অনেকেই আইনের ফাঁকফোকরের কথা শুনেছেন৷ তবে এ সম্পর্কে ধারণা নেই৷ চলুন, আইনের এসব ফাঁকফোকরের বিষয়টা জেনে নেই৷
দণ্ডবিধি প্রণীত হয়েছে ১৮৬০ সালে৷ এই আইনের ৩৭৫ ধারায় নারী ধর্ষণের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷
বলা হয়েছে-
কোন ব্যক্তি ব্যতিক্রম ছাড়া নিম্নোক্ত পাঁচ প্রকার বর্ণনাধীন যেকোন অবস্থায় কোন নারীর সাথে যৌন সহবাস করলে "নারী ধর্ষণ” করেছে বলে গণ্য হবে।
প্রথমত, মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে।
দ্বিতীয়ত, মেয়ের সম্মতি ছাড়া।
তৃতীয়ত, মৃত্যু বা আঘাতের ভয় দেখিয়ে মেয়ের সম্মতি আদায় করে।
চতুর্থত, ধর্ষক লোকটি জানে যে, সে মেয়েটির স্বামী নয়৷ অথচ মেয়েটা মনে করে তার সাথে আইনানুগভাবে বিবাহিত অথবা সে নিজেকে তার সাথে আইনানুগভাবে বিবাহিত বলে বিশ্বাস করে।
পঞ্চমত, চৌদ্দ বৎসরের কম বয়সি মেয়ের সম্মতিতে বা সম্মতি ছাড়া৷
আমি এখান থেকে পাঁচ নম্বর অবস্থাটা নেবো৷ চৌদ্দ বছরের কম কোন মেয়ের সাথে তার সম্মতিতে বা সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সেটা ধর্ষণ হবে৷
এবার চলুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এ কী বলা হয়েছে দেখে নেই৷ এই আইনের ৯ (১) ধারায় বলা হয়েছে- কোন পুরুষ কোন নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দেয়া হবে।
এই ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে- যদি কোন পুরুষ বিয়ে ছাড়া ষোল বৎসরের বেশি বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভয় দেখিয়ে বা প্রতারণার মাধ্যমে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিতে বা সম্মতি ছাড়া যৌন সঙ্গম করেন, তাহলে তিনি উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
দণ্ডবিধিতে ১৪ বছরের কম মেয়ের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে ধর্ষণ হবে৷ এই আইনে তা দুই বছর বাড়িয়ে ষোল বছর করা হয়েছে৷ অর্থ্যাৎ ষোল বছরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে সম্মতি ছাড়া বা সম্মতি নিয়েও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সেটা ধর্ষণ হবে৷ আর ষোল বছরের বেশি বয়সিদের সম্মতি ছাড়া যৌন সম্পর্ক করলে সেটা ধর্ষণ হবে৷ ষোল বছরের বেশি বয়সের কোন মেয়ের সাথে বিয়ে করে বা তার সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে৷ তবে এ বয়সি মেয়ের সাথে বৈধভাবে মানে বিয়ের মাধ্যমে যৌনসম্পর্ক করার সুযোগ নাই যতক্ষণ না মেয়ের বয়স আঠারো হয়৷ আইনে ষোল বছরের বেশি বয়সের মেয়ের সাথে তার সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক করার সুযোগ রয়েছে মর্মে প্রতিয়মান হয়৷ তবে বিয়ে করাে সুযোগ নাই৷
কারণ বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ এর ২ ধারায় বিয়ের জন্য প্রাপ্ত বা অপ্রাপ্ত বয়স্কের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, বিয়ের ক্ষেত্রে আঠারো বৎসর পূর্ণ করেননি এমন কোনো নারী অপ্রাপ্ত বয়স্ক৷
অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বিয়ে করলে এই আইনের ৭ ধারায় অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে৷
তিনটি আইন নিয়ে আলোচনা করলাম৷ এতে দেখা যায়, ষোল বছরের কম মেয়ের সাথে সম্মতিতে বা অসম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে সেটা ধর্ষণ হবে৷
তাহলে আইনের ফাঁকফোকরটা কী! আঠারো বছর বয়সের আগে কোন মেয়ের সাথে বিয়ে করে বৈধ যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা যাবেনা৷
তাহলে কোন মেয়ের ষোল থেকে আঠারো বছর বয়সটা গ্রে থেকে গেলো৷ এ বয়সের কোন মেয়ের সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে ধর্ষণের মামলায় পড়বেন না বলেই মনে হয়৷ তবে এ বয়সের কোন মেয়েকে বিয়ে করে যৌন সম্পর্ক করতে গেলে ধর্ষণ নয়; তবে বাল্য বিয়ের অপরাধে অভিযুক্ত হবেন৷
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:২১