somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সরকারি চাকরিজীবীর দুর্নীতির টাকা হালালের উপায়

১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সরকারি কর্মকর্তাদের সারাজীবনের আয় ক্যালকুলেটর দিয়ে বের করা সম্ভব। অথচ কেউ কেউ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যান। কীভাবে সম্ভব! সরকারি অনেক কর্মকর্তার জ্ঞাত আয় যাচাই করার অভিজ্ঞতা থেকে এ বিষয়ে কিছু বলতে পারি।

একঃ দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিদের শ্বশুড় বাড়ির লোকজন খুব ধনী হন। এরপর সেই শ্বশুড় জামাই অন্তঃপ্রাণ হন। সব সম্পদ জামাইকে দান করেন। আর শ্যালকরা বড় বড় ব্যবসায়ী হন। কেউ বিদেশে অনেক সম্পত্তির মালিক হন। সেই সম্পদের কিছু অংশ আবার তার দুলাভাইকে দান করেন। বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে প্রণোদনাও মেলে। আবার বিদেশে সেই টাকা কীভাবে অর্জিত হয়েছে সেটাও জিজ্ঞাসা করার সুযোগ নেই। আর নিজের স্কুল শিক্ষক বাপও ঢাকার ফ্লাটের মালিক হন। ভাই বোন মালিক হন। স্বামী বা স্ত্রী মালিক হন। পরে সেই ফ্লাট আবার হেবা করে সরকারি কর্মচারিকে দান করেন। সরকারি চাকরিজীবীদের দান পাওয়ার এমনই রাজ কপাল।

দুইঃ সরকারি চাকরিজীবীরা মৎস্য চাষ করেন। গরু মোটাতাজা করেন। রাখিমালের ব্যবসা করেন। সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তারা আবার সেই আয়ের প্রত্যয়ন দেন। মজার বিষয় হলো- কোটি কোটি টাকা এসব কার্যক্রম থেকে আয় হয়। এত কিছু করেন; সরকারি চাকরিটা কখন করেন!

তিনঃ সরকারি চাকরিজীবীরা শেয়ার ব্যবসা করতে পারেন। সরকারি কর্মচারি আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ অনুযায়ী সরকারি চাকরিজীবীদের ফটকা কারবারে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ। এই বিধিমালার বরাতে ২০১২ সালের ১৮ জানুয়ারি সরকারি চাকরিজীবিদের শেয়ারে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। অথচ সন্ধ্যায়ই অজ্ঞাত কারণে সেই পরিপত্র বাতিল করা হয়। এ কারণে সরকারি চাকরিজীবীরা টাকা বানানোর মহাসুযোগ পেয়েছেন। যেসব কোম্পানী বাজারে আইপিও ছাড়বে তাদের নিয়ন্ত্রকরাও শেয়ার ব্যবসা করতে পারেন। এতে বাজারে শেয়ার ছাড়ার আগেই সংশ্লিষ্ট সরকারি চাকরিজীবী প্লেসমেন্ট শেয়ারের মালিক হয়ে যান। আইপিও বাজারে আসলেই তিনি সাথে সাথে বিক্রি করে অনেক সম্পদের মালিক হয়ে যেতে পারেন। তাকে কে ঠেকায়!

চারঃ সরকারি চাকরিজীবীদের ঝোঁক জমি কেনায়। সুযোগ পেলেই তারা জমি কেনেন। জমি কিনতে হলে মৌজা রেটই যথেস্ট। বাজারমূল্য কোটি টাকা হলে মৌজা রেট মাত্র দশ হাজার বিশ হাজার টাকা। দলীল মূল্য ধরলে শত কোটি টাকার জমি বা ফ্লাটও তার বৈধ আয়ের নাগালে চলে আসে। পরে সেই সম্পদ বাজার দরে বিক্রি করে দেবেন। টাকা বৈধ হয়ে যাবে। এমন সরকারি কর্মচারিকে আল্লাহ ছাড়া কে ধরতে পারবে!

