"বাণিজ্য মেলা" বিষয়ে আমার স্ত্রীর আগ্রহ অসীম। প্রতি বছর জানুয়ারী মাসের শেষে একবার না গেলেই নয়..তার এই মহা-মিলন মেলায় এবং আমাকেও অসীম ধৈর্য আর হাসিমাখা মুখ নিয়ে তাই যেতে হয়। তবে চমৎকার কিছু দৃশ্য দেখি প্রতিবার....এবারও তার ব্যাতিক্রম নয়।
বুকে পাকিস্তানের পতাকা লাগানো পাকি(!!) দের ..আধো উর্দু, আধো বাংলা বলা আর কষাইসুলভ সবজি কাটা এত আগ্রহ নিয়ে মানুষ দেখতে পারে..তা আমার কল্পনার বাইরে ছিল। আবার কোথাও কোথাও তো ষ্টল গুলোতে দাড়ানোর জায়গা পাচ্ছিলাম না..ক্রেতার ভীড়ে.. আর দাড়িয়ে ভাবছিলাম...বাংলাদেশের জিডিপি এখন কত...দেশের কত শতাংশ মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে..এইসব হাবি জাবি।
আরও মজা পেলাম কিছু ষ্টল এ গিয়ে যেখানে আমাদের হাতের নাগালেই পাওয়া যায় এমন জিনিস কেনার ধুম দেখে। হয়তবা সেখানকার পণ্যগুলো সবার ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে বলে। কোন বিক্রেতা ২ টাকার পণ্য বিক্রি করছেন ১০ টাকায়, আবার কেউবা ১০ টাকার টা বিক্রি করছেন ৫ টাকায়..উভয়ের মুখেই হাসি...একদল লাভের বোঝায়..আরেকদল ক্ষতি পুষিয়ে নেবার আনন্দে হাসছেন।
মুচকি হেসে দেখছিলাম..প্রয়োজন নেই, কিন্তু মেলা থেকে কিছু না নিলে কি চলে..এই ধারণা নিয়ে বাচা মানুষগুলোর হাতের বোঝা ভারী থেকে ভারী তর হয়ে ওঠা। দেখছিলাম প্রবল উৎসাহে "নিজেদের হাতেই অর্থনীতির চাকা ঘুরানো" (উল্টো পথে!)... বাণিজ্য মন্ত্রীর সাফল্য...কারো স্বপ্নপূরণ ইত্যাদি...
খুব মিস করছিলাম...একটা বাক্স...যেখানে অন্ত:ত লেখা আছে ".....কোন দূর্গত দের সেবায় এগিয়ে আসুন"...কিন্তু খুজে পেলাম না..
ভাগ্য সুপ্রসন্ন বলে... আরও দেখা হয় নি...প্যাভিলিয়ন ধসে নিহত সেই কর্মী ভাইটিকে...দলে দলে মানুষের ক্রয় উৎসবের নিচে যে চাপা পড়েছিল। বুকের ভেতর থেকেই নিজেকে তার মৃত্যুর জন্য কিছুটা দায়ী বলে মনে হচ্ছে।
দু:খবোধ নিয়েই চোখ মেলে থাকি.....এরপর দেখি...
মুত্যুর মিছিল বের হচ্ছে গার্মেন্টস থেকে...চাপা পড়া "রনি দাশ" এর লাশ... বের হয়ে আসছে...সাথে সাথে কান্নার রোল পড়ছে তাদের পরিবারে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চক্রে যারা নিজেরাই পিষ্ট হয়েছেন চাকায় ।
দেখা না দেখার ভীড়ে চাপা পড়ে অনেক কিছুই......
কিন্তু আমরা তাতে টলব না অবশ্যই...নাহলে আগামী বছর "বাণিজ্য মেলা" আরও বেশী কেনাকাটা করার স্বপ্নসাধ পূরণ হবে কেমনে?