somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বয়স যখন ৯০ বছর হবে । । ।

০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চোখ বন্ধ করে মাঝে মাঝে কিছু দৃশ্য কল্পনা করি। কল্পনা করে ভীষণ আনন্দ পাই...ভীষণ...
আমার বয়স যখন ৯০ বছর হবে তখন কোন এক পার্কে গোলমোল হয়ে বসে থাকব। তখন কোন একজন বৃদ্ধ লাঠিতে ভর করে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে তিন মিনিট সময় নিয়ে বলবে, তুই জয়নাল আবেদীন না? হারামী, তোরে কত বছর ধরে খুঁজে বেড়াই!
আমি চিৎকার করে বলব, আরে এটা তো দেখি বকুল!
আমরা দুই বৃদ্ধ অতি আবেগে কোলাকুলি করব।
কোলাকুলি করতে গিয়ে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাবো।আমদের মুখ দিয়ে কুৎ করে শব্দ বের হবে। মনে হবে শরীরের সব হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে গেছে।
বন্ধু হাসিমুখে বলবে, আয় চা খাই?
আমি বলব, না রে, শরীরে ডায়বেটিস ভর করেছে। রক্তে চিনির গোদাম তৈরি করেছি। চিনি এখন হারাম।
- বাহ! তুই দেখি এখন বেশ নিয়ম নীতির মধ্যে আছিস। একসময় তো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করতি না।
আমি ফাঁকা মাড়ি বের করে বলব, মরণ ভয় ঢুকছে রে। যত বুড়া হইতেছি ততই মরণ ভয় ঢুকতেছে। দেখ আজীবন কুঁড়ে ছিলাম। ঘর থেকে বের হতাম না। এখন ভোর রাতে হাঁটাহাঁটি করতে হয়। বাঁচার বড়ই ইচ্ছা।
বন্ধু হাহা করে হেসে বলবে, এটা দোষের কিছু না। মরণ ভয় কঠিন জিনিষ। যুবক বয়সে রক্ত গরম থাকে। মরার ভয় থাকে না। যে রবীন্দ্রনাথ প্রথম বয়সে বলেছিলেন "মরণরে, তুহে মেরা শ্যাম সম" সেই রবি বাবুও শেষ বয়সে "মরিতে চাহি না" বলে কান্নাকাটি করছেন।আর আমরা তো রবীন্দ্রনাথ না, পৃথিবীর কাছে অনাথ। জীবনের মায়া আমাদের আরো বেশি।
বন্ধু হাসবে।
হাসির সময় হিসাব করে দেখা যাবে তার দাঁত আমার চেয়ে দুইটা কম।
কোন খাবারটা আমাদের এই বয়সের জন্য সেফ সেটা ভাবতে ভাবতে আমাদের মাথা খারাপ হয়ে যাবে। প্রতিটা খাবারেই কোন না কোন সমস্যা আছে।
অনেক বিবেচনা করে কোন একটা খাবার খাওয়ার সময় আমার একটা দাঁত ফট করে পড়ে যাবে।
বন্ধু হাসতে হাসতে বলবে, কত নাম্বার উইকেট গেল?
আমি বলব, ২২ নাম্বার।
- অলআউট হইতে বেশি বাকি নাই!
- তাও তোর চেয়ে একটা বেশি।
দুই বুড়োর কান্ড কারখানা দেখে রেস্টুরেন্টে আইফোন ৪২ নিয়ে ডেট করতে আসা ছেলেমেয়েরা বিরক্তিবোধ করবে। তারা ঘনঘন চোখ মুখ কুঁচকাবে।
....কিংবা স্কুল জীবনের শেষ দিন যে মেয়ে বন্ধুরা কান্নাকাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছিল জীবনের শেষভাগে তাদের কোন একজনের সাথে আবার দেখা হবে।
তার নাতি নাতনীদের গল্প বলে আমার কান ঝাঁলাপালা করে দেবে। কোন নাতি কিসে পড়ে, কোন নাতনীর বর কেমন, কোন ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমি তার চুলের দিকে তাকাব। তার একসময়ের পাগল করা লম্বা কালো ঘন চুল পুরোপুরি কাঁশফুলের মতো সাদা হয়ে যাবে। আমি ফিক করে হেসে দেব।
সে বলবে, বেয়াদব তোর স্বভাব বুড়া বয়সেও গেল না। দাঁত বের করে লুচ্চার মতো হাসছিস কেন?
