ছবি: আমার তোলা
ব্যাচেলর আশরাফুল একাই একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে অনেক দিন ধরে, যখন থেকে চাকরী করা আরম্ভ করেছে তার একবছর পর থেকে, প্রথমে এই বাসাটায় অফিসের ৩ জন কলিগ নিয়ে উঠেছিল, তারা এই কয়েক বছরের মধ্যে বিয়েশাদি করে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করেছে যার যার সুবিধা মত।
আশরাফুল চাকরী ছাড়া জীবনে আর কিছুই করতে পারে নাই ,সারাদিন অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকার পর ফিরে এসে নিজের জন্য রান্না খাওয়া টিভি দেখা ও ঘুম এই তার প্রতিদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে গত তিন বছর। অন্য তিনজন কলিগের মত বিয়ে করার মতন মন মানসিকতা বা ইচ্ছে হই হই করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কেন যেন আর বিয়েটা করা হচ্ছে না; ব্যাড লাক!! বাড়ি থেকে রোজ তার বাবা মা ফোন দিয়ে এই ব্যাপারে আদেশ উপদেশ প্রয়োজনীয়তা ও শেষ বয়সে নাতি নাতনির সাথে সময় কাটানোর যে তাদের হক সেই বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা করার পর, এবং আশরাফুল ও নিমরাজি সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত কীভাবে কীভাবে যেন একা জীবন রুটিন মাফিক চলতে থাকে।
আসলে মানুষ যখন যে অবস্থায় থাকে সেই অবস্থাকেই সব থেকে ভাল মনে করতে থাকে, একরকম জীবনের মোড় পাল্টে নতুন কোন পদক্ষেপে পা ফেলতেও বিস্তর আলসেমি কাজ করে তখন।
মনে করতে থাকে এইরকম একরকম থাকার মতন ভাল কিছু আর এই দুনিয়ায়; হতেই পারে না।
যে অফিসে আশরাফুল কাজ করে সেটা পুরুষ কেন্দ্রিক, তিনজন মহিলা অবশ্য আছে রিসেপশনে তারা সংসারী, মুখ ও চলে তাদের মেশিনের মতন, তাদের একজনের নাম টুম্পা চেহারা দেখে মনে হয় উনার মত ভদ্র মেয়ে এই দুনিয়ায় বুঝি আর নাই; সে একদিন গালে হাত দিয়ে আশরাফুলের ডেস্কের পাশে হেলান দিয়ে বিড়ালের মতন চুক চুক করে আফসোস করে বলতে লাগলো আশরাফ ভাই আপনার কি একা লাগে না?
আশরাফুল মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলো খেয়ালই করেনি কিছুক্ষন, আবার সেই নাছোড়বান্দা টুম্পা একি কথা রিপিট করার পর তার ইচ্ছে করলো সটান করে মেয়েটির গালে একটা চড় বসিয়ে দিতে এমনিতেই গত দুই ঘণ্টা ধরে ফাইলটার জটিল হিসাব মিলাতে পারছেনা, তাই কোন রকম জবাব দিল-
- একা লাগবে কেন?
