somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাংস্কৃতিক গণহত্যা

১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১০, ৯, ৮, ৭, ৬, ৫, ৪, ৩, ২, ১ !! শুভ নববর্ষ

এই গণনার মধ্যদিয়ে ঢাকা শহরে উন্মত্ত উৎযাপনের আরেকটি রাত্রি শুরু হয়। আমরা দেখি এর আগেরদিন প্রগতিশীল নামধারী সামান্য কিছু লোক খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিভাবে রাত্রটিকে সর্বাধিক পরিমাণ উপভোগ করবে। বর্তমান যুগে উপভোগ শব্দের অর্থ কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নিজের প্রবৃত্তি বা খায়েশ পরিপূর্ণ করা। মানুষ মদ, বেয়ার ইত্যাদি মাদকদ্রব্যাদি গ্রহণ করে এমন এক পরিস্থিতিতে পৌঁছে যায় যে সে তখন বুঝতেই পারে না সে কত বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে। শহরের হোটেল বা রেষ্টুরেন্টগুলোতে অসামাজিক কার্যক্রম উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। তথাকথিত “আধুনিকীকরণ”- এর এই পথে শীঘ্রই আমরা মনুষত্যের সব গুণাবলী হারিয়ে ফেলব। এখন প্রশ্ন উঠে কোথা থেকে আমরা এই ধ্বংসাত্বক সংস্কৃতি গ্রহণ করছি ? নিশ্চয়ই পশ্চিমাদের কাছ থেকে।

মিডিয়াগুলো দেখাতে চায় পশ্চিমা দেশগুলো হচ্ছে দুনিয়াতে স্বর্গস্বরূপ, কিন্তু পরিসংখ্যান বলে অন্য কথা। ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ৯০৪২৭ টি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ ধর্ষণ হয় তার বিপরীতে মাত্র ১৬ ভাগ মামলা হয়। তাহলে সঠিক সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৬৫০০০০। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে ১৬৯২৯ টি খুন, ৪৪৫১২৫ টি ডাকাতি, ২১৭৬১৪০ টি চুরি এবং ১৪০৮৩৩৭ টি সহিংসতার মামলা পুলিশের কাছে লিপিবদ্ধ হয়েছে। আমেরিকাতে ৫০ ভাগ বিয়ের সমাপ্তি ঘটে তালাকের মাধ্যমে। এই পরিসংখ্যান থেকে সহজেই বুঝা যায় যে পাশ্চাত্য সমাজে মানুষ কিভাবে তার সীমা লঙ্ঘনের মাধ্যমে নিজের মনুষ্যত্ব হারিয়েছে।

কিন্তু এই পরিসংখ্যানটি তাদের স্বাধীনতার ধারণার আলোকে খুব বেশী বিষ্ময়কর নয়। আমরা যদি এই ধারণাটি নিয়ে সূক্ষভাবে চিন্তা করি তাহলে দেখা যায় পাশ্চাত্য সমাজে “স্বাধীনতা” বলতে বুঝায় মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন, তারা সাধ্যের মধ্যে যা কিছু আছে তা করতে পারে এবং মস্তিষ্কপ্রসূত যে কোন উপায়ে তার ক্ষুধা, যৌন ও ধর্মীয় প্রবৃত্তিগুলো পূরণ করতে পারে। যেকোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষই একমত হবে যে স্বাধীনতার এই ধারণাটি যেকোন সমাজের জন্য ধ্বংসাত্মক। স্বাধীনতার এই ধারণাটির ফলস্বরূপ দেখা যাচ্ছে পরকিয়া, ব্যভিচার, অশ্লীলতা, মাদকসেবন, মা-বাবার অবাধ্যতা ইত্যাদি পাপাচারগুলো বাড়ছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তা বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান সময়ে সবচেয়ে সাংঘাতিক ব্যাপার হচ্ছে আমরা আমাদের চিন্তা চেতনার বিসর্জন দিয়ে এই পাশ্চাত্য সংস্কৃতিগুলো গ্রহণ করছি। যেসব কাজ আমরা আগে ঘৃণা করতাম এবং সমালোচনা করতাম যেমন- রঙজ্বলা, ঢিলা, ছেঁড়া জিন্স পড়া; বিয়ের আগে শারীরিক সম্পর্ক ইত্যাদি কাজ এখন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। আমরা যে অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের অনুসরণ করছি তা প্রমাণের জন্য এই উদাহরণগুলোই যথেষ্ট নয় কি? আমাদের অন্য সব কাজে যেমন কম্পিউটার, মোবাইল, কার কেনা বা জীবিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে যতবড় তারকাই বলুক না কেন, আমরা কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় আমাদের নিজস্ব চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগাই। কোন একটি সংস্কৃতি গ্রহণের ক্ষেত্রেও কি আমাদের এরকম চিন্তা করা উচিৎ নয়? আমাদের কি পাশ্চাত্য সভ্যতা অনুসরণের ক্ষেত্রে এর উৎপত্তি, লক্ষ্য ও পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই? একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি হিসেবে স্বচ্ছ জ্ঞান অর্জন করার পরই আমাদের কোন সংস্কৃতি বা ধারণা গ্রহণ করা উচিৎ। একইভাবে ইসলামের ক্ষেত্রেও আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে তা গ্রহণ করব।

একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে আমরা সহজেই বুঝি যে আমাদের জীবন এবং আমাদের জৈবিক বৈশিষ্টগুলো আমাদের নিজেদের সৃষ্টি নয়। এগুলো আমাদের মধ্যে সৃষ্টি করে দিয়েছেন এক মহান স্রষ্টা। তাই যদি আমরা ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে একটি শান্তি-পূর্ণ জীবন অতিবাহিত করতে চাই এবং নিজের প্রবৃত্তি সঠিকভাবে পূরণ করতে চাই তাহলে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে সেই স্রষ্টা, আল্লাহ সূবহানাহু ওয়া তায়ালার দেয়া বিধান অনুযায়ী। নিশ্চিতভাবে এটিই একমাত্র সঠিক ও নিখুঁত পথ এবং ইতিহাসই এর উজ্জ্বল সাক্ষী। একজন মুসলিম হিসেবে আমরা যদি আমাদের বিশ্বাসের বিপরীত কোন জীবনাদর্শ অনুসরণ করি তাহলে তা দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় ক্ষেত্রে আমাদের মূর্খতার পরিচয় বহন করবে।

পশ্চিমা বিশ্ব স্বাধীনতা বলতে যা বুঝায়, প্রকৃতপক্ষে তা আসলে কিছু হলিউড তারকা ও জনপ্রিয় ব্যক্তিদের দাসত্ব করা। ইসলাম মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে স্রষ্টার দাসত্বে নিয়োজিত করেছে। ইসলামও মানুষের বিনোদন ও আনন্দের অনুমোদন দেয়, কিন্তু তা হতে হবে একটি পরিপূর্ণ পথনির্দেশ অনুযায়ী। ইসলাম পাশ্চাত্য সভ্যতার মত প্রবৃত্তি পূরণের পথ স্বাধীন করে দেয়নি, যাতে আমরা নিজের যেভাবে খুশি সেভাবে চলতে পারব। তাই একটি পরিপূর্ণ ইসলামিক সমাজে অস্বাভাবিকতা দেখাই যায় না। তাই পশ্চিমারা পরিকল্পিতভাবে তাদের সংস্কৃতিগুলো আমাদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। থার্টি ফার্ষ্ট নাইট, ভ্যালেনটাইন্স ডে, ফ্রেন্ডশীপ ডে, নববর্ষ ইত্যাদির মাধ্যমে তারা আমাদের একটি চিন্তাহীন জাতিতে পরিণত করতে চায় যাতে আমরা তাদের কার্যক্রমগুলো অন্ধভাবে বাস্তবায়ন করতে পারি।

এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পশ্চিমা ও তার সহযোগীরা মুসলিম তরুণদের বিশেষ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। তাদের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সাহায্যে তারা তরুণদের মধ্যে এমন চিন্তা ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে স্বাধীনতা, ভোগ ও ঈন্দ্রিয় তৃপ্তি এগুলোই জীবনের সবকিছু। যদি থার্টি ফার্স্ট নাইট আমাদের জীবনের সবচেয়ে মজাদার, উপভোগ্য, শ্রেষ্ঠ রাত হয় তাহলে পরের দিন আমাদের ঘুম থেকে উঠার লক্ষ্যটা কি?

এখনই আমাদের মৌলিক বিষয়গুলোতে ফিরে যাওয়া উচিৎ যেমন- কোন কিছু করার আগে চিন্তা করা। আমাদের নিজেদের পরিচয় সবার সামনে তুলে ধরতে আমাদের সেই সোনালী অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া উচিৎ। একজন চিন্তাশীল ব্যক্তি হিসেবে, আমরা শুধু মিডিয়ায় বিজ্ঞাপণ দেখে কোন অহেতুক জিনিস গ্রহণ করব না। আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা আমাদের মস্তিস্ক দান করেছেন এবং আমাদের উপহার দিয়েছেন এক মহান শক্তি - চিন্তাশক্তি। তাই আমাদের এটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিৎ।

হে তরুণ!

১। আমাদের সমাজ চিন্তাহীন মানব সমাজে পরিণত হওয়ার আগে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করঃ
২। ইসলামিক ও পাশ্চাত্য সমাজের ভেতর-বাহির জান।
৩। ইসলামিক ও পাশ্চাত্য সমাজের বিশ্লেষণ ও তুলনার মাধ্যমে ইসলামিক সমাজের সৌন্দর্য ও পাশ্চাত্য সমাজের অন্তঃসারশূণ্যতা খুঁজে বের কর।
৪। আমাদের সত্যের পক্ষে কথা বলার ও ন্যায়সঙ্গত কাজ করার সাহসিকতা অর্জন করতে হবে।
৫। আমরা কোন সংস্কৃতি অন্ধভাবে গ্রহন না করে সম্পূর্ণ বিচার বিশ্লেষণের পর তা গ্রহণ করব।
৬। সূক্ষ পর্যবেক্ষণের পর আমরা যে সিদ্ধান্ত গ্রহন করব তা সবার কাছে নিয়ে যাব এবং তা সমাজে বাস্তবায়ন করব।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×