পৃথিবীতে মানুষের গভীর ভাবনা, লেখা, চিত্র, কর্মগুলোকে যখন দেখি তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয় । মনেহয় আমি আমার ১৪০০ সিসির মস্তিষ্ককে সঠিকভাবে ব্যবহার, বিশ্লেষণ করতে পারছিনা । হতাশ হই!
আমি ছোটবেলা থেকেই ভীষণ জ্ঞানপিপাসু মানুষ । যেখানেই আমার ধারণার বাহিরের জ্ঞান, আলাদাকিছু, ব্যতিক্রমকিছু পাবো বলে মনেহয় তখন সেখানেই ছুঁটে যেতে চেষ্টা করি । নানানরকম আলাপ-আলোচনা, মন্তব্য, মতবিরোধে নিজেকে শাণিত করবার চেষ্টা করি । মনে ভেতরে নানান প্রশ্ন তৈরি করি ।
সহস্র বছর ধরে পৃথিবীতে কতকিছু ঘটে গেছে । তাঁর কয়টা তথ্য জানতে পারলাম আমরা । মানুষ মহাকাশও চষে বেড়ালো । কিভাবে সেই যান তৈরি হলো, কতজন শ্রম ও মেধা বিনিয়োগ করলো, কতবারে সফল হলো সেসবের ক’টা তথ্য খুঁজেছি বা পেয়েছি আমরা ।
এইতো বছর দু'য়েক আগে 'ব্লু হোয়েল গেমস' এঁর কথা মিডিয়াপাড়াতে আসলো । মানুষ জানলো কিভাবে গেমসের মাধ্যমে মানুষের জীবন নেয়া যায় । বিটকয়েনের মাধ্যমে কিভাবে অস্ত্র কেনা যায়, মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কিনতে পাওয়া যায়, কিভাবে খু.ন করিয়ে নেয়া যায় । বছরখানেক আগে এলএসডি মাদ.কের কথাও মিডিয়াতে বেশ হুলস্থুল করে প্রচার হলো ।
ডার্কওয়েবের কথা বললে ক'জনইবা সে সম্পর্কে উত্তর দিতে পারবে । অথচ ইন্টারনেটের বিশাল একটা ভান্ডার সেখানে গচ্ছিত থাকে । যদিও এসবকে এভাবে মিডিয়াতে বা জনসাধারণের সামনে আনার পক্ষে আমি নই । কিছু জ্ঞান, কিছু বিষয় নির্দিষ্ট কিছু গণ্ডির মধ্যেই থাকা উচিত ।
পৃথিবীতে শুধু কি কবিতাতেই পরাবাস্তববাদী চিন্তার প্রবেশ ঘটেছে, মানুষের জীবনে ঘটেনি । অবশ্যই ঘটেছে । মানুষের চিন্তা-চেতনাকে সেই পর্যায়েও নিজে যাওয়া হয়েছে যখন মানুষ অন্যের দ্বারা সম্মোহনের শিকার হয়েছে । সে অবস্থাতে সে কিছু করেছে না করেছে সে নিজেও পরবর্তী সময়ে বলতে পারেনি কখনও সে সময়টাতে কি ঘটে গেছে ।
অগ্রসরমান ট্রেনের মতো বিস্তৃত এই মহকালে কত নক্ষত্ররাজি ছুটে চলেছে কোটি কোটি বছর ধরে, কত কোটি ধ্বংস হয়ে গেছে কিংবা পৃথিবী কত কোটি বার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে কিংবা কতবার পূর্ণিমা ঘটে গেছে কে জেনেছে বা রেখেছে সে খবর । নক্ষত্র দেখে রাতের সময় বের করা, সূর্য দেখে দিনের সময় বের করবার ঘটনা তো এই সামান্য কিছু বছর আগেকারই ঘটনা ।
লোবসাং রাম্পার দি থার্ড আই কিংবা আলেকজান্ডার বেলায়েভের দি অ্যাম্ফিবিয়ান ম্যানের মতো খুব সাধারণ, যা সহজেই কিনতে পাওয়া যায় সে বইগুলোইবা ক'জন পড়েছে । পড়বার প্রয়োজনবোধ করেছে পৃথিবীর কিছু ব্যতিক্রমী চিন্তার বই, আলাদা কিছু শিক্ষার বই ।
পৃথিবীর এই দীর্ঘ রূপরেখায় সে নিজের মতো করে বদলেছে বা মানুষ বদলে নিয়েছে । সাক্ষী করে রেখে গেছে কিছু মানুষ, কিছু সভ্যতা, কিছু নদী, কিছু পাথর । সিন্ধু, মেসোপটেমীয় সভ্যতা কিভাবে গড়ে উঠেছিল, ধ্বংস হয়েছিল । কিংবা পুরো পৃথিবীর শাসনকর্তা উসমান(আ.) কিংবা নমরুদের রাজত্ব কিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ।
আমরা এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে মানুষের কোনো সুখ-ই সুখ নয়, গভীর কোনো দুঃখ দুঃখ নয়, কান্নার শব্দ আসলে কান্না নয় । সবকিছুতেই তাচ্ছিল্যতা, ছুঁড়ে ফেলা দেবার মতো মনোভাব । সবই যেন মেকি, মিথ্যা । একারণেই বারবার নিজেকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে চাই, আসলে আমরা যে প্রজন্মে বেড়ে উঠছি সেটার কি পুরোটাই মিথ্যা? প্রাচীন কোনো মাদকে বুঁদ হয়ে কি প্রজন্মের বয়স বাড়ছে । নাকি স্বয়ংক্রিয় কোনো রোবোটিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সিস্টেমে ঢুকে পড়েছি...
সাব্বির আহমেদ সাকিল
১লা পৌষ ১৪২৯ বঙ্গাব্দ, শীতকাল | শুক্রবার | ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ ইং | আপন নীড়, বগুড়া
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১১:২২