- না মানে এই ধরেন আমাদের তো লাগে, সবারই লাগে।
- আপনার একা লাগে কেন? আপনি তো বিবাহিত স্বামী ও আপনার সাথেই থাকে,
- তবুও লাগে, সে বাজারে গেলে, অথবা তার আগে আমি বাসায় পৌঁছালে, এক মুহূর্ত তাকে ছাড়া থাকতে পারিনা বুঝলেন।
- এই জন্য আমার কাছে এসেছেন তার অলটারনেটিভ রিপ্লেসমেণ্ট বুঝি? উত্তর শুনে টুম্পা মেয়েটি গট গট করে সামনে থেকে চলে যেতে যেতে বলল এই জন্যই তো বিয়ে হয় না মেয়েদের প্রতি ন্যূনতম সন্মান বোধ নাই হ্যান ত্যান আরো ইনডাইরেক্ট গালি অথচ চেহারা দেখলে মনে হয় টুম্পা ভদ্র মেয়ে।
এসব কারণেই আশরাফুলের সব মেয়েদেরকেই অনেক বিরক্তিকর মনে হয়! আসলে প্রকৃতি পরিবেশ পরিস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে এমনি এমনি কি করে যেন নারীদের প্রতি শুধু বিরূপ ধারণা বাড়ায় আশরাফুলের মনে। মাঝে মাঝে বিয়ে করে যে সংসারী হতে চায় তা এই সব বিরক্তিকর মেয়ে দেখলেই বিয়ের চিন্তা মন থেকে আর আসতে চায় না।
এই রকম রোজ রোজ নানান কথাবার্তা একাকীত্ব সব মিলিয়ে আশরাফুল জীবন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে গিয়েছিল একদম; এই সকল ঘটনার মধ্যে ঠিক তার ফ্ল্যাটের পাশের যে জমিটা খালি ছিল সেই জমিটা যে ভরাট হয়ে একটি বহুতল ভবনে ট্রান্সফর্মেশন হচ্ছে; সেখানে যে সারাদিন রাত এক করে লোকজন কাজ করছে এমনকি গভীর রাতে ও ঝনঝন ঠাসঠাস করে কোন মেশিন চালু হয়ে যাচ্ছে, মিস্ত্রিরা কখন কোন অসম্পূর্ণ কাজ রাতে সম্পন্ন করতে আসে তার কোন ঠিক নেই। এরকম একটা দীর্ঘ শব্দময় পরিবেশ পরিস্থিতি পার হওয়ার সময়ও আশরাফুল এসি ছেড়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কম্বল জড়িয়ে দিব্বি বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসের তপ্ত গরম কাটানোর পর পাশের বহুতল ভবন কমপ্লিট দাঁড়িয়ে গেল।
রং করা হলো মেঘের মতো ধূসর, দেখতে দেখতে একটা দুইটা করে বিক্রয় হয়ে যাচ্ছিল ভবনের ফ্ল্যাটগুলো, খুব ভোরের মৌনতায় একাগ্রচিত্তে ধূমপান করতে করতে এসির আউটডোর ইউনিটগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে দেখে ধারনা করলো সে। আশরাফুলের দক্ষিণ পাশের রুমের সাথে ও একটা ফ্ল্যাট আছে এবং ওটায় কোন পরিবার উঠেছে আবিস্কার করলো বারান্দায় কাপড় মেলে দেয়া আর কিছু ফুলের গাছ দেখে কোন রকম আগ্রহ ছাড়া।
একদিন অমাবস্যার মত অন্ধকার আর শীত আসি আসি করা গভীর রাতে, দক্ষিণের রুমে বসে অফিসের কিছু পেন্ডিং কাজ করতে করতে পাশের রুমের বেলকনিতে সুরেলা মিষ্টি একটি নারী কণ্ঠের গানের ঝংকার ভেসে আসে কানে তার, সেই সুর এতই মিষ্টি আর সুন্দর যে হতবিহব্বল হয়ে শুনতে শুনতে একটা ঘোরের ভেতর হারিয়ে যায় আশরাফুল; রিয়ালিটি ভুলে সে এমন ভাবেই গানের বিরহী সুরে হারায় যে তার অজান্তেই মেয়েটিকে নিজের প্রেমিকা অথবা স্ত্রী ইমাজিনেশন করতে থাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে।
এই ঘটনার পর পাশের ফ্লাটে বসবাস করা মেয়েটির প্রতি তীব্র আকর্ষণ নিয়ে একটু দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে শুরু করলো আশরাফুল, বেশ কয়েকদিন ধরে অফিস থেকে ফিরেই কোন রকম ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে গিয়ে বসে থাকে, নিজের জন্য রান্না করা কিংবা টিভি দেখার সময় বের করতেই তার নাভিশ্বাস অবস্থা হয়ে যায়, ওয়েদার চেঞ্জ এর এই সময়টা এমনিতেই অন্যরকম ঠান্ডা, অল্পতেই মানুষ অসুস্থ হয়; আশরাফুলের ও তাই হলো বেলকনিতে ঠান্ডা হিমশীতল বাতাসে বসে থেকে থেকে তার ভয়াবহ রকম কাশি হয়ে গেল।
এভাবে দুনিয়াদারি ভুলে অসুস্থ হয়ে সকল আরাধনার পর এক ছুটির দিন সকালে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ধুমপান করার সময় হঠাৎই আবির্ভাব একটি শ্যামলা হরিন চোখের মিষ্টি মায়াভরা মেয়ের। বয়স বাইশ কি তেইশ আন্দাজ করে; এটাই যে মিষ্টি কন্ঠের সেই গান গাওয়া মেয়ে সহজেই বুঝে যায়; কল্পনায় তার পাশে মানাবে ভেবে আনন্দে আত্মহারা মন নিয়ে নিজেকে রিভিল করে মেয়েটির উদ্দেশ্যে খকখক করতে করতে কাশতে কাশতে বহু কষ্টে বলে ওঠে
-গুড মর্নিং। আপনি যে বিধাতার কাছ থেকে এক আশ্চর্য উপহার পেয়েছেন সেটা কি আপনি জানেন? অদ্ভুত সুন্দর আপনার গানের গলা, আমি আপনার গানের প্রেমে পড়ে গিয়েছি বলতে পারেন, আচ্ছা আপনার নাম জানতে পারি খকখক........খকখকখক....
