একদা বিধাতার সাথে "লেবু"র কথোপকথন হইতেছিলঃ
বিধাতাঃ ওহে লেবু, তোকে আমি বঙ্গদেশে পাঠাইতেছি, এ দফা আর তোকে জাহান্নাম মুখি করিলাম না।
বঙ্গদেশ হইতে ঘুরিয়া আইসা লেবু কহিলঃ বিধাতা, তাহারা শুধু রস ই লয় নাই, চিপিয়া চিপিয়া আমাকে তিতাও বানাইয়াছে, এবং শেষ মেষ আমার খোসা দিয়া রুপ চর্চাও করিতেছে। এ দফা আমাকে নিস্তার দাও তাদের হাত হইতে।
বিধাতা ভাবিলেন লেবু যা বলিয়াছে তাহা সত্য...কহিলেন:
"তোর মনোবাসনা পুরন করিলাম, যাহ বঙ্গদেশে এইবার একখানা নতুন "আইটেম" পাঠাচ্ছি তোর জায়গায়...যাহাদের নাম গার্মেন্টস শ্রমিক..শুধু তাই নয়..উহারা মনুষ্য প্রজাতির বলিয়া আমার কিছু বেহেশতবাসীরেও পাঠাইতেছি উহাদের দেখভাল করার জন্য।
মর্ত্য ধামে আসিয়া উভয় পক্ষ বেশ একখানা কর্মযজ্ঞ খুলিয়া বসিলেন...সচল হইল বঙ্গদেশের অর্থনীতির চাকা...চারিদিকে প্রশান্তি দেখিয়া নিরবে চক্ষু মুদিলেন বিধাতা..
কুম্ভকর্ণের নিদ্রা জিনিষটা কি তার একবার চেখে দেখা দরকার।
বিধাতার দীর্ঘ নিদ্রা টুটিল পায়ের কাছে বঙ্গদেশ থেকে উড়ে আসা একখানা আগুনের হলকায়...শীঘ্র তদন্ত্ কমিটি গঠন করিয়া পাঠাইলেন তিনি ধরা ধামে...জানা দরকার তার নিদ্রার ব্যাঘাত ঘটাইয়াছে কোন নরাধমে!!
তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে ভেসে উঠিল কিছু চিত্র..যাহা নিম্নরূপ:
১. বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের মালিকদের মুনাফার হার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৪৩.১০ শতাংশ। কম্বোডিয়ায় ৩১, ভারতে ১১.৮, ইন্দোনেশিয়ায় ১০, ভিয়েতনামে ৬.৫, নেপালে ৪.৪ এবং চীনে ৩.২ শতাংশ। অর্থাৎ বাংলাদেশের মালিকেরা বিশ্বের সবচেয়ে কম মজুরি দিয়ে, সবচেয়ে বেশি সরকারি সুবিধা নিয়ে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করছেন। বেহেশতবাসী মালিকদের চোখে শ্রমিকেরা দাস ছাড়া আর কিছু নন। (ড. এম এম আকাশ-অর্থনীতিবীদ-রেফারেন্স: ফারুক ওয়াসিফ)
২. এই দাসদের ৮০ ভাগই অল্পবয়সী নারী। বিকৃত পরিবেশে কাজ করতে করতে স্বাস্থ্য যায় ভেঙে। এঁদের অনেকেরই বিকলাঙ্গ সন্তান হচ্ছে। চল্লিশের পর এঁদের শরীরে আর কিছু থাকার কথা নয়। এই কথা জানা সত্ত্বেও মার্কিন সরকার আমাদের রপ্তানি করা পোশাককে জিএসপি-সুবিধার বাইরে রেখে অনেক ট্যারিফ আদায় করে। দেশি মালিকদের মুনাফার কয়েক শতাংশ কিংবা মার্কিন সরকারের ট্যারিফের কিছু অংশ কমালেই অজস্র শ্রমিকের জীবন বাঁচে। (GIZ, 2011)
বিধাতা আরও জানিলেন:
নিজস্ব নাম-পরিচয়-সমাজ, অভাবের মধ্যে একধরনের সামাজিকতায় বেচে থাকা মানুষগুলো র্গামেন্টস এ কাজ করতে এসে -পরিচয়হীন উপহাসিত ‘মফিজ’ হয়ে যায়। মেয়েদের অবশ্য গালভরা নামে বস্ত্রবালিকা ডাকা হয়। যেন শ্রমিক নয়, মানুষ নয়, নাগরিক নয়; কেবলই বস্ত্র আর বালিকার যৌনায়িত সমাবেশ তারা...পুরুষালি উৎপাত, ধর্ষণ যাদের প্রাপ্য।
বিধাতা বুঝিলেন-
হাতি যেমন জানে না তার শক্তি কতটা, এরাও তেমনি এদের সংখ্যাগত শক্তি ও পেশাগত অবদানের পরিমাপ পুরোটা করে উঠতে পারে না... প্রতিবাদের জন্য তাদের একটু বারুদ দরকার। বারুদ দেবার নিমিত্তে বারুদের বাক্স খুলিয়া দেখিলেন...ভাঁড়ার শূণ্য..কারণ চুপিসারে মর্ত্যলোকের বেহেশতবাসীরা উহা লইয়া গিয়া তাজরিন গার্মেন্টস, স্মার্ট ফ্যাশন এ আগুন লাগাইয়াছে এবং আরো কিছু জায়গায় লাগাইবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ভাবনায় একটু ফাঁক পড়িতেই বিধাতা, পার্শ্বোপবিষ্ট ব্রক্ষাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আপনার বাসায় খাঁটি সরষের তেল আছে?
ব্রক্ষা বলিলেন, আছে। কেন বলুন তো?
বিধাতা: আমার একটু দরকার। দেবেন কি?
ব্রক্ষা: (পঞ্চমুখে) অবশ্য, অবশ্য।
ব্রক্ষার বাসা হইতে ভাল সরিষার তৈল আসিল। বিধাতা তৎক্ষণাৎ তাহা নাকে দিলেন এবং গভীর নিদ্রায় অভিভূত হইয়া পড়িলেন।
আজও তাহার ঘুম ভাঙ্গে নাই।