somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্লিজ চেঞ্জ দ্যা ওয়ার্ড, চেঞ্জ দ্যা ওয়ার্ল্ড

০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.০
নিজের গল্পটা বলি। গত ২০ ফেব্রুয়ারি করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদেরকে ২৫ দিনের জন্য অন্য একটি ডরমিটরিতে স্থানান্তর করা হয়। দুটো ডরমিটরিই ক্যাম্পাসের মধ্যে৷ আমাদের ডরমিটরি চায়নিজ শিক্ষার্থীদের কোয়ারিন্টিনের জন্য নির্ধারণ করা হয়। কারণ এই ডরমিটরিতে রান্নার জন্য কিচেন আছে। যাতে খাবারের জন্য তাদেরকে বাইরে যেতে না হয়৷ চাইনিজ শিক্ষার্থীরাও ক্লাস শুরুর আগে কোয়ারিন্টিনের জন্য আগেভাগে কোরিয়া চলে আসে। আমাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য বিভন্ন পর্যায় থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়। আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়নগিন প্রদেশের সীমানায় থাকি। গেট থেকে বের হলেই গিয়নগি প্রদেশ। তারপর রাজধানী। যাই হোক সেই ইয়নগিন প্রদেশ কর্তৃপক্ষ আমাদের জন্য এক বক্স বিভিন্ন মালামাল প্রেরণ করেছেন। কী নেই তাতে! রুমের স্যান্ডেল, জুতা, তোয়ালে, টুথ ব্রাশ, টুথ পেস্ট, সাবান, বিভিন্ন ধরণের টিস্যু, খাবার। কম করে হলেও বাংলাদেশি টাকায় বিশ হাজার টাকার জিনিসপত্র।

ডরমিটরির অফিস থেকে আমাদের কাছে মেইল করা হয়। তাতে লেখা হয়, আমাদের জন্য রিলিফ বা ত্রাণ এসেছে। মালামাল দেখে সবার সে কী উৎসাহ। আমার বিভিন্ন দেশের ক্লাসমেটরা সেসবের ছবিও ফেসবুকে দিয়েছেন। তবে আমার আত্মসম্মানবোধে লেগেছে। আমি মেইলেই উত্তর দিয়েছি, এটা কী রিলিফ না কী গিফট? আমি এদেশে রিফুজি বা ভিক্ষা করতে আসিনি। গিফট হলে কথা ছিল। আমি ত্রাণ গ্রহণ করিনা। পরে তারা দুঃখ জানিয়ে মেইল করলেও আমি আমার জন্য সেই জিনিসপত্র গ্রহণ করিনি। ত্রাণ গ্রহণ করার অভিপ্রায় আমার নেই। কারণ ছোটবেলা থেকেই মনের ভেতর একটা ধারণা দিয়ে দেয়া হয়েছে যে, কারো দান বা ভিক্ষা গ্রহণ করা যাবেনা। আমি কারো কাছ থেকে কখনোই টাকা ধার করিনি। এজন্য মরে গেলেও কারো কাছে হাত পাতা সম্ভব হয়না। ঘুষ দুর্নীতি তো পরের কথা।

সেই আমিই সৌদী দুতাবাস থেকে পাঠানো খেজুর গ্রহণ করেছিলাম। তখন শিল্প সচিবের পিএস হিসেবে কাজ করছি। রোজার মাসে অফিসে সৌদী দূতাবাস থেকে শিল্প সচিবের নামে একটা বক্স আসে। তার উপরে আরবীতে ও ইংরেজিতে লেখা রয়েছে- খেজুরগুলো মদিনার জান্নাতুল বাকী বাগানের। এটা খাদেমুল হারামাইন শারিফাইন সৌদী বাদশাহর পক্ষ থেকে তোহফা বা উপহার। বাদশাহর গিফট বলে কথা। গ্রহণ করেছি। স্যারকেও খেতে দিয়েছি। নিজেও খেয়েছি। সবাইকে দিয়েছি। ত্রাণ লেখা থাকলে, সবাইকে দিয়ে দিতাম। স্যারকে তো দূরের কথা। নিজেও খেতাম না।

২.০
এবার আরেকটা গল্প বলি। গল্পটা অনেক পুরাতন। একজন অন্ধ ভিক্ষুক রাস্তার পাশে বসে ভিক্ষা করছেন। তার পাশে একটি কার্টুনের শক্ত কাগজে লেখা রয়েছে- আই অ্যাম ব্লাইন্ড। প্লিজ হেল্প। মানে আমি অন্ধ। দয়া করে সাহায্য করুন। লোকটি সামনে একটি মুখ খোলা কৌটা। যাতে পথচারীরা সাহায্য দিতে পারেন। অন্ধ লোকটি সকাল থেকে বসে আছেন। ব্যস্ত শহরে তার দিকে তাকানোর মতো সময় কারো নেই। হয়ত মাঝে মধ্যে দুই একজন দয়াপরবশ হয়ে দুই একটা কয়েন দিচ্ছেন। অন্ধ লোকটি হতাশ। এতে তার খাবারই জোগাড় হবেনা। এদিকে দূর থেকে বিষয়টি লক্ষ্য করছিলেন এক নারী। তিনি অন্ধ ভিক্ষুকের কাছে যান। তার সামনে বসে ব্যাগ থেকে মোটা কলমটা বের করেন। কার্টুনটির উল্টা পিঠে কিছু লিখে তা যথাস্থানে রেখে চলে গেলেন।অন্ধ ভিক্ষুকটি দুই হাত দিয়ে তার পায়ের জুতা ধরে মানুষটিকে অনুধাবনের চেষ্টা করলেন।