মেয়েটি কিম্ভূত কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকার মতন আশরাফুলের দিকে চেয়ে সন্দেহপূর্ণ হরিণী চক্ষু মেলে বলে
-আমার নাম মায়া। বলেই হুট ভেতরে চলে যায়।
ভেতর থেকেই শুনা যায় তার অট্টহাসি, খানিকটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে ভেতরে আসলেও আশরাফুল অজান্তেই মেয়েটিকে আপন করে ভাবতে বসে, ভাবতে ভাবতে মেয়েটিকে নিয়ে কল্পনার সংসার সাজায়।
মেয়েটির সাথে প্রায় সকালেই দেখা হয়ে যায় তারপর থেকে, সে তার বেলকনিতে লাগানো গাছে পানি দিতে আসে। কিন্তু অন্য সময় তাকে দেখা যায় না, হতে পারে সে ইউনিভার্সিটিতে যায় আর আশরাফুল ও সন্ধ্যার আগে বাসায় থাকেনা, তবে ছুটির দিনগুলো রহস্যময়! মেয়েটা বাসায় থাকে ঠিকই কিন্তু খুব একটা বারান্দায় আসে না। ভেতর থেকে তার মিষ্টি কণ্ঠের কথাবার্তা ভেসে আসে, এখন পর্যন্ত মেয়েটির মা বাবা অথবা কোন মুরুব্বী টাইপের, মানুষ সে দেখেনি, দেখেছে এক বিরক্তিকর ছেলেকে, সে মেয়েটির বারান্দায় বসে বেশিরভাগ সময় সিগারেট খায় সেগুলোর ছাই সে মেয়েটির লাগানো গাছের গোঁড়ায় ফেলে; মাঝে মাঝে থুথু কাশি ও গাছের গোঁড়ায় ফেলে, এত রাগ লাগে এসব দেখে ইচ্ছে করে ছেলেটির কান বরাবর কষে একটা থাপ্পর লাগাতে এত যত্ন করে লাগিয়েছে মেয়েটি গাছগুলো! রোজ সকালে পানি দেয় ঘুম থেকে উঠেই।
মেয়েটির সেই হৃদয় ব্যাকুল করা গান শোনা হয়; প্রায়ই খাওয়া ঘুম টিভি দেখা সব ফেলে তড়িঘড়ি করে বারান্দায় দাঁড়ায় তখন সে, দুঃখের বিষয় হচ্ছে মায়া তাকে দেখতে পেলে ভেতরে চলে যায়, আশরাফুল তাতে হতাশ হয় না সারাজীবন তো পড়েই রয়েছে গান শোনার জন্য।
এর ভেতর আশরাফুলের মা ফোন করে জানায় যে সে একটা মেয়ে পছন্দ করেছে তার জন্য, খুব সুন্দরী না হলেও মিষ্টি চেহারা, ভাল নাম আফসানা আক্তার ডাক নাম মিনু, মেয়েটার ছোট একটা বোন আছে কাউকে না জানিয়ে বিয়ে করে এক ছেলের হাত ধরে পালিয়েছে ,এখন নাকি ঢাকায় থাকে, মেয়ের বাবা এইজন্য মিনুকে বলে একমাত্র মেয়ে, ছোটটাকে নাকি কোনদিন পরিচয় দেবে না মেয়ে বলে, এই এক কলঙ্ক মিনুর জীবনে এছাড়া মেয়েটা সোনার টুকরা, এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছে আগামী মাসে নাকি রেজাল্ট, ওদের বাড়ির সবাইকে আশরাফুলের ছবি দেখিয়েছে মোবাইলে; সবাই মোটামুটি পছন্দ করেছে, এখন একটু ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে মেয়েটিকে দেখে জানা, পছন্দ হলেই বিয়ে, বয়স কত হল খেয়াল আছে? আশরাফুল হ্যাঁ হু করে ফোন কেটে দেয়, সে বিয়ে করলে মায়াকেই করবে এই রকম পন করে মনে মনে।
গভীর রাতে মেয়েটির গানের সুর ভেসে আসার বদলে মাঝে মাঝে অন্যরকম কিছু আওয়াজ ভেসে আসে দক্ষিনের রুমের জানালা বরাবর ও বাসার বেডরুম, পর্দা তুলে তাকালে কিছু দেখা যায় না, অন্ধকার, চিরকুমার আশরাফুল ঠিকই বোঝে এগুলো কিসের শব্দ। মেয়েটির বাবা মা হয়ে থাকতে পারে মনে মনে ধরে নেয় সে, ঘরে এত বড় ছেলে মেয়ে যাদের তাদের তো আরেকটু সংযত হওয়া উচিত নাকি!
