somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওরা এখন বেপরোয়া!

৩০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



স্কুলে বার্ষিক পরীক্ষায় নকল করছে এক ছাত্র। দায়িত্বরত শিক্ষক বিষয়টা দেখতে পেয়ে নকল করার অপরাধে সেই ছাত্রকে পরীক্ষার হল থেকে বের দেন। নকল করার অপরাধে শাস্তি এতটুকুই। পরীক্ষা বাতিল করেন না। শিক্ষক ভেবেছিলেন, এতে ছেলেটির কিছুটা হলেও শিক্ষা হবে। পরবর্তী দিন হতে পরীক্ষার হলে আর এমনটি করবে না।
শিক্ষকের ভাবনা ছিল শিক্ষা কেন্দ্রিক ওদিকে ছেলেটির ভাবনা ছিল অন্য। চাচা ইউপি সদস্য তাছাড়া একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের ইউপি ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। তার ভাসতেকে পরীক্ষার হল থেকে বের করে দিয়েছে। এর চেয়ে অপমান জনক আর কি হতে পারে!
ঘটনা কানে যাওয়া মাত্রই ছেলেটির মেম্বর চাচা স্কুলে আসে। সকল শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীর সামনে অভিযুক্ত শিক্ষককে সতর্ক করে। ভবিষ্যতে তার ভাসতের সাথে এমনটি যেন আর করা না হয়।
বাপ ও চাচাদের মত ছেলেটিও এসএসসির গন্ডি পেরোতে পারেনি। এখন সে মোটরবাইক নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে। শুনলাম, আড়ালে আবডালে গাঁজাও সেবক করে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের মিছিল বা সভা হলে চাচাকে সমর্থন দিতে বন্ধু বা দলবল নিয়ে উপস্থিত হয়। চাচার নামে স্লোগান দেয়। ওদের মত পাওয়ার গ্রামে আর কারও নাই। যখন যা খুশি করতে পারে। অন্যের গাছের ডাব পেরে খাওয়া। ইচ্ছা হলেই অন্যের পুকুরে ছিঁপ ফেলে মাছ ধরে বন্ধুদের নিয়ে পিকনিক করা। এসব যেন কোনো অপরাধের মধ্যে না। কারণ কেউ কিছু বলে না। আর বলবেই বা কেন! বিপদে পড়লে তো ওদের কাছেই যেতে হয়। গ্রামে কোনো বিবাদ হলে ওরাই তো মধ্যস্থততা করে। এতে যেমন মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে তেমনি মানুষের ভালোবাসা। কারো পুকুরে ছিঁপ ফেললে কিছু না বলা মানে সেইসব ভালোবাসার বর্হিপ্রকাশ। এনিয়ে কত গর্ব! কত অহমিকা! যেমন গর্ব নিজেদেরকে গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবার ভেবে। এসএসসির গন্ডি পেরোতে পারে নি তাতে কি!
উল্লেখিত ঘটনাটি বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা স্কুলের চিত্র বললে ভুল হবে বলে মনে হয় না।
পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায় শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার খবর। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় হতে বিষয়টা এখন স্কুল পর্যায়েও চলে গেছে। অথচ বিগত দশ-বারো বছর আগেও স্কুল পর্যায়ের ছাত্রছাত্রীদের মনের মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানের জায়গায় থাকতো তাদের শিক্ষকেরা। রাস্তা দিয়ে শিক্ষক হেঁটে চলেছেন। ছাত্র সাইকেল নিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন সামনে শিক্ষক। কি করে শিক্ষকের আগে যাবে! শিক্ষকের সম্মানের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে। কিছুতেই সাইকেল চালাতে পারে না। সাইকেল থেকে নেমে শিক্ষকের পিছু পিছু হাঁটে। কিছু সময় পর শিক্ষক পেছনে ফিরে দেখেন তার কোনো এক ছাত্র সাইকেল থেকে নেমে পিছু পিছু হাঁটছে। মুচকি হাসি দিয়ে স্নেহমাখা কণ্ঠে জিজ্ঞেস, কি রে বাবা! তুই হাঁটছিস ক্যা?
- না, স্যার এমনি।
- যাও। তুমি চলে যাও। আমি হেঁটে যাচ্ছি বলে সাইকেল থেকে নেমে তোমাকেও হেঁটে যেতে হবে এটা কেমন কথা! তুমি চলে যাও বাবা।
- না, স্যার। আপনি পেছনে ওঠেন।
- তুই পারবি আমাকে নিয়ে সাইকেল চালাতে?
- পারবো স্যার।
- না, বাবা না। তোমার কষ্ট হবে। তুমি যাও বাবা আমি হেঁটেই যাই।
এখন শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে এই সম্পর্ক বিরল। এখন শিক্ষক ও ছাত্রের মধ্যে কিছুটা সম্পর্ক থাকলেও সেটা রাজনৈতিক মতাদর্শ বিবেচনায় গড়ে ওঠা সম্পর্ক।
নোংরা রাজনীতির কুপ্রভাব স্কুল পর্যায়ের কিশোরদের মাথা নষ্ট করে ফেলেছে। এখন কিশোর গ্যাংয়ের কথা শোনা যায়। কিশোরেরা ইভটিজিং, মাদক সেবন এমনকি মানুষ খুনের মতো অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। মূল্যবোধ হারিয়ে গেছে অনেক আগেই ধৈর্য্য বলে কিছু নাই ওদের। ওরা এখন বেপরোয়া।পারিবারিক ক্ষমতার দাপটে কেউ বেপরোয়া কেউ রাজনৈতিক নেতার সাপোর্টে বেপরোয়া কেউ বা সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হতে বেপরোয়া।
এখন ছেলে মেয়ে মানুষ করা বড়ই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবকেরা তাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে বড়ই চিন্তিত। না জানি খারাপ ছেলেদের সাথে মিশে নষ্ট হয়ে যায় কিনা! না জানি মেয়েটি স্কুল জীবনে কোনো বখাটে ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কিনা! এসব চিন্তা এখন প্রতিটা মধ্যবিত্ত সম্ভ্রান্ত অভিভাবকের।


সোহাগ তানভীর
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৪৭
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×