somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে জিনিসটা সুখ দিতে পারে, দুঃখ দিতে তার চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই

০৯ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.০
আজকে দুইটা গল্প শুনাবো। প্রথম গল্পটা শুনেছি। কার কাছ থেকে শুনেছি মনে নেই। একবার হিটলার লক্ষ্য করে দেখলেন, বাইরে ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি হচ্ছে। আর একটি মেয়ে ঘরের ভেতরে থেকে জানালার বাইরে বৃষ্টির মধ্যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। হাতে বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। বৃষ্টির সুখানুভূতিতে মেয়েটির চোখেমুখে আনন্দ লাফালাফি করছে। দৃশ্যটা হিটলারের মনে গেঁথে যায়। তিনি তখন বন্দীদের কাছ থেকে তথ্য উদ্ধারে বিভিন্ন কলাকৌশল ব্যবহার করছেন। নির্যাতনের নানারূপ পদ্ধতি পরীক্ষা করে দেখছেন। তবে এমন অনেক বন্দী আছে যাদের নির্যাতন করে মেরে ফেললেও মুখ খোলেনা। কারণ তাদের প্রশিক্ষণে এসব নির্যাতনের বিষয়টি প্রাকটিক্যালি শেখানো হয়। এ নিয়ে মহা ঝামেলায় ছিলেন হিটলার। তিনি নূতন কিছু পন্থা খুঁজছিলেন। এসময়ই তিনি ওই দৃশ্যটা দেখলেন। তার মনে হলো, যে জিনিসটা সুখ দিতে পারে, দুঃখ দেয়ার জন্য তার চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই। হাতে বৃষ্টির ফোঁটা নিয়ে সুখানুভূতিটাকে শাস্তি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইলেন তিনি।

একজন দাগী বন্দীকে তার সামনে নিয়ে আসা হলো। বন্দীর হাত টেবিলের ওপর রাখা হয়। এরপর ছাদের নিচ থেকে হাতের উপরে ছোট আকারে ফোঁটা ফোঁটা পানি ফেলার ব্যবস্থা করা হয়। তাও নির্ধারিত সময় অন্তর অন্তর। বিশ সেকেন্ড পর পর। হাত যাতে সরাতে না পারে সে ব্যবস্থাও করা হয়। বাইরে কাঁচের ওপাশে বসে তাকে লক্ষ্য করতে থাকেন হিটলার। এদিকে হাতে পানির ফোঁটা লেগে বন্দীর ভালো লাগতে শুরু করে। তার চোখে নিদ্রা এসে যায়। বড় জোর আধঘন্টা। এরপরেই তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অস্বস্তি লাগতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ছোট পানির ফোঁটা তার কাছে অসহ্য হয়ে ওঠে। এক একটা ফোঁটাকে তার গুলির চেয়েও ভয়াবহ মনে হতে থাকে। এক ফোঁটা পড়ার পর পরবর্তী বিশ সেকেন্ড তার কাছে আতংকের কারণ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে বন্দীর চোখ বিষ্ফোরিত হয়ে যায়। চিৎকার শুরু করে। যাকে মেরে ফেলার মতো নির্যাতন করেও কোন কিছু স্বীকার করানো যায়নি, সহজেই সে সবকিছু স্বীকার করে। সব তথ্য দিয়ে দেয়।
২.০
দ্বিতীয় গল্পটা আমি পড়েছি, নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে। হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় উপন্যাসের তালিকা করলে তার একটি হবে অপেক্ষা। এই উপন্যাসটা পড়েছিলাম ১৯৯৮ সালের দিকে। হুমায়ূন আহমেদের কোন বই পড়লে সাধারণত মনে থাকেনা। তবে এই গল্পটা মনে আছে। অসাধারণ। আগে গল্পটা বলে নেই। গল্পের শুরুতেই দেখা যায়, চাকরিজীবী স্বামী হাসানুজ্জামান ও পুত্র ইমনকে নিয়ে সুরাইয়ার সুখের সংসার। সেই সংসারে নতুন এক অতিথি আসছে। আনন্দের এ সংবাদটি দেওয়ার জন্য স্বামীর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকনে সুরাইয়া। তবে হাসানুজ্জামান সেদিন অফিস থেকে আর বাসায় ফেরেন নি। থানা, হাসপাতাল সব জায়গায় খোঁজ করা হয়। কোথাও তাকে পাওয়া যায় না। দিনের পর দিন চলে যায়। আর এদিকে সুরাইয়া একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দেন। তার নাম সুপ্রভা। সুরাইয়া কারো সাথে কথা কথা বলতে গেলেই হারিয়ে যাওয়া স্বামীর স্মতিচারণ করেন। সন্তানদের প্রথম প্রথম ভালো লাগে বাবার কথা শুনতে। এক পর্যায়ে সন্তান ইমন যখনি বুঝতে পারে তার মা তার বাবার কথা বলবেন, তখনি সে অন্য কথা বলতে চায়। কারণ এতদিন একই কথা শুনতে শুনতে তার অসহ্য লাগে। ইমনের দোষ নেই। প্রথম পর্যায়ে পাঠকের যথেষ্ট সহানুভূতি পাবেন সুরাইয়া। অপেক্ষা করতে করতে ধীরে ধীরে বাস্তব জগত থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন তিনি। এক পর্যায়ে পাঠকেরও তাকে বিরক্তিকর লাগবে। পরবর্তীতে দেখা যাবে তার আচরণের কারণে মেয়ে সুপ্রভা আত্মহত্যা করবে। গল্পের এইটুকুই মনে আছে।
৩.০
এবার চলুন ওপরের দুইটা গল্প বিশ্লেষণ করি। দেখবেন, ভালো লাগার একটা বিষয়কে নির্যাতনের হাতিয়ার বানানো যায়। এজন্য যে কাজটা করতে হবে- তা হলো তা বারবার বলতে হবে। বারবার করতে হবে। জোর করে করতে হবে। তাহলেই সুখানুভূতিটা একসময় অসহ্য হয়ে যাবে। আমরা খেয়াল করলে আমাদের আশপাশে এমন অনেক বিষয় দেখতে পাবো। এটাকে খাটি বাংলায় বলে লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়ে যায়। আমরা জাতিগতভাবে এই কাজটা করি। লেবুকে কচলাই। কাউকে মাথায় তুলতে তুলতে একটি পর্যায়ে নিয়ে তারপর প্রচারণা চালাই, যা ওই ব্যক্তির মহান প্রতিকৃতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সুখ কম পাওয়া ভালো। ভালো জিনিসের কম প্রচার হওয়া উচিত। ভালো জিনিস কম থাকা উচিত। কোন কিছুরই বাড়াবাড়ি ভালো নয়। শেষের কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ভালোর সংখ্যা যত কম হয় তত ভালো। ভালো বেশি হলে তা হয় মাঝারি। সুখ বলুন আনন্দ বলুন একই রকমের। এটাকে নিজের থেকে অনুভব করতে হয়। সেটাই মনে থাকে। সেটাকে বিধিবদ্ধ করলে, পালনে জোর করলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে একটা অনুষ্ঠান হয়ে যায় মাত্র।

আবারও বলছি, যে জিনিসটা সুখ দিতে পারে, দুঃখ দেয়ার জন্য তার চেয়ে বড় অস্ত্র আর নেই।


দক্ষিণ কোরিয়া
০৯ মার্চ ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×