তপন রায়চৌধুরীর "রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিত চর্চা" বইটি স্মৃতিচারণমূলক রসালো বর্ণনায় টইটুম্বুর। সেখান থেকেই ছোট্ট একটি উদ্ধৃতি দিলামঃ
"...মেঘ যে আরো ঘন হয়েছে সে কথা বুঝলাম যখন সবাই বলতে লাগলো যুক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী আমাদের সর্বজনপ্রিয় হক সাহেব, অর্থাৎ শের-ই-বাংলা ফজলুল হক শত্রু পক্ষের লোক। বরিশালের স্টিমার ঘাটে নেমে, জনসংযোগের উদ্দেশ্য নিয়েই বোধহয়, উনি পায়ে হেঁটে অনেক দূর অবধি যেতেন। অনেক সময়ই পথে আমাদের বাড়িতে থেমে কিছুক্ষণ গল্প করতেন। ... তাঁর বিশাল বপু সাধারণ চেয়ারে ভালো আঁটতো না। তাই উনি বাড়ি এলে জাঁদরেল সাইজের একটি চেয়ারে উনাকে বসতে দেয়া হতো। বরিশালের আর পাঁচজন ভদ্রলোকের মত উনিও স্পষ্ট বরিশালীতে কথা বলতেন, ভিক্টরিও ন্যাকামির ধার ধারতেন না। রাজনীতির খাতিরে উনি একাধিকবার দল বা জোট বদল করেছেন। যে ঘটনার কথা বলতে যাচ্ছি সে ঘটনার সময় উনি মুসলিম লীগের পক্ষে। কৃষক প্রজা দলের ছাত্ররা স্টিমার ঘাটে কালো নিশান নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।
...গণ-সমর্থকদের শেখানো হয়েছে, হক সাহেব স্টিমারের সিঁড়ি বেয়ে নামলেই তারা নিশান আস্ফালন করে “Shame! Shame!” বলে ধিক্কার দেবে। কিন্তু ব্যাপারটা একটু গোলমাল হয়ে গেল। ঐ বাঘের মত মানুষটিকে সামনে দেখে নিশানবাহীরা পালাবার পথ পায় না। ছাত্রনেতারা উস্কাচ্ছেন, “চুপ করিয়া ক্যান? ক’, চ্যাঁচাইয়া চ্যাঁচাইয়া ক’।” অতি সঙ্কোচে মুখ হাতে ঢেকে বিক্ষোভকারীরা শ্রীরাধিকার মত নরম সুরে বললো, “শ্যাম! শ্যাম!” হক সাহেব মুচকি হেসে এগুলেন। পরবর্তি স্টপ আমাদের বাড়ি। সেখানে ওর বাল্যবন্ধু ইন্দুভূষন গুপ্ত বসে আছেন সদলেঃ “আইজ আউক! ফজলুরে আইজ ধোয়ামু”- অর্থাৎ সস্নেহ গালিগালাজের তোড়ে শের-ই-বাংলাকে উনি ধৌত করে ছাড়বেন। হক সাহেব ধীরে সুস্থে পাপোষে পা মুছে বৈঠকখানা ঘরে ঢুকলেন। ঢোকা মাত্র ইন্দুবাবুর আক্রমণঃ “ফজলু, তর লইগ্গা ভদ্দরসমাজে আর মুখ দ্যাহান্ যায় না।” হক সাহেব গভীর সহানুভূতির দৃষ্টিতে বাল্যবন্ধুকে দেখলেন একটুক্ষণ। তারপর বললেন, 'হেইলে ত তর বড় মুশকিল! ভদ্দরসমাজে মুখ দ্যাহাইতে পারিস না? তয় হোগাটা দেহাইস।'
এই ঋষি বাক্যের পশ্চিমবঙ্গানুবাদ আর দিলাম না।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪৭