somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সাইফ নাদির
এক খণ্ড সাদা পাতায় পুরো পৃথিবী লিখবো বলে কলম ধরেছি। এক খণ্ড কাঁদা মাটিতে পুরো সবুজ ফলাবো বলে হাল বেয়েছি। এক খণ্ড রঙিন কাগজে পুরো বিশ্ব আঁকবো বলে রং তুলি এনেছি। এক খণ্ড হৃদয়ে পুরো দুনিয়া পুষবো বলে দৃঢ়প্রত্যয়ি হয়েছি।

কোরআন-হাদীসের আলোকে পবিত্র শবে বরাত

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কোরআনের আলোকে পবিত্র শবে বরাত:
মহান আল্লাহ বলেন,
হা-মীম, এই স্পষ্ট কিতাবের শপথ। নিশ্চিয় আমি তা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ করেছি। নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। এ রাতে বন্টন করে দেয়া হয় প্রক্যেক হিকমতের কাজ। [সূরা দুখান, আয়াত নং- ১-৪]

এই আয়াতের বিশেষ কয়েকটি তাফসির উল্লেখ করা হলো,
১. মহান আল্লাহর বাণী, ‘‘এ রাতে বন্টন করে দেয়া হয় প্রত্যেক হিকমতের কাজ।’’ এর ব্যাখ্যায় হযরত ইকরিমা বলেন, মধ্য শাবানের রাতে বছরের সকল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, জীবিত-মৃত ও হাজিদের তালিকা তৈরি করা হয়। এ তালিকা থেকে কেউ-ই বাদ পড়ে না। [তাফসিরে তাবারী, খন্ড নং ১০, পৃষ্ঠা নং- ২২]

২. ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান আল্লাহ সকল বিষয়ের চূড়ান্ত ফয়সালা করেন শবে বরাতের রাতে এবং তা সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ফেরেশতাদের কাছে অর্পন করেন শবে ক্বদরের রাতে। [তাফসিরে বাগভী, খন্ড নং- ৭, পৃষ্ঠা নং- ২২৮]

৩. ইমাম কুরতুবী বলেন, এ রাতের চারটি নাম রয়েছে— ক. লাইলাতুল মুবারাকাহ, খ. লাইলাতুল বারায়াত, গ. লাইলাতছ ছাক্, ঘ. লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। [তাফসিরে কুরতুবী, খন্ড নং- ১৬, পৃষ্ঠা নং- ১২৬]
তবে এই আয়াতে ‘‘লাইলায়ে মুবারাকাহ’’ দ্বারা লাইলাতুল ক্বদর উদ্দেশ্য, এ ব্যাপারে অধিকাংশ মুফাসসির একমত পোষণ করেছেন।

হাদীসের আলোকে পবিত্র শবে বরাত:
১. হযরত আবু মুসা আশরায়ী (রা) নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়ালাম হতে বর্ণনা করেন যে, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রজনীতে অবতীর্ণ হন (বান্দার খুব নিকটে আসেন) এবং মুশরিক ও শত্রুতা পোষণকারী ব্যতিত তাঁর সকল বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। [ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৯]

২. হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এই রাত অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাতের মর্যাদা সম্পর্কে তুমি কি কিছু জানো?’ আয়েশা বললেন, কি এর মর্যাদা হে আল্লাহর রাসূল? তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই এক বৎসরে কতজন জন্মগ্রহণ করবে এবং কতজন মৃত্যুবরণ করবে— তা এই রাতে লিখে দেয়া হয়। এই রাতে মানুষের আমল মহান আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয় এবং রিযিক নির্ধারণ করা হয়। অতঃপর আয়েশা (রা) বললেন, হে নবী বলুন তো! কেউ কি আল্লাহর রহমত ছাড়া জান্নাতে যেতে পারবে? উত্তরে নবীজী বললেন, নাহ! আল্লাহর রহমত ছাড়া কেউ কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। এই কথাটি তিনি তিন বার বলেন। [মেশকাত, পৃষ্ঠা নং- ১১৫]

