somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্দোলন পরবর্তী হেনস্থার ধরন

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিঃসন্দেহে আওয়ামী লীগের জন্য একটা অশনি সংকেত। কারণ এত জবর দখল আর কড়া নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও যে এরকম স্বতঃষ্ফূর্ত এবং সাহসী আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে আওয়ামী লীগ তা কখনো কল্পনাও করে নি। সর্বোপরি এ আন্দোলনে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ সামিল হয়েছিল। পুলিশের বুলেট, নানান হুমকি কোন কিছুই তারা পরোয়া করেনি। তারা তাদের দাবির ব্যাপারে পুরোপুরি অটল ছিল। সাধারণত রাজনৈতিক নেতৃত্ববিহীন আন্দোলনে এত দৃঢ়তা দেখা যায় না যেটা এই আন্দোলনের নেতাকর্মীরা দেখিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাই এ সময়টিকে বেশ সঠিকভাবেই স্পর্শকাতর সময় বলে চিহ্নিত করেছেন। সময়টি স্পর্শকাতরই ছিল বটে। কারণ আন্দোলনটি কোটা সংস্কারের হলেও কখন যে কী ঘটে যায় এটি নিয়ে তারা বেশ চিন্তিত ছিলেন। ভেতরে ভেতরে গদির মধ্যেও যে একটা মৃদু কাঁপুনি তারা অনুভব করেন নি সেই সম্ভাবনাটিও তো উড়িয়ে দেয়া যায় না। কেঁপেছিল বটে! কেঁপেছিল বলেই তারা ঠান্ডা ছিল এবং অন্যদেরও ঠান্ডা থাকতে পরামর্শ দিয়েছিল। দু একজন আওয়ামী নেতা আন্দোলনকারীদের “রাজাকার-টাজাকার” বলে গাল মন্দ করে যে জবাবটা পেয়েছিলেন তাতে বাকি সবাই একেবারে চুপ হয়ে গিয়েছিলেন। পরিস্থিতিটাই তখন এমন হয়ে গিয়েছিল যে ঠান্ডা থাকাটাই যেন একমাত্র সমাধান ছিল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ আন্দোলনে অতটা বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে পারে নি। চরম মাত্রার কান্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে তারা। তাও একবার নয় বেশ কয়েকবার। কোন কথা না বলে চুপ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগের তীর আসত না। কিন্তু তারা যেভাবে এই অন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল তা সত্যিই লজ্জা জনক। অন্তত একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে তো বটেই। তবে হ্যাঁ, বিভিন্ন কৌশলে এই আন্দোলনে তারা খানিক অংশগ্রহণ করেছিল বটে। তবে সেখানে আন্তরিকতার লেশ মাত্র ছিল না। তাদের চোখ ছিল কত তাড়াতাড়ি এই ঝামেলা চুকে যায় সেদিকে। এটি তাদের কাছে একটি আন্দোলন নয় একটি ঝামেলাই ছিল। সেজন্যই আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আন্দোলনকারীদের উপর গুলি করা, বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের মেরে তাদের হাসপাতালে পাঠানো এরকম নানান অপকর্মে তারা জড়িত ছিল। ফলে ছাত্রলীগ যদি এটি দাবিও করে থাকে যে তারা এই আন্দোলনের পক্ষে আদৌতে তারা এটির পক্ষে ছিল না। কারণ তারা সব সময় এই আন্দোলনের বিপক্ষে ক্রিয়া করেছিল। যে জন্য ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সংগঠনেরই বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের পদধারী নেতারা পদত্যাগ করতে শুরু করে। আর আন্দোলনকারীদের উপর এশার মত ছাত্রলীগ নেত্রীর আচরণ সর্বোপরি পুরো ছাত্রলীগের ভূমিকাকেই আরো পরিষ্কার করে ফুটিয়ে তুলে। মূলত এই প্রক্রিয়ায়ই তারা বিভিন্ন হলে এই আন্দোলনকে বলি দেয়ার নীল নকশা করছিল। যদিও পরের দিনে সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের উত্থাল স্রোতে এসব নকশা-ফকশা উড়ে চলে যায়। মূলত আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরাই সরকারকে বাধ্য করেছিল তাদের দাবি নেমে নিতে। সরকার প্রথমে কোনো মতেই এই দাবি মানতে চাইছিল না। যদিও নানা ভাবে সরকার পক্ষ এই সত্যটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে তারপরেও এটি সত্য। অনেক অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের একটি সমাধানে আসতে হয়েছিল।

