেন সব লাভের অংশের বন্ধু। ফোন হাতে নিয়েই হাতের সামনে যাকে "হ্যালো" বলতে পারছেন তারা সবাই বাড়তি উপহার। বাস্তব কিংবা ভার্চুয়াল থেকেই বাস্তব জীবনে চলে আসা বন্ধুরাই আপনার পুঁজি।
লাভের আশায় পুঁজি হারাবেন না। হারালে এক সময় দেউলিয়া হবেন।
আবার ভার্চুয়ালকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বাস্তব জীবন অনেককেই কিছু দিতে পারে নি কিংবা অনেকেই বাস্তব জীবন থেকে কিছু নিতে পারে নি। তাদের জন্য ভার্চুয়াল জগতটাও একটা বড় উপহার।
"বন্ধু হয়েও বন্ধু ভোলা
কভূ যেন ইজি না হয়
ফোনটা যতই বিজি থাকুক
মনটা যেন বিজি না হয়।"
বাস্তব-ভার্চুয়ালের বড়-ছোট-মাঝারি বয়সী সকল বন্ধু এবং শুভাকাঙ্খীকে অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
#শুভ_বন্ধু_দিবস