ব্লগার জুলভার্ন সেদিন একটি পোস্ট দিয়েছিলেন, মানুষ কেন অমর হতে চায়? যত বয়স হচ্ছে এই প্রশ্নের সাপেক্ষে উত্তরটাও পরিবর্তন হচ্ছে, এবং উত্তরটা বড় হতে হতে একটা হলিস্টিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিনত হচ্ছে, যেটাতে জীবনকে উপভোগ করার জন্য বেঁচে থাকার সাথে আরও বড় উদ্দেশ্যকে যোগ করছে । সে যাই হোক, কয়েকদিন ধরে মানুষের গড় আয়ু নিয়ে পড়ছিলাম। আসলে মানুষ কতদিন বাঁচবে / না বাঁচবে এর সিদ্ধান্ত কোনটাই মানুষের হাতে নেই, স্রষ্টার সিদ্ধান্তই এখানে চুড়ান্ত৷ তাই অমর না হলেও গড় আয়ু বাড়া / বেশী বছর সবল ভাবে বেঁচে থাকেন যারা, তারা স্রষ্টার একটু হলেও বেশী সান্নিধ্য প্রাপ্ত অবশ্যই। এর মাঝেই একটি প্রশ্ন মনের মাঝে চলে আসে, পৃথিবীতে বেশী বছর বাঁচেন কোন অঞ্চলের মানুষ? কেন তারা বেশী বছর বাঁচেন? তাদের কি কোন অভ্যেস আছে যা অন্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন? তাদের খাদ্যাভ্যাসই বা কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর জানাতে গিয়ে বিশ্বে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন দুই ডেমোগ্রাফার Gianni Pes আর Michel Poulain. তারা সামনে নিয়ে এসেছিলেন Blue zone
সহজ বাংলায় Blue zone কি?
ইউএসএর লোমা লিন্ডা, জাপানের ওকিনাওয়া, ইতালীর সার্ডিনিয়া, গ্রীসের ইকারিয়া, কোস্টারিকার নিকোয়া এই পাঁচটি অঞ্চলের মানুষের গড় আয়ু অন্য যেকোন অঞ্চলের চেয়ে বেশী বলে এইসব অঞ্চলকে ব্লু জোন বলা হয়েছে। এইসব অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে অনেকেই আছে একশত বছর বেঁচেছেন। আশি পার করাটা এখানে স্বাভাবিক।
কিন্তু কেন?
গবেষকরা বেশ কয়েকটি কারন খুঁজে বের করেছেন -
প্রথমেই-
বিশ্বাস ( স্রষ্টা কিংবা কোন জীবন রীতি)
এরপর বাকিগুলো-
১) কোন নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বাঁচা।
২) স্ট্রেস ম্যানেজ করা।
৩) খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রন।
৪) কায়িক পরিশ্রম করা
৫) পরিবার ও কমিউনিটি কেন্দ্রিক বসবাস।
৬) সামাজিক জীবন যাপন।
জেনে অবাক হয়েছি যে, এইসব অঞ্চলে খাদ্যাভ্যাস সবুজ কেন্দ্রিক বা প্ল্যান্ট বেজড। তবে, চাহিদা পূরনের জন্য প্রানীজ আমিষ কেন্দ্রিক খাদ্যাভ্যাস ( অবশ্য প্রানীজ আমিষের গ্রহন মাত্রা অন্য অঞ্চল থেকে খুবই কম) , প্রাকৃতিক উপাদান নির্ভর ।
দেখতে পারেন-
আপনার খাদ্যাভাস কি আপনার জিনকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে ?
খুব বেশী কিছু লিখতে ইচ্ছে করছে না আর। আমি জানি, অনেকেই আছেন যারা ব্লু জোনের উপাত্তকে গ্রহন করতে দ্বিধা করতে পারেন। বিজ্ঞান এখন র্যান্ডোমাইজড কন্ট্রোল ট্রায়াল, এনালাইসিস, মেটা এনালাইসিসের যুগ। কিন্তু বিজ্ঞান নিয়ত পরিবর্তনশীল, অনেক কিছুই বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা বেশ দুরূহ ব্যাপার। এটা বিজ্ঞানের একটা খুঁত এবং সৌন্দর্য । অনেকেই বলবেন, ব্লু জোন শুধু এই পাঁচটা অঞ্চলেই কেন অন্য জায়গায়ও আছে, অনেকেই শতায়ু হোন। আমাদের দেশেই ধরুন না কেন ? আমি আমাদের দেশে একশত বছর বয়সী মানুষ দেখেছি, নিরোগ সুস্থ আশি দেখেছি, নিয়ন্ত্রিত অসুস্থতায় ভালো আছেন এমনও অনেককে দেখেছি। এছাড়াও আধুনিক মেডিক্যাল ইন্টারভেনশন ক্ষেত্র বিশেষে মানুষের আয়ু বাড়িয়ে দিয়েছে। একটা জিনিস ভেবে দেখেছেন ? আমাদের বাংলায় পূর্বপুরুষদের এই ব্লু জোনের লোকেদের কিন্তু কাছাকাছি জীবন অভ্যাস ছিল ( যারা স্রষ্টার দ্বারা নির্বাচিত হয়ে বেশী বছর বেঁচেছিলেন)।এখন ? সাউথ এশিয়ান মানুষের Body mass index (BMI) বাইশের নিচে আর আশেপাশে থাকা উচিত যেখানে , সেখানে আমাদের দেশে ওভার ওয়েট, ওবেস মানুষের সংখ্যা অনেক। জিনগতভাবে সাউথ এশিয়ানদের ভিসেরাল ফ্যাট জমার হার অন্য যেকোন অঞ্চলের চেয়ে বেশী। অথচ পাল্লা দিয়ে আমরা প্রসেসড ফুড, ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকে পড়েছি, এছাড়া আমাদের দেশে কঠোর নিয়ম আইনের প্রয়োগ না থাকায় খাদ্যে ভেজাল তো আছেই। যেখানে পশ্চিমাদের কিছু অংশ এখন প্রসেসড ফুডের যুগ থেকে বের হতে চাইছে। তারা আমাদের নবীজির সপ্তাহে দুইদিন রোজা রাখার পরামর্শকে আধুনিক বিজ্ঞানের সংজ্ঞায় 5:2 diet / Intermittent fasting বলে সামনে নিয়ে আসতে চাইছে।
স্রষ্টা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন শ্রেষ্ঠ প্রানী হিসেবে, মানুষ তার আশে পাশের উপকরণ/ টুলস ব্যবহার করতে পারে - নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারে। কাজেই মানুষ যদি স্রষ্টায় বিশ্বাস - সঠিক সিদ্ধান্ত - জীবন আচরন - খাদ্যাভাস এই টুলসগুলো ব্যবহার করতে পারে, স্রষ্টা হয়তো মানুষের জীবন কিছুটা দীর্ঘায়িত করে তার ইবাদত ও সৃষ্টির সেবা করার সুযোগ দান করতে পারেন।
Blue zone