somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রবাসীর প্রত্যাবর্তনঃ অল্প স্বল্প- ২

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(প্রকাশনা সংক্রান্ত জটিলতায় আটকে পড়ায় উপন্যাসটির অল্প স্বল্প আপনাদের সামনে তুলে ধরছি)
...............মাসুদ গিয়ে আবুল হাশেমকে বসা পেলো একটা পরিত্যক্ত দোকানের পাশেই। বসে বসে সিগারেট ফুঁকছেন ভদ্রলোক। বেশ কায়দা করে নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ছেন আর সিগারেট টানার সময় বেশ জোরে জোরে মুখ দিয়ে শব্দ করছেন। এত রাতেও মানুষে গমগম করছে চারপাশ। বেশির ভাগই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিশাচর ছাত্র। কেউ পরোটা খাচ্ছে, কেউ চা পান করছে, কেউ সিগারেট, অনেকে আবার গরম গরম খাঁটি গরুর দুধ খাচ্ছে। মাসুদকে দেখেই আবুল হাশেম উঠে দাঁড়ালো। বললো, “এসেছেন? চলুন।”
মাসুদ জিজ্ঞেস করলো, “কোথায়?”
“যেখানে নিয়ে যাবো বলেছিলাম, সেখানে। চা কি এখন খাবেন না পরে?”
“পরেই খাই।”
“চলুন তাহলে।”
মাসুদ আবুল হাশেমের পিছু পিছু হাঁটতে লাগলো। আবুল হাশেম তেমন একটা কথা বলছে না। গম্ভীর হয়ে আছে তার মুখখানা। মাসুদ কিছু না বলেই হাঁটছে। চারপাশটায় ভীষণ অন্ধকার। সামনে আবুল হাশেম ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না মাসুদ। গাছের পাতাগুলো নিশ্চল হয়ে আছে, জোনাকিরা ঝি ঝি শব্দে ডাকছে, উপরে পরিষ্কার আকাশ। আবুল হাশেম যে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে সে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা একবারেই কম। এতক্ষণে একটা মানুষকেও এদিকে যাওয়া আসা করতে দেখছে না মাসুদ। মাসুদ ক্রমে ক্রমে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। আবুল হাশেম কী তাকে-
পরক্ষণেই মাসুদ আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠে। ছিঃ ছিঃ এসব কী উল্টাপাল্টা ভাবছে সে?
আবুল হাশেম একটা খড়ের তৈরি ঘরের সামনে এসে থামলো। তারপর মাসুদকে লক্ষ্য করে বললো, “এখানে বেশি না মিনিট পাঁচেক দাঁড়ান। তারপরেই ম্যাজিকটা দেখতে পাবেন।”
মাসুদ দেখলো এই ঘরটাকে কেন্দ্র করে মানুষের যাওয়া আসা একটু বেশি। আশেপাশে বেশ কয়েকটা একশো ওয়াটের বাল্ব জ্বলছে। বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটা ব্রেঞ্চে বসে দুজন তিনজন আড্ডা দিচ্ছে। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছে না। এখানে সবার আসার উদ্দেশ্য যেনো সবাই জানে। তাই সবাই সবাইকে বেশ সচেতনভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। মাসুদ শেখ ও আবুল হাশেমের মতো জ্বলজ্যান্ত দুইট প্রাণীর দিকে কেউ তাকানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না।
একটা বেঞ্চে বসা দুইটা লোকের কথাবার্তা লক্ষ্য করলো মাসুদ। দুজনই নেশার টানে টলছে। একজন বলছে, “ কী রে কালু, এভাবে বসে বসে সময় কাটাচ্ছিস কেনো?”
আরেকজন বলছে, “টেনশনে আছি রে বিশু, ওই শালা রেজিস্টার বাইনচুতের কাছে ছয় লাখ দিয়েছিলাম কিছুদিন আগে। শুনেছি এই নিয়োগ নিয়ে নাকি ব্যাপক ঝামেলা হচ্ছে।”
“কিসের ঝামেলা হবে রে। ওই শালার পেটে আরো দু’লক্ষ ঝেড়ে দিলেই তো হয়।”
“আরো দুই ঝাড়বো!” বেশ অবাক হয় বিশু।
কালু বললো, “না ঝাড়লে হবে? ওই শালা অনেক বড়ো চুতিয়া! আচ্ছা বিশু, এখন টিচারদের কাছ থেকে কত নিচ্ছে রে?”
“ এই ১০-১২ লক্ষ করে।”
“ওরে বাবা, এত্ত বেড়ে গেলো?”
“বাড়বে না কেনো। ওদের পোষ্ট আমাদের থেকে কম না?”
