গতকাল সন্ধ্যায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে অরুন্ধতি রায়ের কথা শোনার কথা ছিল। তাঁকে দেখতে পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইন্ড অব দ্যা ডে অরুন্ধতীর অনুষ্টান আটকে দেওয়া হলো। কেবিআই’ অনুষ্ঠানটি শেষ মুহূর্তে পুলিশের (রাষ্ট্রের) হস্তক্ষেপে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আসলে বাংলাদেশ নামক রাস্ট্রে আপনাকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে— আপনি রাস্ট্রের একজন অতি নগন্য প্রজা মাত্র। আপনার স্বাধীনতা, মর্যাদা সবকিছু একান্তই রাজা-রানীর (সরকারের) ইচ্ছার অধীন। তার ইচ্ছাতে আপনি ডালকে ভাত বলবেন, এমনকি তার অনিচ্ছাতে আপনি সামাজিক সম্পর্ক ভেঙ্গে দেবেন আবার গড়বেন। এই গেল দেশের নাগরিক অধিকার। আর অরুন্ধতির ব্যাপারে তো কথা চলেনা। তিনি তো বিদেশিনী। অবশ্য তিনি বন্ধুরাস্ট্রের অনুগত এম্বেসেডরদের মত মোটিভেট করতে আসলে ভিন্ন কথা ছিল।
কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে নিবন্ধিত ও নির্দিষ্ট শ্রোতাদের সামনে অরুন্ধতী রায় কী বলতেন জানি না। তবে তিনি কী কী বলতে পারেন তা অনুমান ও সেই ভয় থেকেই সম্ভবত সরকার তার অনুষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ভালোই হলো, অরুন্ধতীকে নিজ থেকে কিছুই বলতে হলো না, অথচ তিনি যা যা বলতে পারতেন তা সরকার শুধু বলেই দিল না, প্রমাণও করল।
অরুন্ধতী রায় কে হজম করার পাকস্থলী কি হাসিনা সরকারের আছে? নেই। এটা শেখ হাসিনার এক জনমের অর্জনে কুলাবেনা।
তথাকথিত চেতনাবাদীরা কি এখনও অরুন্ধতী রায়ের সাথে পাকিস্তানী জেনোসাইডের কোনও ইতিহাস প্রক্রিয়াজাত করতে পারেন নাই? তবে কি এই কাজেও উনারা জাতিকে আশাহত করলেন?
অরুন্ধতীকে নিয়ে সরকার কিছু একটা করতে পারে এটা ধারনা করেছিলাম। তাঁকে নিয়ে খোদ ভারত সরকারই অস্বস্তিতে থাকে। তাছাড়া পাক-ভারত দ্বন্দ্ব নিয়েও বিস্ফোরক কিছু বলতে পারেন তাঁর পাবলিক স্পিচে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিখ্যাত এই লেখিকাকে জনপরিসরে বক্তব্য দিতে দেয়া হয়নি দেখে মনে হলো সরকার তার পথেই আছে। নাবালক গণতন্ত্রের দেশে সাবালক কর্মকাণ্ড আশা করে নতুন করে মনোকষ্ট নেওয়ার মানে হয়না।
ফেসবুকে কেউ একজন অরুন্ধতি রায়কে কথা বলতে না দেওয়ার ভাল দিকগুলো তুলে ধরেছিলেন। কার টাইমলাইনে পড়েছি মনে নাই। কিন্তু তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, এইসব মুক্ত মেধার মানুষেরা বাংলাদেশে এলে অনেকরকম ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। উনার ধারনাগুলো অনেকটা এরকম-
• বাংলাদেশের মানুষ সভ্যতার অধিকার, মুক্তচিন্তা, ও লিঙ্গ ইকুয়ালিটির ব্যাপারে আলোকিত হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
•
ধর্মানুভূতিতে বিশদ আঘাত লাগতে পারে তার কথায় বা আচরণে।
•
জানে জিগার বন্ধু হেফাজত "ইসলাম বিপন্ন" বলে চিৎকার শুরু করতে পারে ।
যদিও তাতে ওঁর মত নামী লেখকের কিছুই আসে যায়না।
•
ভারত বাংলাদেশের গোপন প্রেমের অগ্রগতি-অবনতির ভুলবাল(!) দিক নিয়ে কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করা হতে পারে।
একটা দেশ যখন একজন লেখককে ভয় পায়, তখন সেই দেশের শাসককুলের সার্বিক মানসিক দারিদ্র, চিন্তার অবনমন ও নৈতিক অধঃপতন সহজেই অনুমান করা যায়।
এই সিদ্ধান্তে সরকার বস্তুতপক্ষে বাংলাদেশের সাধারণ দেশবাসীকেই অপমানিত করল।