ধরুন সামনে ইদ৷ পুরা রমজান মাস জুড়ে প্রচুর বেচাকেনা চলছে৷ পুরা দেশে লক্ষ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে৷ আমাদের মতো দেশে এ ধরণের উৎসবে ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো হয়৷ সবার পকেটে টাকা চলে আসে৷ টাকা থাকলে সবাই ভালো খায়৷ ভালো কেনাকাটা করে৷ ভালো চলতে চেষ্টা করে৷ এখানে কে কোন ধর্মের সেটা বিচার করে কারো পকেটে টাকা যায়না৷ অর্থনীতির দৃষ্টিতে দেখলে একটি উৎসব সবার৷ দেশের প্রতিটি নাগরিকের৷ একটি উৎসব থেকে সবাই উপকৃত হয়৷
দেশে কোরবানির ঈদ শেষ হলো। এই কোরবানী ঈদের অর্থনীতিও এখন এক লাখ কোটি টাকার বেশি। কোরবানির ঈদের আগে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে গেছে। এই সংকটের সময় চলতি জুন মাসের প্রথম ১২ দিনেই ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছে ১৪৬ কোটি ডলার। কোরবানীর কারণে গ্রামীণ অর্থনীতিও জীবন ফিরে পেয়েছে।
আজ (১৮ জুন) মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট এক কোটি ৪ লাখ ৮ হাজার ৯১৮টি গবাদি পশু কুরবানি হয়েছে। কোরবানি হওয়া পশুর এই সংখ্যা গত বছরের চেয়ে ৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০৬টি বা ৩.৭ শতাংশ বেশি। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কোরবানির ঈদ বড় ভূমিকা রাখে। কারণ গরু ছাগল গ্রামেই বেশি পালন তরা হয়। ফলে যারা গরু ছাগল পালন করেছেন তাদের প্রত্যেকের পকেটে টাকা ঢুকেছে। ঢাকায় দেখলাম কাঠাল পাতা খড়কুটা নিয়েও ব্যাপক ব্যবসা চলেছে। হিন্দু মুসলমান ভেদাভেদে টাকার লেনদেন হয়নি। গরু কুরবানি হলেও টাকার এই ভাগ হিন্দুদের পকেটেও গেছে। এখন কয়েক মাস তারা টাকা খরচ করবেন। ভালো খাবেন। ভালো জামা কাপড় পড়বেন। ছেলে মেয়েদের পেছনে ব্যয় করবেন। ডাক্তার দেখাবেন। ওষুধ কেনবেন।
একথা ঠিক দূর্গা পূজার ক্ষেত্রেও খাটে। এদেশে ৫ দিনের পূজায় সবমিলিয়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কোটি টাকার মতো অর্থ লেনদেন হয়। এ টাকা শুধু হিন্দুদের পকেটে যায়না। পূজার জন্য প্রায় একশ উপকরণ লাগে। ফুল লাগে সবচেয়ে বেশি। এর বেশিরভাগ সরবরাহ করে মুসলমান ব্যবসায়ীরা।
বিদেশ থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করার পর এখন সবকিছুই অর্থনীতির দৃষ্টিতে দেখি৷ দেখতে হয়৷ কারণ সব কিছুর মূলে অর্থ৷ অর্থ সবকিছু পরিচালনা করে৷এভরি ডিসিশন ইজ অ্যান ইকোনোমিক ডিসিশন। যদিও অনেকে সেটি স্বীকার করেন না। তবে অর্থই বলে দেয় আপনি কী সিদ্ধান্ত নেবেন। আমাদের মতো গরীব দেশে, অভাবের দেশে সাম্প্রদায়িকতা বা ধর্ম নিয়ে যত সমস্যা৷ স্বচ্ছল দেশে এই সমস্যা নেই৷ যারা এটা ধরতে পারবেন না৷ রাজনৈতিক ডামাডোলের আবর্তে ঘুরতে থাকবেন৷ সবকিছুতে ধর্মের ফ্লেভার মিশিয়ে দেখবেন। ফলে মূল বিষয়টা চোখের সামনে দিয়ে এড়িয়ে যাবে।
এতো গেলো অর্থনীতির দিক। সামাজিক দিক থেকে প্রভাবটা ভাবুন একবার। মানুষ সামাজিক জীব৷ সে অন্যের আনন্দে হাসে৷ বিপদে কাঁদে৷ ধরুন আপনার প্রতিবেশি অন্য ধর্মের৷ তার বাড়ির একজন মারা গেছেন৷ আপনি মানুষ হলে অবশ্যই তাদের কান্না আপনাকে ছুঁয়ে যাবে৷ অমানুষ হলে ভিন্ন কথা৷
এভাবে পাশের বাড়ি উৎসব হচ্ছে৷ তারা আনন্দ করছে৷ সেই আনন্দও আপনাকে ছুঁয়ে যাবার কথা৷ যদি ছুঁয়ে না যায় পরামর্শ দেবো মানুষ হওয়ার গুণাবলি অর্জন করুন৷
এজন্য যারা বলে উৎসব সবার- কথাটা শতভাগ সত্যি৷ সেটা অর্থনীতির দৃষ্টিতে হোক বা সামাজিকতার দৃষ্টিতে হোক৷
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৮