“তা ঠিক বলেছিস। চল বিশু, আরেক সিলিম নিয়ে আসি। এভাবে অযথা টেনশন করলে কি লাইফ চলে?”
কালু আর বিশু আরেক সিলিম গাঁজার জন্য ঘরখানার ভেতরে ঢুকলো।
কালু ও বিশু যখন বেরুলো তখন আরেকটি গোবেচারা টাইপের লোক এসে হাঁক ডাঁক শুরু করে দিলো। পরনের শার্টের হাতের পাশটা একটু ছিঁড়া, পা টা ধুলোয় সাদা হয়ে আছে, মাথার মাঝখানটা চুলহীন।
“এই দাদা, তাড়াতাড়ি পাঁচ সিলিম দাও, ইউনিভার্সিটিতে নিতে হবে।” বেশ তাগদা দিয়েই বললো লোকটি।
“কার জন্য?” ভেতর থেকে আওয়াজ এলো।
লোকটি বললো, “সেলিম ভাইয়ের।”
“সেলিম ভাইকে বলিস হাজার দুই বাকি পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি যেনো দিয়ে দেয়।”
“আরে দিবে রে বাবা, ছাত্র নেতাদের কি টাকা পয়সার অভাব হয়েছে নাকি। হয়তো মনে নেই। ওরা আছে বলেই তো ব্যবসাখানা টিকিয়ে রেখেছো। নইলে কয়জন গাঁজা নিত তোমার এখান থেকে।”
“হয়েছে রে বাবা, এত লেকচার দিতে হবে না। টাকাটা খুব দরকার, তোমাকে মনে করিয়ে দিলাম। তুমি শুধু উনার কান পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারলেই হলো।”
তারপর ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে লোকটার হাতে এক প্যাকেটে পাঁচ সিলিম গাঁজা তুলে দিলো।
আবুল হাশেম এবার মাসুদকে উদ্দেশ্য করে বললো, “ওই লোকটা কে জানেন? ও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের কর্মকর্তা। ওরাই এখান থেকে এসব মাদক দ্রব্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাচার করে। নিজেকে খুব ছোট মনে হয় স্যার, যখন এসব দেখি। আগে নেতারা এদিকে আসতো মুক্তির স্লোগান নিয়ে, উন্নত আদর্শের স্লোগান নিয়ে। আর আজ একদল নেতার চাহিদা মেটাতেই এখানে সৃষ্টি হয়েছে গাঁজার আস্তানা।”
“বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এটা জানে না?”
“জানে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, পুলিশ, র‌্যাব সবাই-ই জানে। ভালোভাবেই জানে।”
“তারপরেও-”
“হুমম.. তারপরেও এসব হচ্ছে। কারণ এখানে একজন ছাত্র নেতাদের প্রত্যক্ষ মদদ আছে।”
মাসুদ বিস্মিত দৃষ্টিতে ঐ হলের কর্মচারিটির দিকে তাকাচ্ছে। কর্মচারিটি মাসুদের দিকে ভ্রূক্ষেপ করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছে না। সে হেঁটে চলছে আপন মনে।
সারাটা রাত ঘুমুতে পারে নি মাসুদ। বিছানায় এপাশ ওপাশ করতে করতে পুরো রাত পার করেছে সে। তার দু’চোখে আবুল হাশেমের দেখানো ম্যাজিক ঘোরপাক খাচ্ছে অনবরত। এ কোন বাংলাদেশ সে দেখছে? এই বাংলাদেশের জন্যই কি ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হয়েছিলো? এই বাংলাদেশের জন্যই কি নিজের ইজ্জত বিসর্জন দিয়েও দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করে চলছিলো দুই লক্ষ মা বোন? এই বাংলাদেশের জন্যই কি ভারতের মাটিতে আশ্রয় নেয়া লক্ষ লক্ষ মানুষ আশায় বুক বেঁধে এদেশে এসেছিলো? যে বাংলাদেশকে আজ সবাই চুষে খাচ্ছে, যে বাংলাদেশকে আজ সবাই ধর্ষণ করছে, যে বাংলাদেশ নিয়ে আজ সবাই রক্ত রক্ত খেলায় মত্ত হয়েছে এ কোন বাংলাদেশ?
মাসুদের স্বপ্ন দেখা প্রথমেই থেতলে দিলো আজকের এই ঘটনাগুলো। মাসুদের ইচ্ছে হচ্ছে আকাশ ফাটিয়ে আর্তনাদ করে বলতে রুদ্রের সেই কবিতা-
আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই
আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি,
ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনে আজো আমি তন্দ্রার ভেতর-
এদেশ কি ভুলে গেছে সেই দুঃস্বপ্নের রাত, সেই রক্তাক্ত সময়?............
(আরও অল্প স্বল্প আসবে।)

সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×