এখন আন্দোলন আপাতত স্থগিত। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার প্রেক্ষিতে তারা আন্দোলনটি আপাতত স্থগিত ঘোষণা করে যার যার মত করে ফিরে গেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে অনেক অস্পষ্টতা ছিল তারপরেও তারা ফিরে গেছে। আস্থা রেখেছে প্রধানমন্ত্রীর উপর। প্রধানমন্ত্রী যদিও বলেছেন উপজাতি ও প্রতিবন্ধীদের বিশেষ উপায়ে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে সেই বিশেষ উপায়টি বিন্দুমাত্র খোলাসা করা হয় নি। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কোঠার এখন কি গতি হবে সে ব্যাপারেও তার কোনো স্পষ্ট মতামত ছিল না। তারপরেও তারা চলে গেছে। কিন্তু চলে যাওয়ার পর আন্দোলনকারীদের উপর সরকার দলের নানা মুখী চাপ একের পর আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দদের সামলাতে হচ্ছে। প্রথমত পুলিশ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ মোট ৪টি মামলা করে তাদের নামে। গতকাল পুলিশ তো রাশেদ সহ আন্দোলনকারীদের মোট তিনজন নেতাকে চোখ বেঁধে থানায় নিয়ে হেনস্থা করে। হেনস্থা করে তাদের পরিবারকেও। বিভিন্ন জায়গায় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের নির্যাতন করছে। কুষ্ঠিয়ার ইসিলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ জনের মত শিক্ষার্থীকে এই আন্দোলন করার অপরাধে হল থেকে পর্যন্ত বের করে দেয়। সরকারের নানা মহল যারা এতদিন চুপটি মেরে বসে ছিলেন তারা নানা ভাবে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের এবার জামাত শিবিরের কর্মী বলে প্রমাণের জন্য উঠে পড়ে লাগলেন। বিভিন্ন মন্ত্রী এমপি তাদের বক্তব্যে একের পর এক লাগামহীন ভাবে তাদের জামাত শিবির বলে ফাঁসানোর অপচেষ্টা করতে থাকেন। শেষমেষ এতে যুক্ত হয়েছে একটি সংবাদ মাধ্যমের নামও। তারা বেশ উদ্দেশ্যপ্রবণভাবে আন্দোলনকারী প্রত্যেক নেতৃবৃন্দের নামেই কমবেশি শিবিরের সংশ্লিষ্টতা লিখে একটা ভুয়া নিউজ প্রকাশ করেন। এই নিউজ প্রকাশিত হওয়ার সাথে সাথেই সব মহলে ধিক্কার উঠে। শুরু হয় ব্যাপক হারে ইত্তেফাক বর্জনের হিড়িক। অর্থাৎ পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর অনেকেই এবার তাদের আসল চেহারাটি দেখাতে শুরু করেছেন।

এই বিষয়টি আমাদের প্রত্যকেরই গভীরভাবে ভাবতে হবে। শুধু ভাবা নয়, এর যথেষ্ট প্রতিবাদও দরকার। অযথা শিবির ট্যাগ দিয়ে যেকোন সাধারণ নাগরিককে হেনস্থা করার রীতি বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের দেশে চলে আসছে। এটি অদ্ভুত এক রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। আমি নিজেও অসংখ্য জায়গায় দেখেছি এবং শুনেছি। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪ সালে যখন এক ছাত্রলীগ নেতা সাদ ইবনে মমতাজ ছাত্রলীগের গ্রুপিং এর জেরে মারা যায় তখন তাকেও শিবির তকমা দিয়ে তাকে কিলিং এর বিষয়টি একটু হালাল করার ধান্দা থেকে ছাত্রলীগ তখন পিছপা হয় নি। তারা নানা ভাবে সাদকে শিবির কর্মী প্রমাণের অপপ্রয়াস চালিয়েছিল। ছোট্ট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিবির ট্যাগ লাগিয়ে একটা ছেলেকে হল থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে। তাকে মারধর করা হচ্ছে। এগুলো বিভিন্ন জায়গার সাধারণ ঘটনা। কিন্তু এত বড় একটা আন্দোলনের নেতৃত্বকে এই মিথ্যা ট্যাগ লাগিয়ে হেনস্থা করা সরকারের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি পুরোপুরি হঠকারি একটি সিদ্ধান্ত। জামায়াতে ইসলামী কিংবা তার ছাত্র সংগঠন শিবিরের প্রতি আওয়ামী লীগ যতই বিরক্তি কিংবা ঘৃণাবোধ দেখাক না কেন জামায়াত থেকে নেতাকর্মীরা নিজ দলে আসতে চাইলে আওয়ামী লীগকে বেশ সাদরেই গ্রহণ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় এখন পর্যন্ত এরকমটি হয়েছে। এসব জামায়াত ইসলামী নেতাকর্মীদের যোগদান অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। তারা ফুলের মালা দিয়ে তাদের বরণ করেছিলেন। প্রশ্নটি সেখানে নয়। প্রশ্নটি হচ্ছে এরকম মিথ্যাচার করে এই আন্দোলনকারীদের উপর এই ট্যাগ লাগানোর অপচেষ্টা করে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক ফায়দা লুটার পরিবর্তে একটি ঐতিহাসিক ভুল করেছে। যার জবাব তারা নিকট ভবিষ্যতেই পাবে। কারণ এই আন্দোলন কয়েকজন আন্দোলনকারী নেতার কোন বিষয় ছিল না। এটি সারা বাংলাদেশর তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন ছিল। যারা পড়াশুনা শেষ করেছে কিংবা করছে। আর সবার লক্ষ্য একটি সরকারি চাকুরি। এরাই এদেশের ভবিষ্যত প্রশাসন চালাবে। সেই তরুণ সমাজের নেতাদের প্রতি এরকম অবমূল্যায়ন তরুণরা আজীবন মনে রাখবে। আর সব থেকে বড় কথা জনগণ এসব যে কেবল দেখে তা নয়। তার ভেতরের এই সত্যগুলোও আঁচ করতে পারে।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো। যেকোন আন্দোলনে একটি ক্ষমতাসীন সরকারের সমর্থন থাকবে বিষয়টা আমরা আশা করছি না। কিন্তু আন্দোলনকারীদের এরকম অযাচিতভাবে অন্য রাজনৈতিক দলের ট্যাগ ঝুলিয়ে তাদের আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপপ্রয়াস থেকে ক্ষমতাসীনরা দূরে থাকবেন এটাই প্রত্যাশাই করছি। এই রাজনৈতিক শিষ্টাচারটি যেন আমরা দেখাই।



সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট
বাকৃবি শাখা।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:২০
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×