
সেই কবে খেলার মাঠ থেকে উঠে এসেছি । পাড়ার অনাবাদি ভিটাতে, ইটভাটার মাঠে, স্কুলের মাঠে কত স্মৃতি, কত ঝগড়াবিবাদ, কত খুনসুটি । মাঝেমধ্যে বিকেলের দিকে যখন কোনো গন্তব্যে ফিরি তখন দেখি ছেলেরা মাঠে খেলছে । আমি ওঁদের দেখি আর মনে মনে বলি, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় কাটাচ্ছ তোমরা ।
স্কুল জীবনে যতসামান্য টাকায় টিফিনটা করা হয়ে যেত । এক সেট শার্ট-প্যান্টে পড়ে দিব্যি পুরো সপ্তাহ চলে যেত । মাঝেমধ্যে বেশী ময়লা হয়ে গেলে বিকেলে ওই ড্রেস মা ধুয়ে, নীল দিয়ে শুকোতে দিতেন । পরদিন ওটা পড়েই সকালে কোচিং করা, স্কুল করা, স্কুল শেষে কোচিং করে বাড়ি ফেরা ।
স্কুল থেকে ফিরেই মাঠে ব্যাট-বল নিয়ে ভোঁ দৌঁড় । ফুটবলের মৌসুমে পায়ের অ্যাঙ্কলেট না থাকলেও কাটাকাটি, পায়ে বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি । গরমকালে লুকোচুরি, পিট্টুপিট্টু, রুটিচোর, মার্বেল, এলোন্টি বেলোন্টি, ডাংগুলি, বউচি কত ধরনের খেলা । শীতকালে গাদল খেলা ।
সুপারি গাছের পাতা দিয়ে গাড়ি গাড়ি খেলা, খেজুরপাতা দিয়ে ঘূর্নি বানিয়ে বাতাসের দিকে ধরে থাকা, তিন চাকার বিয়ারিং-এ চড়া, বাঁশের কঞ্চি ভেঙ্গে সেটাকে হোন্ডার হাতল ভেবে দৌড়ানো, সাইকেলে টায়ারে শাটিয়ে প্রতিযোগিতা করা, শরতের মেঘে ঘুড়ি ওড়ানো ।
পকেটে টাকার অঙ্কটা কম ছিল, শার্ট, গেঞ্জি, লুঙ্গিটা পুরোনো ছিল কিন্তু ভরপুর আনন্দ ছিল । জীবন অনেক সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্যের ছিল । কোনো হতাশা, নিরাশা, ছলনার ভয় ছিলোনা, ছিলোনন কাউকে হারানোর ভয়, ভালো রেজাল্ট করা ব্যতীত পারিবারিক কোনো চাপ ছিলোনা ।
সাবলীল একটা জীবন ছিল তখন । সন্ধ্যাবেলা হারিকেনের আলোয় পড়তে বসা, রাত ৮টা বাজলেই পেট মোচড়ামুচড়ি করতে করতে মায়ের কাছে ভাত খাওয়ার আবদার । সকালে উঠে পড়তে বসা, পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে যাওয়া ।
কি দিন হারিয়ে ফেলেছি আহারে! সোনালী দিনগুলো আর ফিরে আসবেনা । আর কখনও মাঠে-মাঠে দৌড়ানো হবেনা । ওমন জীবন কেন দীর্ঘস্থায়ী হলোনা!
সাব্বির আহমেদ সাকিল
১২ আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, বর্ষাকাল | বুধবার | ২৬ জুন ২০২৪ ইং | ফেনী সদর
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২৪ রাত ১০:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



