ছেলেটি বাসায় ফিরছিলো, সামান্ন বৃষ্টি ঝরছে, রাস্তায় পৌঁছাবার আগেই বৃষ্টির ফোটা গুলো বড় হতে শুরু করলো, সেই সাথে বেশ দমকা বাতাসও দু-একবার। মনে-মনে বেশ অবাক হল আবহাওয়ার এই আচমকা পরিবর্তনে!
যাই হোক এবার একটু দ্রুত পা ফেলতে চাইলো। সাথে-সাথেই জিন্স এর প্যান্টের ভিতরে থাকা মোবাইল ফোন বেজে উঠলো, যেটা বের করতেই বিস্ময়, ছেলেটির এক অপার্থিব জনের ফোন, যার ফোন পেলে বা এসএমএস বা কারণে-অকারণে দু-একটি কথা শুনলে পৃথিবী রঙিন হয়ে উঠে মুহূর্তেই!
এমনই তার মাধুর্যতা, মোহময়তা, আকর্ষণ, আবেদন আর আহ্বান! নাহ, এই আহ্বান তার নয়, আদৌ নয়, তার প্রতি এই আবেদনটা ছেলেটির নিজেরই তৈরি করা! মেয়েটির প্রতি ছেলেটির ভাবনাটা এতটাই গভীর ও গাড়! এটাকি মেয়েটির প্রতি ছেলেটির ভালোবাসা? নাকি প্রেম? একা-একা অনেক-অনেক বার এই প্রশ্নের উত্তর ছেলেটি খুঁজেছে, কিন্তু পায়নি।
আসলে এটা কোন প্রেম বা ভালোবাসা নয় এটা অন্যকিছু, ভিন্ন আকর্ষণ, আলাদা আবেগ যেটা শুধু বোঝা যায়, কিন্তু বোঝানো অসম্ভব!
কি করে বোঝাবে? নিজেই তো বোঝেনা সে!
মেয়েটিঃ “আপনি কি চলে গেছেন?”
ছেলেটিঃ “নাহ, যাচ্ছি এই বেরুলাম মাত্র”
মেয়েটিঃ “কতদূর গিয়েছেন?”
ছেলেটিঃ “এইতো গেটের কাছেই”
মেয়েটিঃ “একটু দাঁড়াবেন, আমিও যাব?”
ছেলেটিঃ হ্যাঁ, দাঁড়াচ্ছি, আসুন। আর (মনে-মনে) আরে দাঁড়াবো মানে, অনন্তকাল, অনন্ত সময়, যুগ-যুগ ধরে দাড়িয়ে থাকতে পারি! আপনি একবার বললেই হল... আর কোন প্রশ্ন নেই।
বৃষ্টি বেশ জোরে সরেই এসেগেল, আহ... এ যেন বৃষ্টি নয়, সয়ং বিধাতার দেয়া দু হাত ভরে দেয়া আশীর্বাদ! এযে কল্পনারও অতীত! ইস জীবনের কোন এক পুন্য কাজের ফল পাচ্ছি হাতেনাতে!
কি অপার্থিব সুখের আবেশে ছেয়ে গেল মন-প্রান আর পুরো অন্তরাত্মা, সে বোঝাবার নয়!
মেয়েটি এসে গেল... “এতো বৃষ্টি নেমেছে, এখন কি সিএনজি পাওয়া যাবে?”
চলুন দেখি চেষ্টা করে, আশা করছি পেয়ে যাবো।
দুজনে মিলে রাস্তা পেরিয়ে ওপর পাশে গিয়ে দাড়িয়ে আছে অনেক-অনেকক্ষণ কিন্তু সিএনজির দেখা নাই।
এবার মেয়েটি-ই প্রস্তাব দিল, “সিএনজি বোধয় আর পাওয়া যাবেনা, একটা রিক্সা নেন”
ছেলেটি একটি রিক্সা দাড় করালো, মেয়েটি রিক্সায় উঠলো।
ছেলেটিঃ “ঠিক আছে আপনি যান, আমি আর একটা রিক্সায় যাচ্ছি”
মেয়েটিঃ “আরে নাহ, এতো বৃষ্টিতে ভিজবেন নাকি, চলে আসুন, আর রিক্সাও পাবেন কিনা তার ঠিক নেই”
ছেলেটিঃ একটু আমতা-আমতা করে, “আমিও উঠবো! আপনার অসস্থি হবেনা?”
মেয়েটিঃ আরে কিসের অসস্থি? পরিস্থিতি তো বুঝতে হবে? আর আমিই তো আপনাকে দাড়াতে বলেছি, তা না হলে এতক্ষণ হয়তো বাসে উঠে আপনি অনেকটা এগিয়ে যেতে পারতেন? সেটা অবশ্য ঠিক।
এবার ছেলেটিও উঠে পড়লো, যথাসম্ভব দুরত্ত! বজায় রেখে, তবুও গাঁ ছোঁয়া-ছুয়ি! বৃষ্টি ভেজা রিক্সায় হুক তুলে কি আর না ছুঁয়ে বসা যায়?
এভাবে ভিজতে-ভিজতে আর অল্প কিছু কথা আর দুজনেরই কিছুটা অসস্থি সাথে নিয়ে এক সময় পৌঁছে গেল তাদের নিকটতম গন্ত্যব্যের কাছাকাছি। এবার ছেলেটি মেনে পড়লো একটু আগে-আগেই কারণ লোকচক্ষু আর দূষিত মানসিকতা, কে-কি ভাববে, কিভাবে নেবে? এইসব ভেবেভুবে।
চলে গেল যে যার মত করে।
পরদিন ছেলেটির প্রচণ্ড জ্বর এলো, দুজনের দেখা হলনা... মেয়েটি ছেলেটির ফেসবুক স্ট্যাটাস দেখে জানতে পারলো যে ছেলেটি জ্বরে পুড়ছে। এতে তার বেশ অস্বস্তি হল, কিছুটা বিব্রতও, কারণ তার কারনেই ছেলেটি জ্বরে পড়েছে, অন্তত মেয়েটির অপরাধবোধ তেমনই।
তাই সে ছেলেটিকে মোবাইলে মেসেজ পাঠাল......
“SORRY!”
ছেলেটিঃ কেন?
মেয়েটিঃ “এই যে আপনার জ্বর এসেছে, আমার জন্যই তো এলো!”
ছেলেটিঃ “আরে, কিজে বলেন? জ্বর তো এমনিতেই এসেছে, আসার কথা ছিল তাই এসেছে, আপনি কেন বিব্রত হচ্ছেন?”
মেয়েটিঃ আবারো SORRY, YOU TAKE CARE, তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুন! আল্লাহ হাফেজ”
ছেলেটিঃ ভালো থাকুন, আল্লাহ হাফেজ। আর মনের সুখে! হ্যাঁ এই জ্বর তার কাছে সুখের-আনন্দের আর আত্মহারা হবার!
কারণ এই জ্বরের কারনেই মেয়েটি আজ উদ্বিগ্ন! তাকে নিয়ে, তাকে ভেবে... ইস কি সুখ! কি সুখ!
এমন উপলখ্য আর জ্বর যেন আসে ফিরে বারে-বারে!
আর গান ধরলও......
“তোর এক কথায়, আমি রাখবো হাজার বাজী”
তোর ইশারায়, আমি মরে যেতেও রাজী......”
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:১২