বুকের মধ্যে কত অভিমান, ক্ষোধ, দুঃখ-কষ্ট, ভালোবাসাহীনতা নিয়েও সংসারগুলোতে হাল ধরে থাকে মানুষ । বিশেষত যখন সন্তান হয় তখন সে নিজের সুখের কথা আর বিকল্প চিন্তা করতে পারেনা । বিশেষত এইটা নারীরা(যাঁরা মা হয়ে যান) বেশী সাফার করে যান । পুরুষরাও সাফার করেন, যাঁর ফলে অন্য নারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন অথবা স্ত্রী-সন্তান কারোর কোনো ধার ধারেননা ।
একজনের মনে কেউ যখন বসে যায় তখন সেটাকে সরানোর সাধ্য ‘মৃত্যু’ ছাড়া আর বোধহয় কারোর হাতেই সেই শক্তি থাকেনা ।
বিয়ে করলে সামাজিক-রাষ্ট্রীয়-ধর্মীয় একটা রীতি পালন হয় ঠিকই । কিন্তু যে মানুষটাকে বিয়ে করা হয় তাকে যদি অন্তরে ধারণ-ই না করা যায় তবে সেই রীতি-নীতি থেকে বের হয়ে আসাই উত্তম । কারণ এতে পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় । যেটা জেনারেশন বাই জেনারেশন সাফার করে!
অনর্থক সম্পর্কে জড়ানো কখনও সুফল বয়ে আনেনা । হতবুদ্ধিপ্রবণ কিংবা যৌনপ্রবণ হয়ে হুটহাট সিদ্ধান্তগুলো হয় আত্নঘাতী । ডেকে আনে মানসিক মৃত্যু । একটা মানুষের যখন মানসিক মৃত্যু ঘটে যায়, তখন শারিরীক মৃত্যুর ব্যাপারে সে আর পরোয়া করেনা । তাঁর কাছে পৃথিবীর সমস্তকিছুকে মিথ্যা মনে হয় ।
একটা মানুষের হাসির জন্য হাজার বছর বেঁচে থাকা যায় । আবার কারোর চোখে অশ্রু দেখলে এক নিমিষেই জীবনকে শেষ করে ফেলা যায় । নিজের জন্য, প্রিয়জনের জন্য একটু সুখ-ই জীবনকে অনেকদূর টেনে নিয়ে যায় । বেঁচে থাকবার আশা-ভরসা-সাহস জোগায়।
পৃথিবীর কাছে নিজেকে মেনে না নেওয়ার মতো মনোকষ্ট আর হয়না । মানুষ কি আর এমনেই সুইসাইড করে রে ভাই । সবাই তো স্বাভাবিক মৃত্যু-ই কামনা করে । পরিস্থিতি বাধ্য করে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে ।
একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি...
গতকাল আতিফ আহমেদ নিলয় নামের একটা ছেলে আত্নহত্যা করেছে গলায় রসি ঝুলিয়ে । আমার ভাগ্নে এবং ফ্রেন্ডলিস্টের এক ছোটবোন দেখি পোস্টও করেছে সেই সম্পর্কে । ছেলেটা তরুণ গায়ক, “কার বাসরে ঘুমাও বন্ধু, কার জন্য বউ সাজো” গানটা তাঁরই । অনেকদিন আগে গানটা শুনেছিলাম । সেভাবে পরিচয় জানতামনা ।
অথচ তাঁর মৃত্যুর পর তাকে জড়িয়ে তাঁর স্ত্রীর কান্নার ভিডিওটাও বেশ ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় । অথচ সেই ছেলেটার মনের কথাগুলো কেউ শুনতে চায়নি হয়তো কখনও, বুঝতে চায়নি ।
গতকাল প্রথম আলো একটা নিউজ করেছে যেটাতে হাসিনা বেগম নামের একজন নারী বলেছেন, “আল্লাহর ধারে সোময় কই মোগো দুইজনকে একলগে নিও । নাইলে তো দ্যাহনের কেউ থাকপেনা ।” কি সরল বাক্য দেখেছেন! একজনের প্রতি অন্যজনের কত মমত্ব, প্রেম, ভালোবাসা । যেগুলোই মানুষকে টিকিয়ে রাখে পৃথিবীতে ।
‘ভালোবাসাহীনতা’ মানুষকে নিষ্ঠুর, বর্বর, আত্নঘাতী, নিকৃষ্ট অমানুষে পরিণত করে । ভালোবাসাটা না থাকলে অন্যজনের যদি বোমা লেগে হাত-পা উড়ে যায় তবুও কোনো যায় আসেনা । জাস্ট ফরমাল দায়িত্বটা পালন করে, যেমন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া, চিকিৎসার খরচ বহন করা । কিন্তু সেই অসুস্থ মানুষটার মাথায় বুলিয়ে দেয়া, কপালে/হাতে চুমু খাওয়া, ভরসা দেয়া তাঁর কাছে অপ্রয়োজনীয় এবং অনর্থক বলে মনে হয় ।
আমার অসুস্থতায় মা যখন মাথায় পানি ঢেলে দেন, কিংবা বুকে সরিষার তেল গরম করে লাগিয়ে দেন তখন নিজের কাছে নিরানব্বই ভাগ সুস্থ মনেহয় । মনেহয় মা সারাদিন-রাত ধরে মাথায় পানি দিয়ে দিক, বুকে তেল মালিশ করে দিক; আমার আর কোনো মেডিসিনের দরকার হবেনা । যখন কাজের শত ব্যস্ততার ফাঁকে এসে ঘন ঘন জিঙ্গাসা করেন, অসুখের কি অবস্থা তখন মনেহয় এইতো ভরসার মানুষ, ভালোবাসার মানুষ ।
পৃথিবীতে মানুষকে টিকিয়ে রাখবার জন্য অপর মানুষের দরকার হয় যিনি অপর মানুষটাকে ভালো জানেন, বোঝেন । তাঁর মর্মস্থলে হাত রাখতে জানেন । সবমিলিয়েই তৈরি হয় ভালোবাসা । অভিপ্রায় তৈরি হয় হাজার বছর বেঁচে থাকবার....
সাব্বির আহমেদ সাকিল
১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | বৃহস্পতিবার | ২৬ মে ২০২২ | নেত্রকোণা
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০২২ রাত ১:২২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



