somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তলে তলে সবাই সাম্প্রদায়িক

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এবছর জানুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহের কোন একদিনের কথা। বিকালে শাহবাগ গিয়ে দেখি প্রচন্ড ভীড়। ঢাকা ভার্সিটিসহ আশপাশের ভার্সিটি ও কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে। দলে দলে বিভক্ত হয়ে মোড়ের ওপর বৃত্তাকারে বসে বিক্ষোভ করছে তারা। স্লোগান দিচ্ছে। কারো হাতে কোন প্লেকার্ড বা ব্যানার নাই। স্লোগান শুনে স্পষ্ট ভাবে কিছু বুঝা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার আর চেঁচামেচি।

একপাশে দাঁড়িয়ে কেউ একজন ভাষণ দিচ্ছে, সেখানেও চেঁচামেচির আওয়াজ। ওদিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে চার-পাঁচজন বাউল শিল্পী শরিয়ত বয়াতীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে করছে মানববন্ধন । সেখান থেকেও ভেসে আসছে মাইকের আওয়াজ।

বাউল শিল্পীদের মানববন্ধন ছাপিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তুঙ্গে । ঢাকা ভার্সিটির ওদিক থেকে ছোট ছোট মিছিল এসে যোগ দিচ্ছে আন্দোলনে। রাস্তা অবরোধ। গাড়ি চলাচল করতে পারছে না।

ভাবলাম, হঠাৎ করে এখন আবার কিসের আন্দোলন। সারাদিন এ আন্দোলনের ব্যাপারে নিউজ মিডিয়া, ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন নিউজ দেখি নাই তো। স্লোগানরত এক আন্দোলনকারীকে জিজ্ঞাসা করলাম।
- ভাই, কিসের আন্দোলন করছেন আপনারা?

সে স্লোগান থামিয়ে যেটা বললো সেটা হলো, ফেব্রুয়ারীর এক তারিখে ঢাকা সিটি নির্বাচন। আবার ঐ একইদিন সরস্বতী পূজা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পূজার দিন কখনও কোন নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচন পরের দিন অর্থাৎ দুই তারিখে করতে হবে। আর এজন্য-ই তাদের এই আন্দোলন।

সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে পূজার দিন নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তন করার জন্য রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান শাহবাগ মোড়ে শিক্ষার্থীদের সে জমায়েতে সবাই যে হিন্দু তা কিন্তু নয়। আমার মনে হয়, মোট উপস্থিতির বিশ ভাগ হিন্দুও ছিল না সেখানে। তারপরও পূজার দিন নির্বাচন হবে না মর্মে আন্দোলন হয়েছে শাহবাগে। কারণ, এটা অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে মুসলমান আর হিন্দু ভাই ভাই।

২.
হিন্দু সংখ্যা গরিষ্ঠতার দেশ আমাদের প্রতিবেশি ভারত। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে যারা নিজেদের দাবি করে। ভারতে প্রায় বিশ কোটি মুসলমান বসবাস করে। যেটা সেদেশের মোট সংখ্যার ১৪.২ শতাংশ। ৭৯.৮ শতাংশ হিন্দু ধর্মালম্বীদের তুলানায় যেটা খুবই নগণ্য।

পৃথিবীর আরেক গণতান্ত্রিক এবং অসাম্প্রদায়িক দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত সফররত। একদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম সরদার প্যাটেল পূর্ণ উপস্থিত জনতার সামনে ভাষণ দেন। অসাম্প্রদায়িকতার বাণী শোনান। অপর দিকে ঠিক তখনই দিল্লিতে মসজিদে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মসজিদের মিনারে টানিয়ে দেওয়া হয় হনুমানের পতাকা। শুধু তাই নয়, মুসলমানদের ঘর বাড়ি, দোকাট পাট জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমান ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দল বিজেপির প্রত্যাক্ষ মদদে সেখানে মুসমানদের নির্যাতন করা হয়। ২০০২ সালের ফেব্রুয়ারীতে গুজরাট দাঙ্গায় অন্তত ৯৭ জন ইসলাম ধর্মালম্বীকে বীভৎস ভাবে হত্যা করা হয়। সেই অভিযোগও রয়েছে বিজেপি তথা নরেন্দ্র মোদির দিকে।

