আপনি পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভাবছেন আর মহান আল্লাহ পৃথিবীর শেষ থেকে শুরু পর্যন্ত জানেন।
আপনি ভাবছেন; এটা কেন হলো, ওটা কেন হলো না? এটা হয়েছে, খুব বাজে হয়েছে। ওটা হলে খুব ভালো হতো। তিনি কেন ভাগ্য ফলকে এমনটা লিখলেন? বিপরীতটাও তো লিখতে পারতেন। কিন্তু লিখলেন না কেন? আরো কত কী প্রশ্ন আপনার মাথায় ঘুরপাক খায়, তার কোন অন্ত নেই। কোন সীমা নেই। সময়ের পরিবর্তনে প্রশ্নের মাত্রা বাড়ে, ভাবনার ঝুলি ভরে।
কিন্তু এই আপনি যদি কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীর একেবারে শেষে পৌঁছে যান। প্রতিটি মানুষসহ জগতের সব প্রাণীর ‘শুরু-শেষ’ দেখে ফেলেন তাহলে আপনিও ভাগ্য লিপির মত কয়েক‘শ বিলিয়ন ‘ভাগ্যনামা’ লিখে ফেলতে পারবেন। তবে এই সুযোগ আপনি কেন, কাউকেই দেবেন না তিনি।
এবার চোখ বন্ধ করে সত্যটা ভাবুন, বাস্তবটা ভাবুন। সত্যটা হলো; পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কে কি করবে, মহান আল্লাহ তা খুব ভালোকরে জানেন। তাই তিনি সেই জ্ঞাত বিষয়টা ভাগ্য হিসেবে লিখে দিয়েছেন। লিখেছেন বলে আপনি করছেন, এমনটা নয়। বরং করবেন বলে লিখে দিয়েছেন। অর্থাৎ ভাগ্যটা হচ্ছে ভবিষ্যতে আপনার করা কৃত কর্মের একটি লিপিবদ্ধ তালিকা মাত্র।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভাগ্য কি পরিবর্তন হয়? আপনি অবাক হলেও এর উত্তর ‘হ্যাঁ-ই’ হবে। অর্থাৎ ভাগ্য পরিবর্তন হয়। যা আল কোরআন ও আল হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণীত।
পবিত্র কোরআনের সূরা রা’দের ১১ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে,
‘‘নিশ্চয় আল্লাহ কোন জাতির ভাগ্য ততক্ষণ পর্যন্ত পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিজেরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে।’’ (সূরা রা’দ - ১১)
পবিত্র হাদীসে এরশাদ হয়েছে, যা বর্ণনা করেছেন হযরত সালমান রাঃ এবং ইমাম আবু ঈসা মোহাম্মদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিযী রহঃ তাঁর গ্রন্থ সুনানে তিরমিযীতে সংকলন করেছেন,
‘‘সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ দু’আ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে না এবং সৎকাজ ব্যতীত অন্য কোন কিছুই হায়াত বাড়াতে পারে না।’’ হাসান, সহীহ (হাদীস নং - ১৫৪)
আয়াতের মাধ্যমে এটাই জানা যায় যে নিজেরা চেষ্টা করলে ভাগ্য পরিবর্তন হতে পারে। হাদীসের মাধ্যমে প্রমাণীত হয় যে, মহান আল্লাহর দরবারে দো’আ মোনাজাতের মাধ্যমে ভাগ্যে পরিবর্তন আসে এবং সৎকাজ বা নেক আমলের মাধ্যমে জীবন পরিধি বাড়তে পারে।
হায়াত বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাখ্যা এও হতে পারে যে, আপনি যে ক’দিন পৃথিবীতে বাঁচবেন সে ক’দিনই এত বেশি ভালো কাজ করে যাবেন, যা অনেক লম্বা হায়াত পেয়েও অনেকে করতে পারে না।
আর একটা কথা মনে রাখবেন, আপনি যে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করবেন, মহান আল্লাহ এটাও জানেন তাই তিনি আপনার এই ভাগ্য পরিবর্তন করার চেষ্টাকেও আপনার ভাগ্য লিপিতে আগেই লিখে দিয়েছেন।
মনে রাখবেন, আপনার কৃতকর্মের দায়ভার একান্তই আপনার। ভাগ্য লেখক মহান আল্লাহর নয়।
পুনশ্চ - তাকদীর বা ভাগ্য একটি স্পর্শ কাতর বিষয়। আমাদের ভবিষ্যতের নিশ্চিত কৃতকর্মের কথা ভাগ্যে লিখে দেয়া হয়েছে। এমনকি আমার এই লেখাটিও।
ছবিঃ সংগৃহীত
২৬/০১/২০২০ ইং
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:০৭