somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মৃত্যুশয্যায় বৃদ্ধা মা, পাশে নেই বিসিএস ক্যাডার-বিত্তবান সন্তানেরা!

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কি নিষ্ঠুরতা! সংবাদ দেখে হতবাক আমি!

ফেনীর বৃদ্ধ এক মা। নাম মৃদুলা সাহা। বয়স ৮০ বছর। সারাটা জনম সংসার সংসার করে জীবন কাটিয়ে দিলেন। ছেলে মেয়েদের মানুষ করলেন। মেধাবী সন্তানদের জননী। তারা মানুষ হতে হতে অনেক বড় মানুষ হয়ে গেছে এখন।

এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার, আরো দুই ছেলে বাবার রেখে যাওয়া চালের আড়তের মালিক, মেয়েরা উচ্চশিক্ষিত হয়েছে, স্বামীর সংসার করছে। তাদের এই সুখের দিনে, সুখের জীবনে কোথাও নেই মা।

ফেনীর মধুপুরে একটা পরিত্যক্ত বাড়ি। সেই বাড়িতে গত চার বছর পরিত্যক্ত কক্ষে একা থাকেন বৃদ্ধ এই মা, নাম মৃদুলা সাহা। শারীরিক অসুখের তো চিকিৎসা হয়, কিন্তু মনের অসুখের চিকিৎসা কে করবে? বৃদ্ধ এই নারীর সাথে দীর্ঘদিন তার কোনো আপনজনের দেখা নাই। স্বামী হরিপদ সাহাও মারা গেছেন সেই কবে, ১৯৮৩ সালে। তারপর সংসারের হাল টেনেছেন নিজে, একা। আর কত দিন? বাবার রেখে যাওয়া চালের আড়ত নিয়ে ব্যস্ত দুই ছেলে বাপ্পি সাহা, বিপুল সাহা। ফেনী শহরে ব্যবসা করে তারা বেশ ব্যস্ত। শহর থেকে মধুপুরে আসার সময়টুকু মেলে না তাদের। এত ব্যস্ততা, এত ব্যস্ততা- সেখানে মায়ের কি একটুও ঠাই হয় না?

দুই মেয়ে শর্বরী সাহা, সুমি সাহা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বেরিয়েছেন। এখন ঢাকায় স্বামী সংসার নিয়ে ব্যস্ততায় কাটছে তাদেরও দিন। বিয়ে হয়ে গেলে কি হবে, কত মেয়েরা মায়ের বাড়ির যাওয়ার জন্য সবসময় কি ভীষণ ছটফট করে। আমার নিজের আম্মাকে অনেক সময় দেখেছি নানু বাড়ি যাওয়ার জন্য কত দুপুরে তার মন খারাপ হতো।

চিঠি লিখতেন আর কাঁদতেন। মৃদুলা সাহার মেয়েদের কি হলো জানি না। সময়টা কি এতটাই যান্ত্রিক হয়ে গেছে যে, মায়ের খোঁজ নেওয়ারও একটু সময় মেলেনি তাদের? মেয়েদের তো সামাজিক বাস্তবতার কারণেই আরেকটা ঘরে যেতে হয়, কিন্তু যাদের ঘরের সাথে যোগাযোগ থাকার কথা সেই সন্তানরাও কেন মা বিমুখ হয়ে গেল?

মৃদুলা সাহার এক পুত্র বিসিএস ক্যাডার। সেই ছেলেটির নাম সুশান্ত সাহা। তিনি কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক। সন্তানের সাফল্যে বাবা মায়ের চেয়ে বেশি গর্ব আর কে করে? সন্তানের সাফল্য বাবা মায়ের চেয়ে কে বেশি আর কামনা করে?

বৃদ্ধ মা মৃদুলা সাহাও হয়ত ভীষণ গর্ব করেন, তার ছেলেমেয়েরা এখন প্রতিষ্ঠিত বলে, তার মধ্যে আবার এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার। মা খুশি না হয়ে পারেনই না। কিন্তু, এই বৃদ্ধার মনে ক্ষত তৈরি হয় না, যখন দেখেন দিনের পর দিন চাতক পাখির মতো প্রিয় সন্তানের মুখগুলো দেখবার আশায় তিনি অপেক্ষায় থাকেন, কিন্তু তারা কেউ আর আসে না? তারা আজ অনেক বড়, অনেক প্রতিষ্ঠিত, অনেক ব্যস্ত। মাকে দেখার মতো খানিক অবসরও নেই তাদের।

একা একা থাকতে থাকতে জগত সংসার থেকে অপাংক্তেয় হয়ে গেছেন যেন বৃদ্ধা মা৷ গতকাল তার সাড়া শব্দ একেবারে না পাওয়া যাওয়ায় প্রতিবেশীরা ভেবেছে, বৃদ্ধা বুঝি আর নেই। মরে গেছে। হয়ত এমন একাকী মৃত্যুরই প্রহর গুনছিলেন তিনি।

ঘরের ভেতর থেকে কোনো সাড়া নেই। প্রতিবেশীরা পুলিশকে খবর জানায়। পুলিশ এসে বন্ধ দরজা ভেঙ্গে বৃদ্ধাকে জীবিত পায় তখনো। সেখান থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় জেলা সদর হাসপাতালে।

সিভিল সার্জন শাহরিয়ার কবির বলেন, “উনি বেশ অসুস্থ। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের যতটুকু দেয়ার সব দিচ্ছি। বৃদ্ধা মা ভবিষ্যতে স্ট্রোকসহ বিভিন্ন রোগে ভুগতে পারে। তাকে অবজারবেশনে রাখা হয়েছে।”

হয়তো এই বয়সে একটু কাছের মানুষদের সান্নিধ্য পেলে মানসিক ধকলটা কেটে যেত বৃদ্ধার। মনের ভার জমতে জমতে এখন মনের যে অসুখ হয়ে গেছে, সেটা সারাবে কোন চিকিৎসক?

বৃদ্ধার প্রতি তার সন্তানদের এই অমানবিক আচরণে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। তারা দেখেছে, দিনের পর দিন বৃদ্ধা মৃদুলা সাহা কিভাবে একাকী দিন গুজরান করে গেছেন। স্বামীকে হারিয়েছেন, ছেলেমেয়ে যেন থেকেও নেই, এমন নিঃসঙ্গ জীবন বয়ে বেড়ানো খুবই কষ্টের৷ প্রতিষ্ঠিত হলে কি শিকড়কে ভুলে যেতে হয়?

মাকে ভুলে যেতে হয়? বিসিএস ক্যাডার হওয়াটা আজকালকার দিনে অনেক বড় সাফল্য, কিন্তু এমন সাফল্য যদি আপনজনকে ভুলিয়ে দেয় সেটা কি সাফল্য থাকে আর নাকি সেটা এক অভিশাপ? এমন ‘বিসিএস ক্যাডার’ পুত্র লইয়া বৃদ্ধ মা কি করিবে?


তথ্যসূত্র:
১)মায়ের মৃত্যুর খবরেও দেখতে যায়নি ৫ সন্তানের কেউ!
২)ছেলেরা বিসিএস ক্যাডার-ব্যবসায়ী,অযত্ন অবহেলায় মরছে মা!
৩)মৃত্যুশয্যায় বৃদ্ধা মা, পাশে নেই বিসিএস ক্যাডার-বিত্তবান সন্তানেরা
৪) বিসিএস ক্যাডার ছেলের মায়ের করুণ দশা

সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:২১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×