পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে মসজিদে আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। মাহফিল শেষে তাবারক বিতরণ করা হবে। তাবারক বিতরণের বিষয়টা মসজিদের মাইকে ফলাও করে প্রচার করা হয় বেশ কয়েকবার।
আজকে মসজিদ ভর্তি মুসল্লি।
মসজিদের পাশে রান্নাবান্নার বিশাল কর্মযজ্ঞ। জলন্ত উনানে ফুটন্ত খিচুরির ঘ্রাণ মসজিদ আঙিনা ছাপিয়ে গিয়েছে। আলোচনা মাহফিলের আগরবাতির ঘ্রাণের চেয়ে খিচুরির ঘ্রাণ মুসল্লীদের বেশি আকৃষ্ট করছে বলে মনে হচ্ছে। কেউ কেউ উঁকি দিয়ে দেখছে রান্না কতদূর, শেষ হলো কিনা। তাইতো কে নবীর প্রেমে আর কে খিচুরির টানে মসজিদে এসেছে বুঝা যাচ্ছে না।
ইমাম সাহেব হুজুর রাসুলে পাক (সা.) এর জীবনী নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি কবে কোথায় কিভাবে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাঁর বংশ পরিচয় কি এসব বলেন। রাসুল (সা.) এর পিতার নাম, তার পিতা অর্থাৎ রাসুল (সা.) এর দাদার নাম, দাদার পিতার নাম এভাবে প্রায় বিশ জনের নাম বলেন।
আবার অনুরূপ ভাবে, রাসুল (সা.) এর মায়ের পিতা অর্থাৎ নানার নাম, নানার পিতার নাম এভাবে সিরিয়াল মোতাবেক আবার প্রায় পনের-বিশজনের নাম বলেন। কখনও কাঁদেন। কখনও হাসেন। মুসল্লীগণ কান পেতে শোনে। কখনও কাঁদে কখনও হাসে কখনও অবাক হয়। এই হাসি-কান্নার মধ্যে কে কয়জনের নাম মনে রাখতে পেরেছে জানি না।
তারপর রাসুল (সা.) কে তাঁর দাদা কেমন ভালোবাসতেন চাচা আবু তালেব কেমন ভালোবাসতেন বর্ণনা করেন। কিভাবে মক্কা হতে মদিনায় হিজরত করেছিলেন বর্ণনা করেন তবে কেন হিজরত করেছিলেন সেদিকে গেলেন না।
ইমাম সাহেব হুজুর বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর আগমন ও প্রিয়জনদের ভালোবাসা এই দুইয়ের মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখেন। আগমনের উদ্দেশ্য নিয়ে তেমন কিছু বলেন না। আলোচনার বাহিরে রাখেন রাসুল (সা.) এর দেখিয়ে দেওয়া রাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ইত্যাদি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। আড়াল করেছেন বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা ও জাহেলিয়াত যুগের সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে সাদৃশ্যগুলো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবণতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা-হাঙ্গামার মধ্যেও কি করে ইমাম সাহেব হুজুর তার ওয়াজে রাসুল (সা.) এর দেখিয়ে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ধারের কাছেও গেলেন না বুঝতে পারলাম না।
খিচুরি রান্না ও প্যাকেটিং শেষ হলে বিষয়টা ইমাম সাহেব হুজুর ও পাশে বসে থাকা মসজিদ কমিটির সভাপতি সাহেবকে অবগত করা হয়। সুনিশ্চিত ভাবে অবগত হয়ে সভাপতি সাহেব বলেন, হুজুর ওদিকে সবকিছু রেডি। এখন আখেরি মোনাজাত করতে পারেন।
সভাপতি সাহেবের নির্দেশ মোতাবেক আখেরি মোনাজাত করেন ইমাম সাহেব হুজুর।
মোনাজাত শেষে খিচুরির প্যাকেট হাতে মুসল্লীরা নিজ নিজ বাড়ি ফেরে। তরুণেরা কেউ কেউ খিচুরির প্যাকেটসহ সেলফি তুলে ফেসবুকে দেয়।
এভাবে আমাদের একটি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হয়।
-সোহাগ তানভীর
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৩:১৬