তিল তিল করে রাষ্ট্র আজ উন্নতির শিখরের পানে এগিয়ে চলছে। দেশে উড়াল সড়ক নির্মাণ হচ্ছে, নির্মাণ হচ্ছে এক্সপ্রেস ওয়ে। তৈরি হচ্ছে -আসমান ছোঁয়া দালান, ফ্লাইওভার, নদীর তলদেশে নির্মাণ হচ্ছে টানেল। কয়েক বছরের মধ্যে দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন পদ্মা ব্রিজও নির্মাণ সম্পন্ন হবে।
এসব উন্নয়ন নিয়েই জনগণ উৎসবে মেতে আছে। যদি প্রশ্ন করি এই উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ কার জন্য? সবাই একবাক্যে উচ্চারণ করবে -এ উন্নয়ন দেশের ও দেশের মানুষের জন্য।
যাস্ট পদ্মা ব্রিজের কথা'ই না হয় বলি -হ্যা মানছি, পদ্মা ব্রিজ হলে দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের রাজধানীর সাথে যোগাযোগ সহজ হবে, দক্ষিণে অনেক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে যেখানে দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
আচ্ছা, মানুষের সহজ যোগাযোগ কিংবা ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি'ই কি পদ্মা ব্রিজের উদ্দ্যেশ্য?
না, কখনোই না! পদ্মা ব্রিজের মূল উদ্যেশ্যে হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন, যার মাধ্যমে মূলত পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা। কিন্তু পুঁজি গড়তে হলে শ্রমিক প্রয়োজন। সুতরাং, পুঁজিবাদীরা তাদের প্রয়োজনেই মানুষকে কাজে লাগাবে, মানুষের প্রয়োজনে নয়। এখানে বাইপ্রডাক্ট হিসেবে মানুষ তার প্রয়োজন মেটানোর সুযোগ পাবে। আর রাষ্ট্র মূলত এই বাইপ্রডাক্টটাকেই প্রচার করে জনগণকে আনন্দ দিয়ে থাকে, আর মাথামোটা জনগণও এটা নিয়ে উৎসবে মেতে থাকে।
আমি যে অবকাঠামো উন্নয়নের বিপক্ষে, ব্যাপারটি এমনও নয়। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, কোন উন্নয়নটা আগে দরকার মানুষের নাকি অবকাঠামো?
সত্যিই যদি মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন করা হতো, তাহলে --
*প্রতি বছর বর্ষায় শক্তিশালী বাঁধের অভাবে উত্তর বঙ্গের মানুষকে বানভাসি হতে হত না, কিংবা বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের জলে দক্ষিণের মানুষের সম্পদ ভেসে যেতো না। রাষ্ট্র চাইলেই মজবুত বাঁধ নির্মাণ করে মানুষের সম্পদ রক্ষা করতে পারতো!
*বর্ষা এলেই মানুষের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেত না, রাষ্ট্র চাইলেই কংক্রিট ব্লক দিয়ে শক্তিশালী করে নদীকে বেঁধে মানুষের বসতভিতা রক্ষা করতে পারতো!
*চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের মেঝেতে মানুষকে শুয়ে থাকতে হতো না। রাষ্ট্র চাইলেই মানুষের জন্য হসপিটালে পর্যাপ্ত বেডের ব্যাবস্থা করতে পারতো!
*একটু ছাদের অভাবে মানুষকে ফুটপাতে কিংবা স্টেশনে ঘুমাতে হতো না। রাষ্ট্রে চাইলেই তাদের মাথার উপরে ছাদ বসিয়ে দিতে পারতো।
আরে ভাই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ, নাগরিকের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত, কংক্রিট ব্লক দিয়ে নদীর পারকে শক্ত করে চেপে ধরা, এগুলা তো অনেক অর্থের ব্যাপার এই গরিব রাষ্ট্রের কি সেই সামর্থ্য আছে নাকি?
না এসব করার সামর্থ্য রাষ্ট্রের নাই, কিন্তু হাজার কোটি, লক্ষ কোটি খরচ করে মেগা প্রোজেক্ট করার সামর্থ্য ঠিকই আছে! এখন বলতে পারেন - এগুলো তো বৈদেশিক ঋণে করা হচ্ছে।
একজ্যাক্টলি, ঘরে খাবার কেনার টাকায় টানাটানি তো কি হয়েছে কোম্পানি যেহেতু লোনে ফ্রিজ দিচ্ছে তাহলে নিতে সমস্যা কি! কিন্তু এই লোন শোধ করতে গিয়ে যে ভবিষ্যতেও খাবার কেনায় টানাটানি থেকেই যাবে সেটা আর মাথায় থাকে না। রাষ্ট্রের অবস্থাটাও সেইম।
আসল কথা হচ্ছে, যেসব উন্নয়নে পুঁজিবাদের স্বার্থ নেই, ক্ষমতার পেছনে থাকা পুঁজিবাদীরা সেসব উন্নয়নে অর্থ-শ্রম-সময় কোনটাই নষ্ট করবে না। তারা তাদের প্রয়োজন মতোই রাষ্ট্রের উন্নয়ন করিয়ে নেবে।
জীবনভর শ্রমিকের রক্ত চুষে নেয়ার পর যখন তার প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে তখন ছুড়ে ফেলে দেবে!
যখন শ্রমিক তার বেতন না পেয়ে ক্ষুধার্ত পেটে রাজপথে নেমে খাবার চাইবে, রাষ্ট্র তখন তাদের ক্ষুধার্ত পেট বুলেট দিয়ে ভরিয়ে দেবে। আর শ্রমিকের শ্রম লুটে নেয়া পুঁজিবাদীদের নিরাপত্তা দেবে।
কারণ, এই পুঁজিপতিরাই রাজনীতির ঘাড়ে চেপে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে রেখেছে। আর বুর্জুয়া রাজনীতি মাথামোটা জনগণের ঘাড়ে চেপেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:৪৩