নতুন প্রজন্ম নিয়ে বেশ অনেকদিন থেকেই হৈচৈ চলছে আমাদের দেশে.......বিশ্বজোড়া 'পরিবর্তনের হাওয়া' আজকের তরুনদের গুরুত্ত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে আরও......ওবামার 'চেঞ্জ উই নিড' আর 'চেঞ্জ উই ক্যান'-এরট হাতিয়ার বলা যায় তরুনদেরই। আমাদের গত নির্বাচনী ফলাফলের বিশ্লেযণে বলা হচ্ছে প্রথমবার ভোটার হওয়া তরুনদের ভোটেই নির্বাচিত হয়েছে বর্তমান সরকার........
আবার পাশাপাশি তরুনদের নিয়ে নেতিবাচক ধারনারও কমতি......... বিশেষ করে শিক্ষাঙ্গনের অস্থির পরিবেশ, মোবাইল/ইন্টারনেটসহ অন্যান্য প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের অপব্যবহার বা মাদক ইত্যাদির বর্তমান অবস্থার কারনে এই তরুনসমাজ নিয়ে অনেকেই ভ্রু কুঁচকিয়ে থাকেন।
এমন পরিস্থিতিতে সপ্তাহ দুয়েক আগে সৈয়দ আবুল মকসুদের একটি লেখা পড়ার প্রতিক্রিয়াতেই আমার এ লেখার সূত্রপাত.........তিনি বলছেনঃ
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
নতুন প্রজন্ম নিয়ে আমাদের অনেক মন্ত্রী, রাজনীতিক ও লেখক ভয়াবহ আশাবাদী। নতুন প্রজন্ম কথাটি এমনভাবে ব্যবহূত হচ্ছে, মনে হচ্ছে, বাঙালি জাতির আর যেন কোনো প্রজন্ম ছিল না।..............
দুর্ভাগ্যবশত আমার অবস্থান তাদের বিপরীতে। আমি পরম হতাশাবাদী। নতুন প্রজন্মকে ফুলিয়ে গদগদভাবে লিখতে পারি না বলে নিজের ওপরই রাগ হয়। স্বার্থপরের মতো আমি আমার নিজের প্রজন্ম ও তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম দিয়ে গর্বিত। ..................দুই হাতে দুই কানে সেলফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হতে গিয়ে যে প্রজন্মের যুবক-যুবতী গাড়ির ধাক্কা খায়, সেই প্রজন্মকে নিয়ে রঙিন স্বপ্ন দেখা আমার মতো ফোনহীন ও প্রেমহীন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। আমাদের প্রজন্মের মানুষেরও হূদয় ছিল। তারাও প্রেম করেছে। ভালোবাসার ইতিবাচক সাড়া পেলেও প্রেয়সীকে ফুল দিয়েছে, প্রত্যাখ্যাত হলেও একটি গোলাপ ও একটি চিরকুট দিয়ে শরিফ মিয়ার দোকানের পাশের বাগানে ঝিম মেরে বসে থেকেছে। অথবা লাইব্রেরিতে গিয়ে যাযাবরের দৃষ্টিপাত সেলফ থেকে নিয়ে পাতা উল্টে বারবার আবৃত্তি করেছে: ‘মিনি সাহেব, আমি ইডিয়টই বটে, আমি উপহাসকে মনে করি প্রেম, খেলাকে ভেবেছি সত্য।... অথবা যেদিন বজ্রপাতের মতো শুনেছে, ‘তুমি আর আমার সাথে মেলামেশা করো না, আব্বা-আম্মা পছন্দ করেন না, ছোট চাচাও খুব রাগী। আসলে মেয়েটি নিজেই ওকে বাতিল করেছে। এবং বিয়েও ঠিক হয়েছে নীলফামারীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের এক সুদর্শন সাবডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে। সেকালে তারা এ ধরনের বজ্রাঘাতে আহত হয়ে সোজা চলে যেত গুলিস্তান বা নিশাত সিনেমা হলে। এক সপ্তাহে এগারবার দেখেছে দ্বীপ জ্বেলে যাই, মেঘে ঢাকা তারা অথবা হারানো সুর।
যে প্রজন্ম সহপাঠীকে প্রেম নিবেদন ব্যর্থ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখে এসিড ছুড়ে দেয়, সে প্রজন্মের ভবিষ্যত্ নিয়ে তাদের স্নেহপ্রবণ শিক্ষকেরা আশাবাদী হতে পারেন, কিন্তু আমার মতো চিরকালের ছাত্র পারে না। যে প্রজন্ম পরীক্ষার তারিখ পছন্দমতো পেছানোর জন্য শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলে, সে প্রজন্ম নিয়ে ‘ভীষণ আশাবাদী’ কীভাবে হই? ভর্তি ফি কমানোর জন্য টিভি ক্যামেরার সামনে উপাচার্যের মুখের কাছে জুতা নাচায় যে প্রজন্মের মানবসন্তান সে প্রজন্মকে প্রশংসা করি কীভাবে?
কোনো মিলনায়তনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে, বিদ্যুৎ চলে যাওয়া মাত্র ঝলসে উঠল প্রজন্মের পুরুষত্ব্ব। সহপাঠী বা পাড়ার মেয়েদের টান দিয়ে কামিজ ছিঁড়ে হায়েনার মতো গায়ে হাত দেয় যে প্রজন্ম, সে প্রজন্মের ২০২১ সালে সোনার বাংলা গড়ার সময় কোথায়? সেই প্রজন্ম নিয়ে প্রাচীনকালের সুফিদের মতো এত ‘স্বপ্ন’ দেখা কেন? যে প্রজন্ম সিট দখল করতে গিয়ে সহপাঠীর মাথা ফাটায় বা হাড্ডি গুঁড়া করে, টেন্ডারের বাক্স মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে নেতার বাড়িতে চলে যায়, ভর্তি-বাণিজ্যে কোটিপতি হয়, সে প্রজন্ম নিয়ে কি স্বপ্ন দেখা সম্ভব?
>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>
যারা পুরো লেখাটা পড়তে চান......
Click This Link
দুর্ভাগ্যবশত আমি নিজেও আজকের নতুন প্রজন্মের একজন। অনেক ব্যাপারেই নিয়ত হতাশা গ্রাস করে যায় আমাকে........অবশ্যই যারা এমনটা করছেন তারা আমাদের প্রজন্মের ক্ষুদ্র অংশই.........কিন্তু এরপরই হতাশাটা বেরিয়ে আসে সৈয়দ আবুল মকসুদের মতোন করেই, "আমি জানি, প্রজন্মের সবাই এসিড ছোড়ে না, নেশাও করে না, মেয়েদের উত্ত্যক্তও করে না, পাড়ার দোকানে চা-মিষ্টি খেয়ে পয়সা না দিয়ে চলে যায় না, টেন্ডারবাজিও করে না। ওসব শতকরা পাঁচজন করতে পারে। কিন্তু কষ্টটা ওখানে যে, দলবদ্ধ প্রতিরোধ নেই কেন।"
আসলেই তো, কোন সংঘবদ্ধ প্রতিরোধ কি গড়ে উঠছে আদৌ?? আমরা কি পেরেছি ঘৃণার আগুনটাকে এই অপশক্তির উপরে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে??? নাকি উল্টো আমরাই অভিযোজিত হয়ে আজকে ক্রমেই অধঃপাতের দিকে এগিয়ে চলেছি?????
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ বিকাল ৪:২৮