যাই হোক, পরবর্তীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে দিল্লির সহিংসতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সেটা ভারতের অভ্যান্তরিণ বিষয়। আচ্ছা ভালো কথা। কিন্তু ফিলিস্তিন, সিরিয়া বা ইরাকের কোন অভ্যান্তরিণ বিষয় নেই কেন জনাব প্রেসিডেন্ট?
কারণ, একটাই। সেগুলো হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আর বর্তমান বিশ্ব রাজনীতিতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে অভ্যান্তরিণ বিষয় বলে কিছু নেই। কিছু থাকতে পারে না। শুধু থাকতে পারে জঙ্গি আর আইএস। উগ্রপন্থি বা হিন্দু জঙ্গি দমনে ভারতে মার্কিন সামরিক অভিযান কি কখনও কল্পনা করা যায়!! এসকন নির্মূলে তারা কি কখনও পদক্ষেপ নিবে!

আসল কথা হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প, নরেন্দ্র মোদি বা যে যত কথাই বলুক না কেন, যতই অসাম্প্রদায়িকতার বাণী শোনাক না কেন, তলে তলে তারা কিন্তু ঠিকই সাম্প্রদায়িক। এটা মুসলমানরা বুঝে না। বুঝলে, মুসলমানদের ভেতর এতো দলাদলি আর মতানৈক্য থাকতো না। সবাই এক থাকতো। ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করতো। হতো না অমুসলিমদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার।


সবধর্মেই কমবেশি উগ্র বা কট্টরপন্থী আছে। ধর্ম সম্পর্কে যারা খুব অল্প জানে এবং বেশি বাড়াবাড়ি করে মূলত তারাই উগ্র বা কট্টরপন্থী। আমি যতটুকু জানি, ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট ভাবে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ, ইসলাম শান্তির ধর্ম। পরোকালে মুক্তির ধর্ম। মহান আল্লাহ তায়ালার একমাত্র মনোনিত ধর্ম। আর এ ধর্ম অবলম্বীদের ওপর যারাই জুলুম নির্যাতন আর অত্যাচার করছে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের ধ্বংস করে দিয়েছেন। যার উদাহরণ দিতে বেশি দূর যাব না। বর্তমানে চীনের কথাই চিন্তা করুন।

কিছুদিন পূর্বে চীনে উইঘুর মুসলমানদের ওপর অমানবিক নির্যাতন আর অত্যাচার দেখেছে বিশ্ববাসি। এখন সেদেশে দেখছে করোনা ভাইরাস নামের মহামারি রোগ। এখন সেদেশে আজান আর নামাজের ওপর কোন বিধি নিষেধ নাই। সেখানে মুসলমানদের সংখ্যা এখন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুদের ২০১৫ সালে করা সেদেশের সর্বশেষ আদমশুমারি স্বরণ করিয়ে দিতে চাই। ২৬ আগষ্ট ২০১৫ তে বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের (২০১৫ এর আগে) গণনার (শুমারি) বিচারে দেখা যাচ্ছে মুসলিম বাদে সব ধর্মীয় জাতিসত্তার লোকসংখ্যা কমেছে। হিন্দুদের সংখ্যা বছরে ০.৭ শতাংশ কমেছে অপর দিকে মুসলমানদের সংখ্যা ০.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মুলমানদের ওপর জুলুম নির্যাতন যত আসবে মুসলমানেরা বিজয়ের দিকে তত এগিয়ে যাবে।

সোহাগ তানভীর সাকিব
গল্পকার
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২০ রাত ১০:০৫
৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×