কীভাবে গুজব আর অপপ্রচার ছড়ানো যায় এ ব্যাপারে অসৎ প্রকৃতির কিছু মানুষ রীতিমত পিএইচডি করে ফেলেছে বাংলাদেশে। যদিও তাদের কেউ কেউ আবার বলে বেড়ান, গুজবে কান দেবেন না, অপপ্রচারে কান দেবেন না। গুজব আর অপপ্রচার ছড়ানোর ক্ষেত্রে এই টাইপের দুষ্টু প্রকৃতির এবং অসৎ উদ্দেশ্যের বাঙালির চেয়ে করিতকর্মা কোনো জাতি পৃথিবীতে আছে কিনা গুগল ঘেটে দেখা যেতে পারে। চারপাশে চোখ কান খোলা রেখে তাকালে, এখন অহরহই দেখা যাচ্ছে, এই গুটি কয়েক অসৎ লোক, গুজব আর অপপ্রচার ছড়িয়ে তিলকে তাল বানিয়ে ফেলেছে। আর এই সুযোগে দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়ে আরো কতিপয় সুবিধাবাদী ও সুযোগসন্ধানীর দল সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে ফায়দা লুটে নিচ্ছে।
আপনারা নিশ্চয়ই ভুলে যাননি এই গুজব ছড়িয়েই চাঁদে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর চেহারা দেখিয়েছিল কিছু অসৎ লোক! তারা ফটোশপের মাধ্যমে ছবি জালিয়াতির কৌশল খাটিয়ে চাঁদের ভেতর সাঈদীর চেহারা বসিয়ে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছিলো। আর গ্রামে গ্রামে পাড়া মহল্লায় প্রচার করে দেয়, সাঈদীর চেহারা চাঁদে দেখা গেছে। আর অমনি সহজ-সরল আলাভোলা মানুষ ছুটলো গুজবের পেছনে। আমাদের বড় সমস্যা এটাই, হুজুগে বাঙালির গুজব আর অপপ্রচারেই কান যায় বেশি, প্রকৃত এবং আসল ব্যাপারে তুলনামূলক কম। বেশিরভাগ মানুষই এত আলাভোলা আর সহজসরল যে কানে একবার হাত দিয়েও দেখে না, আসলেই কী চিলে কান নিয়ে গেছে, নাকি গুজব ছড়ানো হয়েছে!
যাই হোক, এবার একটু মূল প্রসঙ্গে আসি। কারা রটায় এসব গুজব আর অপপ্রচার, কেনো রটায়, তাদের উদ্দেশ্যইবা কী? এতকাল যাবতীয় গুজব ছড়ানোর প্রধান নেপথ্যে ছিলো বিএনপি আর জামায়াতের কিছু অসৎ নেতা কর্মী। তাদের নানা অপকৌশল একের পর এক ব্যর্থ হলে তখন তারা গুজব ছড়িয়ে দিতো। রাজনৈতিক বিভিন্ন পটপরিবর্তনে এই গুজব আর অপপ্রচার ছড়িয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করাটা এখন সংক্রমিত হয়েছে, অসৎ এবং হাইব্রিড লীগারদের মাঝে। আর তাদের হয়ে এইসব গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে দিতে নেপথ্যের সহায়তাকারী হিসেবে কাজ করছে বিএনপি এবং জামায়াত মনোভাবাপন্ন খোলস পালটে ফেলা কতিপয় উন্নত প্রজাতির সরীসৃপ। তাদের কেউ কেউ আবার দল ভোল পালটে খাঁটি লীগারও হয়ে গেছেন ইতিমধ্যে।
মূলত, আওয়ামী ঘরানার প্রকৃত রাজনীতিবিদদের একটা বড় গুণ ধরা হয়, এরা নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুঁড়ি পছন্দ করেন না এবং নিজেরাও করেন না। তারা দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, তথা এই অঞ্চলের জনগণের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ এবং সোচ্চার ছিলেন এবং এখনো আছেন। সেই বঙ্গবন্ধুর সময় থেকে তাদের রাজনীতির পরিবেশ ছিল গঠনমূলক। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা তাদের নেতৃত্বের এই গুণাবলী দেশের প্রায় সর্বত্র এখনো ধারণ করেন, যেটা একসময় এ অঞ্চলে মানে বরগুনার রাজনীতিতেও গভীরভাবে বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু হঠাৎই এমন কী ঘটে গেলো, দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে বিশেষ করে বরগুনার রাজনীতিতে, যার ফলে সেই সৌহার্দ্য সহনশীলতা ও শ্রদ্ধাবোধ হঠাৎ করে একেবারেই উবে গেলো? রাজনীতিতে তো সংগ্রাম, আন্দোলন হওয়ার কথা জনগণের আর্থসামাজিক মুক্তির জন্য। অথচ, তার পরিবর্তে এখানে কেনো স্থানীয় আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ এর বিরুদ্ধে লড়ছে? তারা নিজেরাই যদি নিজেদের বিরুদ্ধে লড়েন, তাহলে জনগণের হয়ে কে লড়বে?