৩. হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যখন মধ্য শাবানের রাত আসে তখন সে রাতে জেগে জেগে আল্লাহর ইবাদত করো এবং পরদিন রোযা রাখো। কেননা মহান আল্লাহ সূর্যাস্তের সাথে সাথে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন, কে আছো ক্ষমা চাও, আমি ক্ষমা করে দিবো। কে আছো রিযিক চাও, আমি রিযিক দিয়ে দিবো। কে আছো বিপদ থেকে মুক্তি চাও, আমি বিপদ মুক্ত করে দিবো। এ জাতীয় নানাবিধ ঘোষণা ফজর পর্যন্ত চলতে থাকে। [ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা নং- ১০০]

৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মধ্য শাবানের রাতে মহান আল্লাহ তাঁর রহমতের ভান্ডার নিয়ে সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং হিংসুক ও হত্যাকারী ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং- ১৬৪২]

৫. হযরত আয়েশা (রা) বলেন, এক রাতে নবীজীকে বিছানায় না পেয়ে আমি সন্ধানে বেরিয়ে পড়লাম। অতঃপর তাঁকে আমি জান্নাতুল বাকিতে আসমানের দিকে মাথা উঠানো অবস্থায় দেখতে পেলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন, হে আয়েশা! তুমি কি এ ধারণা করেছো যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর অবিচার করেছেন? তখন আয়েশা (রা) বললেন, আমি এমনটা ধারণা করিনি তবে ভেবেছিলাম অন্য কোন বিবির নিকট আপনি গিয়েছেন। তখন নবীজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে পৃথিবীর আকাশে নেমে আসেন এবং বনি কালবের মেষের পশমের থেকেও বেশি মানুষের পাপ ক্ষমা করেন। উল্লেখ্য, বনি কালবের মেষের সংখ্যা ছিলো ত্রিশ হাজার। [জামে তিরমিযী, ১ম খন্ড পৃষ্ঠা নং-৯২]

উপরিউক্ত আয়াতের তাফসির ও হাদীস দ্বারা প্রমাণীত হয় যে, ফজিলতের দিক থেকে এ রাতটি লাইলাতুল ক্বদরের কিছুটা কাছাকাছি। এছাড়াও এর কিছু স্পেশাল ফজিলত ও আমল রয়েছে।
যেমন—
১. শবে বরাতের রাতে মাগরিবের পরে গোসল করে নেয়া, যাতে উত্তম রূপে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকা যায়। এই আমলটি মুস্তাহাব।

২. বরাতের রাতে তাওবার নির্দিষ্ট শর্ত মেনে আল্লাহর কাছে তাওবা করা। বিশেষ করে বান্দার হক্ব সংক্রান্ত বিষয়গুলো মিটিয়ে নেয়া।

৩. এ রাতে জীবনের সমূহ গোনাহ্ থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়া। এবং পাপমুক্ত জীবন গঠনের প্রতিজ্ঞা করা।

৪. এ রাতে বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ ও বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগিতে মশগুল থাকা। সম্ভব হলে কবর যিয়ারত করা। এটিও মুস্তাহাব।

৫. পরবর্তী দিন রোযা রাখা। কিংবা অন্যান্য মাসের মত আইয়ামে বীয, তথা ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখা। কোনো কোনো বর্ণনায়, শবে বরাতের আগের দিন ও পরের দিন রোযা রাখার কথাও বলা হয়েছে।

তাই আসুন, পৃথিবীর এই দুর্যোগময় সময়ে মহান আল্লাহর সমীপে আবেদন করি, যাতে তিনি আমাদেরকে চরম ক্ষতিকর এই কভিড ১৯ থেকে মুক্তি দান করেন। এবং এই রাতে প্রতিটি ঘরকে মসজিদ বানিয়ে আল্লাহর ক্বদমে সিজদাবনত হই।

ছবি সংগৃহীত
৯ এপ্রিল, ২০২০ ইং
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:০০
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×