পাঁচঃ সরকারি চাকরিজীবীর হাত পা বাঁধা। তার স্ত্রী বা স্বামীর তো হাত পা বাঁধা নয়। এ কারণে তারা যে কোনো পেশা বেছে নিতে পারেন। সম্পদশালী সরকারি চাকরিজীবীর স্বামী বা স্ত্রীরা ব্যবসা করেন। তাদের নামে হোটেল, রিসোর্ট, ফার্ম, বিভিন্ন কোম্পানীর শেয়ার মালিকানা থাকে। ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকে। সেই লাইসেন্স দিয়ে স্বামী বা স্ত্রীর প্রভাবিত অফিসে কাজ করা যায়। স্ত্রী বা স্বামী কীভাবে কোন পেশায় আয় করছে সেটা তো সরকারি চাকরিজীবীর জানার কথা নয়। তার গাছেরটাও খাওয়ার সুযোগ আছে। গাছের নিচেরটাও খাওয়ার সুযোগ আছে।

ছয়ঃ সরকারি কর্মচারিরা এলাকার মসজিদ মন্দির ধর্মীয় কাজে অফুরন্ত দান করতে পারেন। সবাই তাদের কাছেই টাকা চান। তারাও উদার হাতে দান করেন। এত টাকা কোথায় পান সেটা কেউ জিজ্ঞাসা করেনা। সমাজে তাকে নিয়ে ধন্য ধন্য রব ওঠে। একজন দুর্নীতিবাজ যে সমাজে সম্মান পেতে পারেন; যেখানে সামাজিক স্বীকৃতি রয়েছে; দানবীর হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন- সেখানে টাকা আয়ের যে কোনো পন্থা কেন বেছে নেবেন না সরকারি চাকরিজীবী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:০৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঠকানোটাই ভাল শিখেছি আমরা

লিখেছেন ফেনা, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৭



এই বিশাল মহাকর্ষীয় বস্তু সবকিছু নিজের দিকে টেনে নেয়—এমনকি আলোও পালাতে পারে না। কিন্তু কৃষ্ণ গহ্বরের ভিতরে কী ঘটে? সেখানে সময় ও স্থান কেমন আচরণ করে? এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরব বিশ্বে নারীরা অপমানিত? আমার অভিজ্ঞতা বলছে ভিন্ন কথা

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬



বহুদিন ধরে একটি কথা শুনে আসছি—“নারীরা আরব দেশে অসম্মানিত অবস্থায় থাকে।”
কিন্তু আমি আরব দেশে গিয়েছি, থেকেছি, এবং প্রায় দুই মাস ধরে একাধিক জেলায় ঘুরেছি।
সত্যি বলছি—আমি সেখানে কোথাও নারীদের অসম্মানিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় দাবিদাওয়া নিষ্পত্তি সংস্থা : অরাজকতার পালে নতুন হাওয়া!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১:০৩


বাংলাদেশে আজকাল দাবি না জানালে কেউ আর মানুষ থাকে না—ছাত্র, শিক্ষক, গৃহিণী, পুলিশ, পিয়ন, কবি, কুস্তিগির, সবাই 'অধিকার' চায়। তবে অধিকার মানে এখানে মোটেই দায় বা কর্তব্য নয়, বরং ছিনিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্পা এবং দেহ ব্যবসায়ীদের কথা শুনলে রেগে যাবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৪৯



পুরো পৃথিবীতে স্পা এর সংখ্যা ১ লক্ষ ৮১ হাজার। এইসব স্পা-গুলোর বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে ইউরোপে। এশিয়া - প্যাসিফিকের দেশগুলোতেও স্পা-এর সংখ্যা কম নয়। ৫১ হাজারেরও বেশি। বাংলাদেশে স্পা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার মিরর ডোল, নিজের মনের অশান্তি অন্যের উপর চাপিয়ে দিয়ে ফ্যাসিস্টের মতো আচরণ করবেন না

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫

ব্লগার মিরর দৌলাকে বলছি।
আপনাকে কিছু কড়া কথা আজ বলবো। ব্লগে বর্তমানে আপনার কোন অবদান নেই। সামুর যে ব্লগপেইজটা আপনি চালান, সেখান থেকে সব পোষ্ট আপনি ড্রাফটে নিয়েছেন। সেটা আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×