আমাদের কাছে খবর আসছে, একটি প্রিন্ট মিডিয়া এবং বিএনপি মনোভাবাপন্ন "স" অদ্যাক্ষরের একজন সাংবাদিক যিনি নিজেই অর্থ জালিয়াতি এবং নারী কেলেঙ্কারির দায়ে অভিযুক্ত তাকে ব্যবহার করে গুটি কয়েক সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদ এখানে গুজব রটিয়ে দেয়ার এ কাজটি সুকৌশলে করছেন। আর এ গুজব অপপ্রচার রটিয়ে দেয়ার মূল উদ্দেশ্য, আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অসৎভাবে ফায়দা লুটে নেয়া। আর এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, জেলা আওয়ামী লীগ এর সভাপতি এবং চার বারের সফল এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এবং পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। শুধু এটাই নয়, রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন, তার পরিবারের এমন সদস্যদের বিরুদ্ধেও নোংরা এবং আপত্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। গুজব প্রচারকারীরা এখানে এতটাই চতুর যে, এইসব গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে দিতে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী ছাত্র সংগঠন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বরগুনা জেলা ইউনিটের কতিপয় সদস্যও তাদের অপকৌশলে ব্যবহার হচ্ছেন।
একটা সময়ে আমরা খেয়াল করেছি, জামায়াত নেতাদের ফাঁসি ঠেকাতে দেশ বিদেশে প্রচুর অর্থ ছড়ানো হয়েছিলো, সেই সংস্কৃতিটা এখন বরগুনার রাজনীতিতেও দৃষ্টিকটুভাবে ঢুকে গেছে, তবে আঙ্গিক কিছুটা বদলে। এখানে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীর নামে গুজব রটাতে গিয়ে স্থানীয় কিছু অসৎ রাজনীতিবিদগণ প্রকারান্তরে এমন কিছুও করে ফেলছেন এবং পাশাপাশি এমন টাইপের দম্ভোক্তিও করছেন, যার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সরকারও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। আর এ কাজে তাদের বাহন হিসেবে কাজ করছে বিএনপি মনোভাবাপন্ন "স" অদ্যাক্ষরের সাংবাদিক সাহেব। অবস্থা এখানে এতটাই বাজে দিকে চলে দিকে চলে গেছে যে, চারপাশে এখন কান পাতলেই শোনা যায়, এ কাজের জন্য সাংবাদিক সাহেবের পকেটে নগদ নারায়ণ হিসেবে মোটা অংকের অর্থও ঢুকে যাচ্ছে।
এ খবরও আসছে, সে সাংবাদিক সাহেব বিএনপি নামক একটি অবক্ষয়িত রাজনৈতিক দলের একনিষ্ঠ কর্মী। যে দলটি নিজেদের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ফাঁদে পড়ে আছে। এবং বর্তমানে সেই ফাঁদ থেকে উঠে আসার জন্য নানা জটিল আর ঘৃণ্য পথ খুঁজে ফিরছে। ক্ষমতায় ফেরার লোভে, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্রের নানা কুটিলপথও ক্রমশ বিস্তৃত হচ্ছে তাদের। আর তাদের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের আদর্শে আদর্শিত একদল দক্ষ এবং কৌশলী কর্মী। যাদের প্রধান কাজই হচ্ছে, পেশাগত দায়িত্ব পালনের খোলসে আওয়ামী লীগ এর ভেতর বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্তির মাধ্যমে কোন্দল সৃষ্টি করা। আর এ উদ্দেশ্য থেকে সাংবাদিক সাহেব এখানে আপাত ক্লিন ইমেজের একজন সংসদ সদস্যকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে, তাকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন কালিমা লেপে দিচ্ছেন। আর এর মাধ্যমে তিনি এক ঢিলে মূলত তিনটি পাখি মারছেন। এক, নিজের আদর্শিক দলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে কৌশলে এবং সুনিপুণভাবে বাস্তবায়ন করছেন। দুই, হাইব্রিড এবং সুবিধাভোগী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বকে আশকারা দিয়ে কয়েকটি উপগোত্র তৈরি করার ক্ষেত্র তৈরি করছেন এবং তিন নম্বর ব্যাপার হলো, অনৈতিকভাবে নিজের আখেরও গুছিয়ে নেয়ার কাজটা এসবের সাথে সাথে হয়ে যাচ্ছে তার।
এখন স্বাভাবিকই প্রশ্ন আসে, পার্লামেন্টের মেম্বার হিসেবে টানা সাড়ে নয় বছরে এসেও অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু কেনো এতটা অপপ্রচারের স্বীকার হচ্ছেন? একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে গত কয়েকদিনে যা খোঁজখবর নিয়েছি তাতে দেখতে পাই, এখানে দায়টা তার ওপরও অনেকটা বর্তায়। বিরোধী পক্ষ বেশ কিছুদিন ধরে যথেচ্ছ মিথ্যাচার, অপপ্রচার এবং গুজব চালিয়ে গেলেও সেগুলো মনিটর এবং তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার যে দায়িত্ব তার ছিলো, সে ব্যাপারকে এতটা গুরুত্ব তিনি কখনোই দেননি, এ নিয়ে অনেকটাই উদাসীন ছিলেন দীর্ঘদিন।
