ভেনিসকে ইউরোপের সবচেয়ে রোমান্টিক শহর বলা হয়। কিন্তু খুব দ্রুতগতিতে ডুবে যাচ্ছে সবার প্রিয় এই শহরটি। এটা ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে পূর্বপ্রান্তের এড্রিয়াটিক সাগরের দিকে। এই শহরের সৌন্দর্য, রূপ-গুণ মানুষকে তার দিকে টেনে নিয়ে যায়। ভেনিস উত্তর-পূর্ব ইতালির ভেনেতো অঞ্চলের একটি প্রধান শহর। পোপ ও পিয়েভ নদীর মুখে ছোট-বড় প্রায় ১২০টি দ্বীপ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই শহরটি। পৃথিবীর অন্যতম একটি আকর্ষণীয় ও সৌন্দর্যমণ্ডিত শহর হচ্ছে ভেনিস।
প্রতি বছর হাজার লোক সারা বিশ্ব থেকে এখানে আসে শুধু এর সৌন্দর্য দেখতে। ভেনিসের আয়তন মোট ৪১৪.৫৭ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে স্থল ভাগ ১৫৬.৮৪ বর্গ কিলোমিটার ও পানিতে ২৫৭.৭৩ বর্গ কিলোমিটার। ২০০৯ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী এই শহরের লোক সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার ৬৬০ জন। এই শহরটি এখন ৫ গুণ দ্রুতগতিতে পানিতে ডুবে যাচ্ছে। এবং ধীরে ধীরে হেলে পড়ছে পূর্বপ্রান্তের এড্রিয়াটিক সাগরের দিকে। কিন্তু ভেনিসের পানির স্তর স্থিতিশীল রয়েছে। গত এক দশকজুড়ে প্রতিবছর ভেনিস ২ মিলিমিটার হারে পানিতে তলিয়েছে এবং পূর্বে হেলে পড়েছে। আগের গবেষণাগুলোতে এই হার উল্লেখ করা হয়েছিল বছর প্রতি ০ দশমিক ০৪ মিলিমিটার। ভেনিসের ১১৭টি দ্বীপ হ্রদের সংযোগ ভূমিগুলোও ডুবে যাচ্ছে। শহরটির উত্তরাঞ্চল প্রতিবছর ২ থেকে ৩ মিলিমিটার ডুবছে। আর একই সময়ে দক্ষিণাঞ্চল ডুবছে ৩ থেকে ৪ মিলিমিটার হারে। প্লেট টেকটনিক্সের মতো প্রাকৃতিক কারণে ডুবছে ভেনিস। এড্রিয়াটিক প্লেট বলয়ে আছে ভেনিস। এই প্লেট এপেনিনেস পর্বতমালার নিচ থেকে সরে যাওয়ার কারণে এ শহর এবং আশপাশের এলাকা হেলে পড়ছে। ভেনিসে বন্যার প্রবণতাও অনেক বেশি। ফলে শহরের অধিবাসীদের এখন সারাবছরজুড়ে প্রায় সময়ই কাঠের সাঁকোর ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়। ভেনিস শহরটি সবার কাছে স্বপ্নের শহর হিসেবে পরিচিত। তাই অনেকে এর নাম দিয়েছে ‘রা ডমিন্যান্তে’। কেউ আবার বলেন ‘সিটি অব লাইট’ আবার অনেকে প্রশংসা করে এর নাম বলে থাকেন ‘সিটি অব রিজেস’। শত শত বছর ধরে শত শত নামে ডাকা হয়েছে এই শহরকে। রোমান সভ্যতার পীঠস্থান এই শহরের বর্তমান নাম ভেনিস, যাকে আবার ‘কুইন অব দ্যা আড্রিয়াটিক’ ও বলা হয়। এই শহরের সৌন্দর্য ও সুখ্যাতির কারণে বছরের পর বছর ধরে এই শহরটি সবার আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দু।
অজস্র পানির মাঝে আলোকোজ্জ্বল একটি শহর ভেনিস। ভেনিসকে নিয়ে সবাই রঙিন স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করে। তবে সবার প্রিয় এই ভেনিস শহরের জন্য একটি খারাপ অশনি সংকেত দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেই খারাপ খবরটি হচ্ছে, আগামী ৫০-১০০ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যমণ্ডিত এই শহরটি। আছে ভেনিসের প্রতিটি বাড়িতে। ৯০০ বছরের পুরনো সেন্ট মার্কস ব্রাসিলিকা আর ব্যাসিনিয়ায় ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্রোঞ্জের ঘোড়া রোমান সম্রাটদের বিপুল বৈভবের কথা মনে করিয়ে দেয়। ভেনিসে বেড়াতে গেলে যে কেউই গন্ডোলায় সওয়ার হন। লম্বা লম্বা সরু নৌকাকে এখানে বলা হয় গন্ডোলা। আসলে পুরো ভেনিস শহরটা পানির ওপর ভাসছে। শহরের টুকরো টুকরো অংশগুলো আদতে এক একটি দ্বীপ। দ্বীপগুলো একেকটি অন্য দ্বীপের সঙ্গে বাঁকানো সেতুর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে। সেতুগুলোর তলা দিয়ে নীল জলরাশি বয়ে চলেছে অভিরাম আর দুই পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন স্থাপত্যের হাজারো নিদর্শন। কিন্তু ভয়ের খবর এই যে, স্বপ্নের মতো সুন্দর এই শহরটি মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আর সেই রোগটি হচ্ছে, প্রতিদিন নাকি এই শহরটি একটু একটু করে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাবে মেরু অঞ্চলে বরফ গলে দিন দিন সমুদ্রের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে ক্রমে তলিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নের ভেনিস।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:৫৯