এরপরে যা হলো তা এককথায় ম্যাজিক। লোকজন অন্ধ লোকটির কার্টুনে টাকা ফেলছেন। তিনি ওই টাকা উঠিয়ে কৌটায় রাখারও ফুসরত পাচ্ছেন না। বিকালের দিকে ওই নারী আবার অন্ধ লোকটির সামনে এসে দাড়ালেন। অন্ধ লোকটি জুতা ধরে বুঝতে পারলেন, এই সেই নারী যিনি কিছু একটা লিখে গেছেন। যার কারণে আজ এত অর্থ সাহায্য পেয়েছেন। অন্ধ লোকটি জিজ্ঞাসা করলেন, হোয়াট ডিড ইউ রাইট? তুমি কী লিখেছিলে? নারী জাবাব দিলেন, আই রোট দা সেম ইন ডিফারেন্ট ওয়ার্ড। আমি একই কথা লিখেছি তবে তা ভিন্ন শব্দে। দেখা গেলো ওই নারী কার্টুনে লিখেছিলেন, ইটস অ্যা বিউটিফুল ডে অ্যান্ড আই ক্যান্ট সি ইট। আজকের দিনটা কতই না সুন্দর। হায়! আমি দেখতে পাচ্ছি না।

কথাটা মানুষের মনে দাগ কেটেছিল। যার ফলে অন্ধ লোককে মানুষ অকাতরে দান করে যান। এজন্যই বলা হয়, চেঞ্জ দা ওয়ার্ড, চেঞ্জ দ্যা ওয়ার্ল্ড।

৩.০
ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের বাবার নাম আবুল মনসুর আহমদ। তিনি ছিলেন রাজনীতিবিদ ও লেখক। তার একটা বইয়ের নাম গালিভারের সফরনামা। ছোটবেলায় পড়েছিলাম। গালিভার একবার এমন একটি দেশে গিয়ে পৌঁছান যেদেশের সাথে আামদের দেশের মিল আছে। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, এদেশের মানুষ মহা বুদ্ধিমান। দুধের সাথে পানি মেশান। গালিভার তাদের কর্মকান্ড দেখে নিজেই বোকা বনে যান। গালিভার্স ট্রাভেল বইটি লিখেছিলেন জোনাথন সুইফটস। বইটির কাহিনীতে একটা যুদ্ধ আছে। ডিম ভাঙ্গা নিয়ে যুদ্ধ। ডিম কোন দিক থেকে ভাঙ্গা যাবে। ডিমের মাঝখান দিয়ে না কী ডিমের একপ্রান্ত দিয়ে! আমাদের দেশকে বুঝাতে অনেকে 'হীরক রাজার দেশে' চলচ্চিত্রটি নিয়ে মাতামাতি করেন। তারা গালিভারের সফরনামা পড়ে দেখতে পারেন, শুধু রাজার দোষ না! সেদেশের মানুষগুলো কেমন হতে পারে। বুঝতে পারবেন৷

যাই হোক, এই দেশে ডিম ভাঙ্গার ইস্যুতেও মানুষ দুই ভাগ হয়ে যাবেন। যেমনটা হয়েছেন, করোনাকালে সাহায্য দিয়ে তার ছবি তোলা নিয়ে। দুই পক্ষেরই যুক্তি আছে। কেউ বলছেন, ত্রাণ দিয়ে ছবি তোলায় গ্রহীতার সম্মান নষ্ট হচ্ছে। ত্রাণের নামে কারো সম্মানহানি মানা যায়না। আবার অপরপক্ষ বলছেন, এটা প্রচার করলে অনেকে দানে উৎসাহিত হবেন। তাছাড়া কোন এলাকায় ত্রাণ দেয়া হয়েছে তা অন্যরা জানতে পারবেন। তারা অন্য এলাকা বেছে নেবেন। যাই হোক, আমার কাছে দুই পক্ষেরই যুক্তি প্রবল বলে মনে হয়। এ দুই যুক্তিকে সমন্বয় করা দরকার। কীভাবে?

ত্রাণ কথাটি ভুলে যেতে হবে। সরকারি হলে প্যাকেটের গায়ে লিখতে হবে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আপনার জন্য শুভেচ্ছা উপহার। প্যাকেটের গায়ে লিখতে না পারলে একটা কাগজে লিখে তা প্যাকেটের গায়ে সেটে দিন। অন্য কোন সংস্থা এনজিও বা ব্যক্তি হলেও এমনটাই লিখুন। এমন শব্দ লিখেবেন যেন গ্রহণকারী নিজেকে সম্মানিত বোধ করেন। দেখবেন- আপানকে আর ছবি দিতে হবেনা, তারা নিজেরাই ফেসবুকে ছবি পোস্ট করবেন৷ এটা হলে এতদিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ছবিতে ফেসবুক সয়লাব হয়ে যেতো।

প্লিজ চেঞ্জ দ্যা ওয়ার্ড, চেঞ্জ দ্যা ওয়ার্ল্ড।
ত্রাণ না বলে গিফট বলুন।


দক্ষিণ কোরিয়া
৩ এপ্রিল ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৩৯
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×