১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে সংবিধানের মূল চেতনা যেমন পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিলো, তেমনি জয় বাংলা আর বঙ্গবন্ধু শব্দও সরকারীভাবেই নিষিদ্ধ ছিল। সারা বাংলাদেশ ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা যে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রাণের বিনিময়ে সমাজে সেটা বাঁচিয়ে রাখেন, তার ভেতরে বরগুনা জেলাকেও অন্যতম ধরা হয়। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর যে যে জায়গা থেকে প্রথম প্রতিবাদ এসেছিলো, তার ভেতরে বরগুনার নামও উল্লেখযোগ্যভাবে স্মরণীয়। যদিও, তার পরে অনেক পথ পরিক্রম করেছে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, করেছে বরগুনা আওয়ামী লীগ। দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমার পরে, অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে এসে আজ আবারও বিশ্বনন্দিত নেতা আওয়ামী লীগ নেতা। বঙ্গবন্ধুর পরে আবার শেখ হাসিনা নিজেকে এমন একটা স্থানে নিয়ে গেছেন যে, তিনি বঙ্গবন্ধুর সমান বা কাছাকাছি উচ্চতায় নিজেকে না নিয়ে যেতে পারলেও, এ সত্য বলতে হবে, বাংলাদেশ থেকে বঙ্গবন্ধুর পরে তিনিই প্রথম বিশ্বনন্দিত নেতা হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জরিপ, জার্নাল এবং রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শেখ হাসিনা নেতা হিসেবে বিশ্বনন্দিত হওয়ার ফলে, এবং সুষমভাবে সারাদেশব্যাপী সরকারের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ এর জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাটিতেই পা রাখতে চাইছেন, তিনি ভুলে যান নি, ষড়যন্ত্রকারীরা পঁচাত্তরে কী প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিলো দেশে, কীভাবে তার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ষড়যন্ত্রকারীদের সহজ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিলেন। শোনা যায়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা, বৈঠকে শেখ হাসিনা যেমন দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকেন, বরগুনার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় তেমন দিকনির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি দলের কিছু সুবিধাবাদী ভুঁইফোড় নেতৃবৃন্দ সম্পর্কে কঠোর বার্তাও দিয়েছেন। বরগুনার আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে রুদ্ধদ্বার সে মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বার বার তাগাদা দিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ এখন এমন একটা সময়ে অবস্থান করছে- যে সময়ে দল এবং দলের বাইরে ভোল পালটে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়তে, আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ করার সময় এসেছে, এবং নূন্যতম কোনো বিভেদও এ সময়ে তিনি বরদাশত করবেন না বলেও হুঁশিয়ারী দিয়েছেন। তিনি আরো নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনভাবেই পুনরায় বরগুনার আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে যাতে নেতা ও সংগঠন সমান্তরালে যায়। কিন্তু এ ব্যাপারে বরগুনার আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কি ভাবছেন? তারা কি গুটিকয়েক চতুর ষড়যন্ত্রকারীর ঘৃণ্য খেলার ক্রীড়ানকে পরিণত হবেন, নাকি চারবারের সফল এমপি, সাবেক মন্ত্রী, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে মিছিলের অগ্রভাগে রেখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার পথে এগিয়ে যাবেন? সময় ফুঁড়িয়ে আসছে, দেশ এবং দলের বৃহত্তর স্বার্থে দ্রুততার সাথেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে বরগুনার আওয়ামী লীগকে, অন্যথায় বিপদ অনিবার্য।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:৪৩