আমি বলব, তুই বড় বেয়াদব। আমার তো দাঁতই নাই। দাঁত বের করে হাসব কেমনে?
সে হাসবে। আমি শুনব ৭০ বছর আগে শোনা কোন কিশোরীর হাসি।
..অথবা দেখা হবে এমন কারো সাথে যে ৫০ বছর ধরে আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।
আমরা ৮২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলব।
তারপর আমার ফ্রেন্ড উইন্ডোজ ৬২ দিয়ে সেটা আপলোড করবে।
ক্যাপশন দেবে, সেলিব্রেটিং হাফ সেঞ্চুরি অব ফ্রেন্ডশীপ!
:
:
..পৃথিবী অস্বাভাবিক সুন্দর একটা জায়গা, জীবন অসম্ভব সুন্দর একটা উপহার।
আপনি স্রেফ রাস্তা ধরে হাঁটবেন, কিছু মানুষ আপনার হাত ধরবেই। তাদের সবাই হয়তো আপনার বন্ধু হবে না, কেউ কেউ হাত ধরে পেছনে টানতে চাইবে..কিংবা হাতটাই কেটে নিয়ে যেতে চাইবে।
তবে..
বিশ্বাস করুন এমন কেউ না কেউ আসবেই যে হাত ধরার পর মনে হবে "তুই পারলে আমার কলিজাটা কেটে নিয়ে আমাকে ধন্য কর।"
হাঁ, এমন কেউ আসবেই...
সিস্টেমটা সৃষ্টিকর্তাই করে রেখেছেন।
প্রাণের বন্ধুর সাথে মান-অভিমান থাকলে এখনই ভুলে যান। রাগ থাকলে এখনই হজম করে নিন। এই মুহুর্তে একটা ফোন করুন।
ভার্চুয়ালে যত বন্ধু পাবেন সব লাভের অংশের বন্ধু। ফোন হাতে নিয়েই হাতের সামনে যাকে "হ্যালো" বলতে পারছেন তারা সবাই বাড়তি উপহার। বাস্তব কিংবা ভার্চুয়াল থেকেই বাস্তব জীবনে চলে আসা বন্ধুরাই আপনার পুঁজি।
লাভের আশায় পুঁজি হারাবেন না। হারালে এক সময় দেউলিয়া হবেন।
আবার ভার্চুয়ালকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। বাস্তব জীবন অনেককেই কিছু দিতে পারে নি কিংবা অনেকেই বাস্তব জীবন থেকে কিছু নিতে পারে নি। তাদের জন্য ভার্চুয়াল জগতটাও একটা বড় উপহার।
"বন্ধু হয়েও বন্ধু ভোলা
কভূ যেন ইজি না হয়
ফোনটা যতই বিজি থাকুক
মনটা যেন বিজি না হয়।"
বাস্তব-ভার্চুয়ালের বড়-ছোট-মাঝারি বয়সী সকল বন্ধু এবং শুভাকাঙ্খীকে অফুরন্ত শুভেচ্ছা।
‪#‎শুভ_বন্ধু_দিবস‬
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:৫২
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারতে পচা রুটি ভাত ও কাঠের গুঁড়ায় তৈরি হচ্ছে মসলা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৪ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩০

আমরা প্রচুর পরিমানে ভারতীয় রান্নার মশলা কিনি এবং নিত্য রান্নায় যোগ করে খাই । কিন্তু আমাদের জানা নেই কি অখাদ্য কুখাদ্য খাচ্ছি দিন কে দিন । এর কিছু বিবরন নিচে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×