somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ লোবান ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সাধারণ মানুষের হৃদস্পন্দন

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা সাহিত্যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে কজন লেখক বিভিন্ন আঙ্গিকে সাহিত্য রচনা করেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সৈয়দ শামসুল হক(১৯৩৫-২০১৬)।সাহিত্যিক অঙ্গনের বিভিন্ন দিকে পদচারণার জন্য তাকে সব্যসাচী লেখক বলা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে উপজীব্য করে যে উপন্যাস গুলো রচিত হয়েছে তার মধ্যে সৈয়দ শামসুল হকের "নিষিদ্ধ লোবান" উপন্যাসটি অন্যতম।এই উপন্যাসটি বিস্তৃত হয়েছে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে স্বজন হারানো এক নারীর আর্তিনাদ,আত্মপলব্ধি,সাহসিকতা,সংগ্রাম,বিচক্ষণতা কে আশ্রয় করে।এই উপন্যাসটিতে বিবৃত হয়েছে দুই-তিনদিনের কাহিনী এবং উপন্যাসটির মহিমান্বিত সম্মোহনে আমাদের আবদ্ধ করে রেখেছেন লেখক।উপন্যাসটির বিস্তার ও দৈর্ঘ খুব বেশী না হলেও উপন্যাসটির পরিধি অবশ্যই ক্ষুদ্র নয়।পুরো স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসের ভয়াবহতা এববগ বাঙ্গালীদের অদম্য মানসিকতা ও সংগ্রাম চেতনা যেন পরিস্ফুটিত হয়েছে বিলকিস চরিত্রের ঢাকা,ঢাকা-জলেশ্বরী যাত্রা এবং জলেশ্বরীতে তার প্রবাহিত সময়ের মাধ্যমে।



এই উপন্যাসের একদিকে যেমন স্বজন হারানো চরিত্রদের আত্মস্পৃহায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠে দাড়ানো দেখানো হয়েছে তেমনি দেখানো হয়েছে পাক হানাদার বাহিনীর গণ অত্যাচার,হত্যা,ধর্ষণ আবার অন্যদিকে দেখানো হয়েছে পাকিস্থানের সরকার আমাদের বাঙ্গালীদের ইতিহাস,ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে কিভাবে ধুলিষ্যাৎ করতে তৎপর হয়েছিল।এ উপন্যাসে আরো দেখানো হয়েছে কিভাবে পাকিস্থান তাদের মিলিটারি বাহিনী ও বিহারী লুটতরাজ দিয়ে ধর্মকে ঢাল হিসেবে এবং একই সাথে ধর্মকে মানুষের উর্ধ্বে নিয়ে গিয়ে পক্ষ বিপক্ষ দ্বৈরথ সৃষ্টি করে অরাজকতা সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছিল।

এ উপন্যাসে ইতিহাস এসেছে পরোক্ষ ভাবে।কোন দিন-ক্ষণ বা উল্লেখযোগ্য ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটিয়ে "নিষিদ্ধ লোবান" উপন্যাসকে কোন দলিল সম্পৃক্ত করার প্রয়াস দেখাননি লেখক বরং সেই ভয়াবহতা ও সংগ্রামী জাগরণ এর সময়কার পুরো বাংলাদেশের তথা বাঙ্গালীদের অবস্থা ও অবস্থানের হৃদয় স্পন্দন অঙ্কন করেছেন লেখক নির্দিষ্ট স্থান ও চরিত্রের মাধ্যমে।



শুধু মাত্র হত্যা,ধর্ষণ ও লুটপাটের মধ্যেই যে পাকিস্থানি বর্বরতা সীমাবদ্ধ ছিল না সেই চিত্র আমরা দেখতে পাই এ উপন্যাসে।বাঙ্গালীদের শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন এবং ব্যঙ্গাত্মকভাবে লাঞ্চিত করার বিষয়টি আমরা দেখতে পাই এ উপন্যাসে বিহারী ছোকরাদের আলেফ মোক্তারের মত বৃদ্ধকে কোমড়ে দড়ি বেধে এলাকাময় ঘোরানো বা বিলকিসের ছোড় ভাই খোকাকে হত্যার পরে তার মৃতদেহের উপর মূত্রত্যাগের মতো পৈশাচিক ঘটনায়।দেখা যায় ওইদিন জলেশ্বরীর অন্যান্য যুবক যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের মৃত দেহের উপর লাঞ্চনা মূলক কার্যকলাপ না করলেও খোকার মৃতদেহের উপরে করেছিল কারন খোকা গান গাইতে ভালোবাসত।সে রংপুর বেতারে গান গেয়েছে এবং জলেশ্বরীর এলাকাবাসীকে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শিখিয়েছে।স্বাধীনতা আন্দোলনে জলেশ্বরীতে প্রথমদিকের মিছিল মিটিং এ ছিল খোকার সরব উপস্থিতি।আর এই ধরনের সংস্কৃতি সচেতন প্রানচ্ছল তরুনেরা ছিল পাকিস্থানী বাহিনীর ক্রোধের কেন্দ্রবিন্দু।পাকিস্থানীরা বাঙালীদের ঐতিহ্য ও চেতনার মেরুদন্ড ভেঙে দিতে চেয়েছিল।অপরদিকে এই ভীতিজনক পরিস্থিতিকে প্রদীপ ওরফে সিরাজ এবং বিলকিস এর আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব দেশ তথা দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসায় উদ্ভাসিত সাহসী পদক্ষেপ।মিলিটারি বাহিনী কতৃক হত্যা করা গ্রামবাসীদের কবর দেয়ার জন্য ঝুকি নিয়ে পলায়ন,ধরা পড়ার পরও হার না মানার মানসিকতা এবং বিলকিসের শেষ মুহুর্তে সেনা প্রধান মেজরকে সাথে নিয়ে প্রদীপের চিতার আগুনে ঝাপিয়ে পড়ার মধ্যে যেন বাঙালী জাতির আত্মপ্রত্যয়ী এবং দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার পর ও মাথা চাড়া দিয়ে ওঠার মানসিকতা ফুটে উঠেছে।

পরিশেষে বলা যায়, "নিষদ্ধ লোবান" মুক্তিযুদ্ধের সময়কার অবস্থার প্রতিচ্ছবি।এই উপন্যাসটি পাঠ করলে পাঠকের মনে ৭১ সালের গ্রামবাংলা ও নগর উভয় স্থানের সাধারণ মানুষের ভয়ানক পরিস্থিতি,আত্মপ্রত্যয়,সাহসীকতা ও সংযমের চিত্র অঙ্কিত হয়ে যাবে।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:০৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×