somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাদার অফ এডুকেশন কথা রাখলেন না!

০২ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর সরকারের সশস্ত্র বাহিনী এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নৃশংস হামলায় পুরো বাংলাদেশ এখন স্তব্ধ। যে ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল আজ সেই ছাত্রলীগের হাতেই বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলমান আন্দোলন বলি হলো। একটা আন্দোলনের প্রতি ছাত্রলীগ যদি মনে করে তার চিন্তাগত বিরোধ আছে তাহলে সেই বিরোধের জায়গাটা তারা বজায় রাখতে পারতো। কিন্তু যেভাবে তারা নিজ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছিল তাতে বাংলা সিনেমার স্টাইলেই বলতে হয়- আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া অপরাধ! কিন্তু বাস্তবিক অর্থে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া আজ বাংলাদেশে কোন অপরাধ নয় যদি সেখানে সরকার দলের কেউ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকে। এজন্যই বোধ হয় মাদক সম্রাট বদি বাংলার মাটিতে হুংকার ছেড়ে দাপিয়ে বেড়ায় আর আর চুনোপুটিরা পুলিশের ক্রসফায়ারে মাদক ব্যবসার নামে প্রাণ দেয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো একটি ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনটির এ পর্যায়ে এসে মার খাওয়ার নেপথ্যে আমার ব্যক্তিগত কিছু ক্ষোভ বিক্ষোভ আছে। বিশেষ করে আন্দোলন পরিচালনাকালীন সময়টিতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নেয়া কিছু সিদ্ধান্ত। আন্দোলনটি যে এ জায়গায় আসবে সেটি আমি আঁচ করতে পেরেছিলাম সেদিনই যে দিন আন্দোলনটি বন্ধ করে দেয়া হল একটা উত্থাল সময়ে। সময়টা এমন ছিল যে অনেককে অনিচ্ছা সত্ত্বেও সেদিন বাড়ি ফিরে যেতে হয়েছিল।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের উত্থাল সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা পদ্ধতি আর থাকবে না বলে সংসদে একটি ঘোষণা দেন। যে ঘোষণার প্রেক্ষিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের আন্দোলন সাময়িক স্থগিত রেখেছিলেন। কিন্তু এই ঘোষণা নিয়ে অনেক মতানৈক্য ছিল। প্রধানমন্ত্রী কোটা পদ্ধতি বাতিলের ঘোষনা দিলেও অনেকেই এই ঘোষণার মধ্যে রহস্যের গন্ধ পেয়েছিলেন। রহস্য ছিলও বটে। ভালো করে সেই দিনকার ঘোষণা শুনলে স্পষ্টত কয়েকটি বিষয় ধরা পড়ে। প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী সেদিন খুবই রাগান্বিত ছিলেন। এ রাগটা ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের উপর। উনি উনার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরকে দিয়ে বিষয়টা মিটমাট করে ফেলতে চেয়েছিলেণ। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে কোন মিটমাট তো হয়ই নি বরং আন্দোলনের তীব্রতা আরো বেড়েছিল। তার উপর আন্দোলনটা পুরো দেশজুড়ে যে পরিমাণ নাড়া দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী তার সিংহাসনেও সেই নাড়ার একটি অংশ অনুভব করতে পেরেছিলেন । তাই তার রাগ থাকাটা একেবারে অমূলক নয়। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বাসায় হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার কথা বলেছিলেন। এই হামলায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারোর বিন্দুমাত্র সংশিলষ্টতা থাকলে প্রধানমন্ত্রী সত্যিই তাদের বিচার দু একদিনের মধ্যে সেরে ফেলতেন। কিন্তু দেখা গেল সেখানে এমন কিছু মানুষ জড়িত ছিল যেটা নিয়ে বেশি নাড়তে গেলে তার নিজের সংগঠনের নামটিও বেরিয়ে আসবে । তাই প্রধানমন্ত্রী নিজের সংগঠনের কথা মাথায় রেখে বিষয়টা আর বাড়ান নি। তবে বিন্দুমাত্র কোন সংশ্লিষ্টতা থাকলে বিচার কাকে বলে রাশেদ, নূররা বুঝতো। তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কোন কোটাই থাকবে না -এটা কোন সমাধান হলো? আন্দোলনকারীদের তো দাবি ছিল কোটার পরিমাণ কমিয়ে আনা যাতে মেধাবীদের পথটা সুগম হয়। কিন্তু ১০% কোটা বিভিন্ন সেক্টরে দেয়ারও যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে। তাহলে কোটাই যেহেতু থাকবে না তাহলে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী কিংবা আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ এরকম মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কি হবে? তাদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা থাকবে? থাকলে তো সেটার সাথে কোটার কোন পার্থক্যই আর থাকলো না। আল্টিমেটলি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী কিংবা আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ এরকম মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কোন বক্তব্যই ছিল না। এই বিষয়টি অনেক আন্দোলনকারীরা যে বুঝে নি তা নয়। তারা বুঝেছিল। মিডিয়ায় অনেক সাক্ষাতকারে তাদের এই সন্দেহের বিষয়টি ফুটে উঠেছিল।
অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার মধ্যে অনেক অস্পষ্টতা ছিল। যে অস্পষ্টতাগুলো বিবেচনা করলে আন্দোলন থামিয়ে দেয়া কোন যৌক্তিক বিষয় হতে পারে না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে আন্দোলনকারীদের দাবির প্রতি আন্তরিকতার লেশমাত্র ছিল না। আন্দোলনকারীরা কি ভুলে গিয়েছিলেন তারা এমন একটি বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছেন যেটা সরকার, তার ছাত্র সংগঠন ঘোর বিরোধিতা করছে? কারণ এটি নানাভাবে তাদের স্বার্থকে আঘাত করছিল। তারা সরকারকে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করে সেটি আদায় করতে যাচ্ছেন। সরকার তো তার ছাত্রলীগ সহ নানান মন্ত্রী এমপিদের মাধ্যমে তার বক্তব্যকে স্পষ্টই বুঝিয়ে দিচ্ছিলো। যেটি ঐ আন্দোলনের সময়টায় ধরা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এতগুলো স্পষ্ট বিষয় দেখেও সেগুলো অতটা বিবেচনায় না নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে “মাদার অফ এডুকেশন” বলে খ্যাত করা বেশি বাড়াবাড়ি ছিল। সত্যিকার অর্থে প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকার কিংবা ছাত্রলীগ কেউই এই মহান মর্যাদাটি গ্রহণ করে নি। কারণ তারা অপেক্ষা করছিল এই মর্যাদা দানকারীদের শায়েস্তা করার উপযুক্ত সময়ের। তাই অযথা এই মহান জিনিসটি গ্রহণ করে আরেকটি ঝামেলা তারা বাড়াতে চায় নি।
সর্বোপরি সরকার একটু সময় চাচ্ছিলো। সেটা যেভাবেই হোক না কেন। এই সময়টা তার দরকার একারণেই যাতে সে আন্দোলনটিকে সরকার বানচাল করতে পারে। আসলে তারা সেটাই করেছে। কিছুটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে শুরু হলো বিভিন্ন স্থানে এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের নানান হুমকি ধামকি, ক্ষেত্র বিশেষে মারপিটও। যারা বিভিন্ন আবাসিক হলে থাকত সেখান থেকে শুরু হল তাদের বের করে দেয়া । বেশ কিছু শিক্ষার্থী এই ঘটনার পর ছাত্রলীগের নিপীড়নের চাপে তাদের হল ছাড়ে। আমাদের হলগুলো তো আবার প্রশাসন চালায় না। বিশেষ ক্ষমতাবলে ক্ষমতাসীনরা চালায়। তাই প্রভোস্টরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখেন। তাদের কাছে বিচার পাওয়া যাবে এমনটিও কেউ ভাবেন না। অন্যদিকে সুফিয়া কামাল হলে নিপীড়নকারী সেই শিক্ষার্থীও হলে আসে। তার নামে যে বহিষ্কারাদেশ দেয়া হয়েছিল সেটিও বাতিল করা হয়। স্রেফ একটি মাত্র ঘোষণা। ঘোষণাটি পাওয়ার সাথে সাথই সরকার তার স্বীয় চরিত্রে ফিরে যায়। শুরু হয় এই আন্দোলনের উৎস মুখগুলোকে বন্ধ করার নানান প্রচেষ্টা। আর এটা মানতেই হবে যে সরকার এতে সফল হয়েছে।
মাদার অফ এডুকেশন উপাধি পাওয়ার পরেও প্রধানমন্ত্রী তার হাত কঠিন করলেন। কঠিন করলো ব্র্রাদার অফ এডুকেশনরাও। তারা হয়ে গেল মাদার এবং ব্রাদার অফ রিপ্রেশন। তারা ভালোভাবেই জানে যে জনস্রোত সব সময় আসে না। সময়ে সময়ে আসে। যখন এসেছিল তারা তাদের কূটচালে এবং মিথ্যা আশ্বাসে সেটিকে থামিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। ফলে এখন সময় নিপীড়নের। তারা সেভাবেই তাদের মাঠ গুছাতে শুরু করে। সর্বোপরি মাদার অফ এডুকেশন আর ব্রাদার অফ এডুকেশনরা আন্দোলন দমনে বেশ ভালো দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে এবং দিবে। আর হ্যাঁ, আরেকটি কথা- মাদার অফ এডুকেশন কিন্তু কথা দিয়ে কথা রাখেন নি!

সৌরভ দাস
সভাপতি
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট
বাকৃবি শাখা।



সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৪৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×