somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে গল্পঃ দাদু

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



দিনটা ছিলো রোজার দিন। ২০ রোজা চলছিলো সেদিন। সকালে ঘুম থেকে উঠি ৮ টায়। সে দিন আর রোজা রাখা হলো না। ঘুম থেকে উঠেই জেনো মনে মধ্যে কেমন একটা কুডাক ডাকতে শুরু করলো। মনটা কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে। খাট থেকে নেমে টয়লেটে যাবো এমন সময় অনুভব করি পায়ে প্রচন্ড ব্যথা। অনেক কষ্টে ২ টা পা দেওয়ার পরই মাটিতে পড়ে গেলাম। একটা চিৎকার করলাম। সাথে সাথে মা এসে বললো,
-কিরে কি হইছে?
-আম্মু পায়ে অনেক ব্যথা হাটতে পারতেছি না।
-ওহ আমি ভাবলাম কি না কি? এই ব্যথা তো কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।
-(আম্ম এতোটা পাত্যা দিলো না কারন খেলতে গেছে মাঝে মাঝেই এইরকম ব্যথা পাই আমি) আম্মু মলোমটা দিয়া যাও তো!
-নিয়া নে আমার অনেক কাজ বাকি।
.
অনেক কষ্টে ল্যাংড়াতে ল্যাংড়াতে অন্য রুমে গিয়ে মলোমটা নিলাম। আমি আর আম্মু তখনও বুঝি নাই যে এই ব্যথা যে এতো সহজে যাবে না এইটা পা ভাজ্ঞার ব্যথা ছিলো। দুপুরের দিকে যখন আমি ব্যথায় বেশি কাতরাচ্ছিলাম তখন আব্বু ব্যাপারটা খেয়াল করে। আব্বু জিজ্ঞাস করল,
-কিভাবে ব্যথা পাইলি?
-আমিও নিজেও জানি না সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি পায়ে অনেক ব্যথা আর ফুলে গেছে।
.
আব্বু কিচ্ছুক্ষণ রাগারাগি করলো তারপর ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলো যা সব বাবারাই করে থাকে।
.
রাতে ঘুমানোর পর অনেক দিন পর সপ্নে দেখি দাদুকে। সে গ্রামে থাকে। প্যারালাইজড রুগী। কিন্তু আমি সপ্নে দেখি দাদু পদ্মা নদীতে একটা ছোট নৌকা চালাচ্ছে। কিচ্ছুক্ষণ চালানোর পর দেখি কচুরিপানার সাথে লেগে নৌকাটা ডুবে যায়। দাদু আমার নাম নিয়ে ডেকে বলে সজিব আমাকে বাচা।
.
আমি তো আমার দাদুর আদর তেমন পাইনি। তাহলে দাদু আমাকে কেন ডাকলো। আর আমারই বা সপ্নে কেনো আসলো...? কিন্তু শুনেছিলাম আমি যখন ছোট ছিলাম দাদু নাকি আমার অনেক বেশি আদর যত্ন করত বাকি সব নাতি-নাত্নীদের থেকে।
.
সপ্নটা দেখেই আমার ঘুম ভেজ্ঞে যায়। বেশভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে কিছুই বলি নাই। সেদিন আবার স্কুল ছিলো রোজার মধ্যেও। সেদিন স্কুল থেকে এসেই শুনি সেই পদ্মা নদীতে "পিনাট-৬" ডুবার ঘটনা। সাথে আমার রাতে দেখা সপ্নটার কথা মনে পড়ে গেলো। এটা ছিলো? তার ব্যাখ্যা পাইনি আজও। ২২ রোজা ছিলো সেদিন। সেদিন আবার আমি রোজাটা রেখেছিলাম। সবাই একসাথে ইফতার করলাম। আমি নামাজ পড়ব কিন্তু তার আগে আব্বু নামাজ পড়ল। আব্বু নামাজ পড়ে এসে "কারবালার শহিদ্দের" ওয়াজ শুনচ্ছিলো। এমন সময় আব্বুর ফোনে একটা কল আসলো। কলটা ছিল আমার চাচার। আব্বু রিসিভ করতেই ওইপাশ থেকে শুনতে পেতো আমার চাচির কান্নার আওয়াজ আল্লাহ কুদরত কিনা জানি না আব্বু বলে উঠলো,
-আব্বা কি আছে?
-(কান্নার আওয়াজ আরও বেড়ে গেলো লাউড স্পীকার ছিলো না তাও আমি পাশ থেকে কান্নার রোল শুনতে পাচ্ছিলাম) জ্বি ভাই আব্বা আর নাই।
.
আব্বু আর কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দিয়ে আমার দিকে একো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো কেমন ভাষা ছিলো তা আমি কখন ভাবে পাইনি। আব্বু বলল,
-আব্বারে কারবালার ময়দান তো শহিদ হয়ে গেলো।
একটা শুনে আম্মুও কেঁদে উঠলো কিন্তু কেনো জানি আমার চোখ থেকে মাত্র ৩ ফোটা নিঃশব্দ অশ্রু পড়লো তারপর আর কিছুই হলো না। কিন্তু আমার বারবার ওই সপ্নটার কথা মনে পড়ছিলো। তাহলে দাদু কি আমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলো?
.
আমার পায়ে ব্যথা থাকার কারনে আব্বু আমাকে না নিয়েই গ্রামের বাড়ি চলে যায়। সেদিন রাতে আর আমি ঘুমাতে পারি নি। কিন্তু কোন ভয়ও পাইনি। আমি একটা রাতে বাহিরে বেড় হতাম না। সেদিন কি ভেবে জেনো একটা বাহিরে বেড় হই আম্মুর ফোনটা নিয়ে। আম্মু ঘুমিয়েছিলো সেই ফাকে। বাড়ির পাশে একটা গাছ ছিলো(গাছটার নাম মনে নেই) গাছের নিচে একটা বসার ব্যাঞ্চ আমি বসলাম। ফোনের ঘড়ির দিকে দেখলাম দেখি তখন ২:৩৭ মিনিট বাঝে তাও বুকে বিন্দু মাত্র ভয় ছিলো না। আমি দাদুর আদর তেমন পাইনি কিন্তু আমার ভিতর নাকি দাদুর প্রায় সব গুণগুলো ছিলো। অনেকের মুখে শুনেছি সে নাকি অতি ভালো একজন লোক ছিলো। আজও আফসোস করি যদি সেদিন সপ্নের কথাটা কাউকে বলতাম ঘরের তাহলে হয়তো দাদুকে শেষ বারের মতো দেখতে পেতাম।
.
আব্বুর সাথে এখন যদি কোন সময় ইমোশনাল কোন কথা হয় আব্বু সব সময় বলে যেদিন বাবা হবি সেদিন বুঝবি বাবার কষ্টটা কি জিনিস...!
.
যারা দাদু-দাদির ভালোবাসা পান নি। তারা একটু হলেও এটা থেকে কিছু মুহূর্তের অনুভূতি বুঝতে পারবেন। এখন দাদু-দাদি,নানা-নানি,চাচা-চাচি,খালা-খালুর সবার ভালোবাসার অংশ না পেলেও একজনার একটু ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করতে চাই নিজেকে এখন সে যদি একটু ভালোবাসা দেয় ওয়াদা করে বলবো দাদি,নানা-নানি,চাচা-চাচি,খালা-খালুর সবার ভালোবাসার অংশ ও আমার ভালোবাসার সব তার উপর উজাড় করে দিবো। অনেক বেশি ভালোবাসি তাকে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫৫
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×