হাদীসে এসেছে, হাশরের ময়দানে সূর্যকে সৃষ্টি জীবের খুব কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে। এমনকি সূর্য আর মাথার মাঝে মাত্র এক মাইলের দূরত্ব থাকবে। হাদীসের বর্ণনা মতে, সেদিন গোনাহের পরিমান অনুপাতে মানুষের শরীর ঘামে ডুবে থাকবে। কারো ঘাম হবে হাঁটু পর্যন্ত কারো হবে কোমর পর্যন্ত, কারো আবার গোলা পর্যন্ত। এমনও হবে যে, কেউ কেউ নিজের ঘামে পুরোপুরি ডুবে যাবে। অতি কষ্টে সাতরিয়ে সাতরিয়ে নিজেকে সামলে রাখবে।
অন্য বর্ণনায় পাওয়া যায়, ‘‘সূর্যের প্রখর তাপে মাথার মগজ গলে যাবে এবং তা নাক-মুখ, কান-চোখ দিয়ে বেয়ে বেয়ে পড়বে।’’ ভাবতেই ভয় লাগে। গাঁ ছমছম করে উঠে। সেদিন কী তাহলে মানুষগুলি ‘জিন্দালাশে’ পরিণত হবে? প্রচণ্ড যন্ত্রণায় মৃতপ্রায় হয়েও চরম অসহয় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে? আর্তনাদ করেও কি সাহায্য পাবে না? পালাতে চেয়েও কি কেউ পালাতে পারবে না? উফ, কী সাংঘাতিক চিত্র! কী ভয়ানক পরিণতি!
কিন্তু প্রশ্ন হলো; পুরো ‘মাহশারে’ই কি এই পরিস্থিতি বিরাজ করবে? এর উত্তরে ‘না’ বলতেই হবে। কারণ সেখানে এমন কিছু মানুষও থাকবে যাদের মাথার উপরে আরশের ছায়া থাকবে। রহমতের শীতলতা থাকবে।
কিয়ামতের দিবসে সাত শ্রেণির মানুষ আরশের ছায়া লাভ করবে। যা পবিত্র হাদীস দ্বারা প্রতিয়মান হয়। এ ব্যাপারে নবীজি সাঃ এর যে হাদীসটি রয়েছে তা বর্ণনা করেছে হযরত আবু হুরায়রাহ রাঃ এবং তা সংকলন করেছেন ইমাম বুখারীসহ আরো অনেকেই।
এরশাদ হয়েছে,
‘‘আবু হুরায়রাহ রাঃ কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা সাত ব্যক্তিকে সেই দিনে তাঁর (আরশের) ছায়া দান করবেন যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া থাকবে না। তারা হল, ন্যায় পরায়ণ বাদশাহ। সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহ তা’আলার ইবাদতে অতিবাহিত হয়। সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে সম্পৃক্ত থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন (তাদের মৃত্যু) হয়। সেই ব্যক্তি যাকে কোন কুলকামিনী সুন্দরী (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) আহবান করে, কিন্তু সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি। সেই ব্যক্তি যে দান করে গোপন করে; এমনকি তার ডান হাত যা প্রদান করে, তা তার বাম হাত পর্যন্তও জানতে পারে না। আর সেই ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার উভয় চোখ বেয়ে বেয়ে আশ্রু পড়ে।’’ [বুখারি ৬৬০, ১৪২৩, ৬৪৭৯, ৬৮০৬, মুসলিম ১০৩১, তিরমিযি ২৩৯১, নাসায়ি ৫৩৮০, আহমদ ৯৩৭৩, মুয়াত্তা মালিক ১৭৭৭]
তারা কতই না ভাগ্যবান! যারা এই সাতটি মহৎ গুণ জীবনে ধারণ করতে পারে।
আসুন, খোদার কাছে ফরিয়াদ করি, তিনি যেন আমাদেরকে ভাগ্যবানদের কাতারে শামিল করেন।
ছবিঃ সংগৃহীত
..................
২৮/০১/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৭