“বিশ শতকের শুরুতে ঢাকার স্থানীয় যাত্রাপালার কিছুটা বর্ণনা করেছেন প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও কমিউনিস্ট নেতা বঙ্গেশ্বর রায়। তখন নবাবপুর যাত্রাদল ও শাঁখারিবাজার অপেরা পার্টি একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি ছিল। এসব যাত্রাপালায় অভিনেতা-অভিনেত্রি দুই ভুমিকায় ছেলেরাই অংশ নিত।
একটি যাত্রাপালার নায়ক ও নায়িকার সংলাপ পালা বইতে তখনকার শুদ্ধ বাংলায় এভাবে রচিত ছিল (যাত্রাপালার নায়কের নাম সূর্য সিংহ ও নায়িকার নাম সংযুক্তা)ঃ
-সংযুক্তাঃ সূর্য সিংহ! সূর্য সিংহ! কি হেতু প্রেরিয়াছ সাক্ষাতের গোপন বারতা? নহে এবে মোরা বালক-বালিকা, নহে শোভে নির্জন নিভৃতে এহেন গোপন আলাপন?
-সূর্য সিংহঃ একি কথা কহ তুমি সংযুক্তা সুন্দরী! মানি আমি নহ তুমি নাবালিকা এবে; ষোড়শী যুবতী তুমি, জানি তাহা জানি তবু এই লাজলজ্জা শোভে কি তোমায়? কেমনে ভুলিলে তুমি শৈশবে অনাবৃত দেহে দোহে সাথে দোহে হেথা হোথা কত বিচরণ? নির্দয়! নিষ্ঠুর! অতীতের মধু স্মৃতি দিয়াছ কি বিসর্জন খরতর তটিনীর স্রোতে?"
তখনকার ঢাকাইয়া যাত্রাপালায় পাত্র-মিত্ররা এ ধরনের সংলাপগুলো ঢাকাইয়া আঞ্চলিক ভাষায় রূপান্তর করে নিত। রূপান্তরিত সংলাপ নিম্নরূপঃ
-সংযুক্তাঃ সূর্য সিংহ! সূর্য সিংহ! ক্যালাইগা বোলাইছো? আমরা তো আর ছ্যাড়া ছ্যাড়ি নাই মাঠে ময়দানে ঘোপে ঘাপে বাৎচিৎ করুম?
-সূর্য সিংহঃ ক্যালাইগা সংযুক্তা, জুয়ানকি মাগী অইছস দেইখা বুঝি সরমাইতেচছ! হায় হায় হায় হায় পাষাণী! কি কমু তরে। ন্যাংটা কালে কত পেম-মহব্বত করছি দুইজনে। সব হালায় ঝাইড়া ঝুইড়া সূত্রাপুরের খাল দিয়া ভাসাইয়া দিলি?"
আহা... খাস ঢাকাইয়া ভাষায় যাত্রাপালার সেই চর্চাটা আজ কোন সে কালের গর্ভে হারাইয়া গেল গো?
বইঃ ঢাকাইয়া আস্লি/আনিস আহামেদ
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:০২