এক।
মাঝে মাঝে
মাঝে মাঝে মনের ভেতরে টেনে দেই সরল রেখা
আগপাছ না ভেবে মনে হয় মানুষ বড়-ই একা ।
মাঝে মাঝে মনের পুকুরে একটানা দেই ডুব
মাঝে মাঝে সব কোলাহল ছেড়ে নিশ্চল নিশ্চুপ।
মাঝে মাঝে বড় একা হয়ে যাই শূন্য চতুর্দিক
মাঝে মাঝে ভালো লাগে কেউ আমার খবর নিক।
মাঝে মাঝে আকাশে দেখি নীল সাগরের মেলা
মাঝে মাঝে হতাশায় ভাবি এই বুঝি শেষ বেলা।
মাঝে মাঝে মনে হয় আরে এইতো আছি বেশ
মাঝে মাঝে ইচ্ছা জাগে খুব হবো নিরুদ্দেশ।
মাঝে মাঝে নিজেকে নিজে মেরে ফেলতে ইচ্ছা হয়
মাঝে মাঝে মৃত্যুকেই আমার সবচেয়ে বেশি ভয়।
মাঝে মাঝে একটার পর একটা দেয়াশলাই জ্বেলে
ইচ্ছা করে পুড়ে দেই সব আগুনে পেট্রোল ঢেলে।
অনেক হতাশ আমি ভেবে পাইনা এই জীবনের মানে
হয়ত মারা যাবো তারপর কোথায় কী হবে কে জানে!
তবুও বেঁচে থাকা বেঁচে আছি কত কিছু নিয়ে ভাবি
এত কিছু পেয়েও বারবার কত কিছু নিয়ে দাবি।
এখানে আকাশে নীল মেঘ নেই কালো আধারে ঢাকা
এত কিছু ভেবেটেবে শেষমেশ এভাবেই বেঁচে থাকা।
দুই।
অনেক দিন পর
অনেক দিন পর দেখা হবে এই ভেবে ভেবে পথে
হেটে যাওয়া, অকারণ অস্থায়ী নিজস্ব ঠিকানা হতে-
কত চিঠি লেখা হয় শব্দহীন রাতের গভীরের মতো
অপেক্ষার আশ্বাসে নিজের অস্তিত্ব ক্ষত আর বিক্ষত।
কোন কারণ নেই জানি এমন আদিখ্যেতা সাথে বয়ে
কারো আগমন হয়নি এখানে কোনভাবে আমার হয়ে।
তবু বিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকা একটু অন্য সম্ভাবনা
পথের উপরে ধুলায় ছড়িয়ে এঁকে যাই আলপনা।
অনেক দিন পরে, হয়তবা অনেক দিনই বলা যায়
এভাবে ব্যয়বহুল সময়ের হাতে ব্যকুল অপেক্ষায়।
এখনো বেঁচে আছি বুকে অনেক প্রত্যাশিত সাক্ষাত
অনেক দিন পার হবে কেটে যাবে বহু দিন বহু রাত।
হয়তো দেখা হবে, সত্যিই; ঠিক অনেকটা দিন পর
ততদিন আমার অপেক্ষার কবিতার নিশ্চিন্ত অবসর।
এখনো বাড়িয়ে রাখা হাত দুটো আহ্লাদী, উৎসুক,
হাতড়াবে হাতে আঁকা ধুলিমাখা আলপনাশ্রী মুখ।
কত কিছু মনে আসে অনেক সম্ভাবনা অনেক বিশ্বাস
অনেকদিন হয়তো পার হয়ে যাবে বছর-দিন-মাস।
হয়তো দেখা যাবে সময়ের মাঝে আমার পারাপার
হয়তো তুমি অন্য কোথাও এখানে আসবেনা আর।
তিন।
আমি যদি মরে যাই
কী ছাইপাশ ভাবি আজকাল এমন কেন যে হয়!
আমি যদি মরে যাই আজ বা কাল যেকোন সময়।
আমার কবরে কী ঘাসফুল হবে আসবে প্রজাপতি
না হয় বুনো ফুল; ভাবনায় কী আর এমন ক্ষতি!
আচ্ছা আমার কবরে কী কখনো বৃষ্টির ফোঁটা এসে
সকালের আগে সব ধুয়ে সাফ আবার বিকাল শেষে।
এমন যদি হয় কেউ জানবেনা কোথায় আমার ঘর
শুনবনা কারো কোলাহল কিম্বা কারো গলার স্বর।
আমার কবরে শুধু আমি আর একরাশ অভিমান
কেউ জানেনা কত ভালোবাসা কার জন্য কত টান।
হঠাৎ কখনো জোৎস্না এসে লুটোপুটি খাবার পর
সব সুখের আলো ছড়িয়ে দেবে কবরের ভেতর।
কখনো তো ভেবে দেখা হয়নি এমন মরণ কবে?
এত জোৎস্না এত বৃষ্টি কবরে আমার সঙ্গী হবে।
গাছের পাতা ঝরে একাকার আমাকে রাখবে ঢেকে
উড়ে নিয়ে যাবে ঠিকানাবিহীন দূরন্ত বাতাস ডেকে।
সকালের পরে দুপুর গাড়িয়ে এখন গোধুলির শেষ
মায়াভারা ক্লান্ত নরম আলো তাকিয়ে দেখি অনিমেষ।
নৌকা ভেড়াতে হবে খুব তারাতারি এসে গেছে কূল
একটু অপেক্ষায় থাকো প্রিয় প্রজাপতি প্রিয় ঘাসফুল।
দক্ষিণ কোরিয়া
৮ মে ২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:৫৮