সাইফুল্লাহ সাইফ
অশোক বৃক্ষটি গহীন বনের এক কোনে অনাদর অবহেলার পড়ে থেকেছিল বহুদিন । সেখানে রোদ এসে পৌঁছুত না । মাটিগুলো ছিল পাথরের মতো শক্ত ও অনুর্বর । ফলে গাছটি হয়ে পড়ল বিবর্ণ, মলিন ও নিস্তেজ । এমনকি ঠিকভাবে বেড়েও উঠতে পারছিল না । তার শাখা প্রশাখা জুড়ে ছিল রাজ্যের জরা ও জড়তা । মৃত্যুর কাছাকাছি নির্লিপ্ত জীবন । বৃক্ষসমাজ থেকে নির্বাসিত এক অচ্ছুৎ বৃক্ষ ছিল অশোক । যেন এভাবে একটি অনন্তকাল পার হল ।
একদিন সেই অনন্তকালের সমাপ্তি নিয়ে এলো কেবল একটি স্বর্ণলতা ।
লতাটি ছিল মসৃণ ও জীবন্ত । সোনালী আলোর প্রতিফলন খেলছিল স্বর্ণলতার শরীরজুড়ে । ভোরের সূর্যের মতোই স্নিগ্ধ-কোমল ছিল তার রং । যৌবনের মতো তার সতেজতা ।
একটি শালিকের ঠোটে করে স্বর্ণলতাটি উড়ে যাচ্ছিল আকাশ পথে । শালিক পাখিটি স্বর্ণলতাকে দিয়ে বানাতে চেয়েছিল তার প্রতীকী সোনালী বসত । কিন্তু উড়ন্ত পাখিটি অচিরেই এক নিষ্ঠুর শিকারির তীরবিদ্ধ হয়ে ঠোঁট থেকে ফেলে দিল স্বর্ণলতাটি । অতপর পাখিটি নির্মমভাবে বধ হল শিকারির দ্বারা ।
আর স্বর্ণলতাটি গিয়ে পড়ল নিদারুণ সেই অশোক বৃক্ষের কোলে ।
অশোকটি তখন ঘুমিয়ে ছিল দীর্ঘক্লান্ত ঘুমে । স্বর্ণলতাটি একটু একটু করে বিস্তৃত হতে শুরু করল অশোক বৃক্ষের শাখায় । দখল করে নিল অশোকের বিরান রাজ্য । রং মেখে তাকে সাজাতে আরম্ভ করল নীলস্বপ্ন বুননে ।
তারপর একদিন এক শীতল স্নিগ্ধ অনুভবে ঘুম ভাঙল অশোকের ।
অশোক অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল, এক বিষাদ অনন্তকাল পার করে ইতোমধ্যে তার দেহে যৌবনের ছোঁয়া লেগে গেছে । স্বর্ণলতার সজীবতা ও প্রাণরস নিয়েই এতোদিনে জীবন্ত হয়ে উঠেছে অশোক বৃক্ষটি ।
অশোক বৃক্ষটি তখন স্বর্ণলতার কানেকানে বলল, ‘বাঁচালে যখন এই মৃতপ্রায় বৃক্ষটিকে, থেকো জন্ম জন্মান্তরে!’
প্রত্যুত্তরে স্বর্ণলতাটি কিছু বলল না, শুধু অশোক বৃক্ষের প্রাণের সাথে তার প্রাণটিকে গভীর করে নিল, আরও সেঁধিয়ে ।
একদিন আবার দুর্দিন এলো ।
এক ভিনদেশী বনদস্যু এসে অশোক বৃক্ষের শাখাপ্রশাখা থেকে কেটে ফেলল স্বর্ণলতাটিকে ।
তারপর স্বর্ণলতা ও অশোকবৃক্ষ যোগে চিরকালের বিয়োগ নেমে আসে মহাকাল থেকে.....
তারিখঃ ২৪/০৫/১৪ ইং

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