একদিন ছুটির দিন বিকেল বেলা মেয়েটির ভাই খক খক করে কেশে থুথু ফেলল গাছে, আশরাফুল নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে ধমকের স্বরে বলেই বসলো গাছের গোঁড়ায় থু থু ফেলো কেন ঘরে কি বেসিন নেই? হকচকিয়ে তাকায় ছেলেটা। তাকে যে এত কাছ থেকে কেউ দেখছিল খেয়ালই করেনি,
লজ্জিত মুখে বলল
-সরি স্যার, একটু থেমে আবার বলল ; স্যার কি একাই থাকেন? আর কাউরে যে দেখিনা,
- হ্যাঁ একাই থাকি
- আমি আমার পরিবার নিয়া থাকি, আমি আর আমার বউ, আমাদের নতুন বিয়ে, এই বাড়িও নতুন আমরাও নতুন,
- তাই!! আর কে কে থাকে তোমাদের সাথে?
- আর কেউ তো থাকেনা
- কি বলো! আর কেউ থাকেনা! ঐ যে শ্যামলা করে মেয়েটি, মায়া নাম, খুব সুন্দর গান গায়, ও কি তোমার বোন?? হাহাহা করে অট্টহাসি দেয় ছেলেটা, চব্বিশ পাটি দাঁত বের করে বলে
- ওই তো আমার বউ।
- মায়া তোমার বউ!! নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা আশরাফুল
- হ্যাঁ
- আমি তো ভেবেছিলাম ও আনম্যারিড, ভার্সিটিতে পড়ে
- বিএ পাশ করেছে, এখন চাকরী করে,
আশরাফুলের গলা কাঁপছে, কথা কোন রকম চালিয়ে নিতে বললো
- তুমি কি কর?
- আমি কিছু করিনা স্যার, এক জায়গায় টাকা দিয়ে রাখছি ২০ লাখ, সরকারী চাকরী , মামা আশা দিয়ে রাখছে একশো পার্সেণ্ট, দেখি কি হয়।
আশরাফুলের মাথা তখন শুন্য! এটা কি হয়ে গেল!! যার মায়ায় পড়ে এত এত স্বপ্ন দেখেছে রাত দিন এক করে! সে কিনা ওই বেয়াদব ছেলের বউ!! তাও একটা বেকার ছেলের!
এই ঘটনার পর সে ঘরের এক কোনে শুয়ে কম্বল মুড়ি দিয়ে পড়ে রইলো বাকী তিন দিন, অফিসে কোনরকম একটা মেইল করে দিয়েছিল পাঁচ দিনের ছুটি চেয়ে, ছুটি এপ্রুভ হয়েছে কি হয়নি তা ও সে দেখার প্রয়োজন মনে করছে না তার সদ্য প্রস্ফুটিত (একতরফা) ভালোবাসা হারিয়েছে এর থেকে দুঃখ আর কি আছে জীবনে।
এত কিছুর ভেতরে ও আশরাফুল ঠিকই রোজ বারান্দায় যেত মেয়েটিকে এক নজর দেখতে! মায়ার মায়া ওর মন থেকে কি করে তাড়াবে! কিন্তু দেখা হয়নি! চারদিনের দিন বারান্দায় মেয়েটিকে দেখতেই আশরাফুল বলে উঠলেন ওই ফর্শা অলস ছেলেটা তোমার হাসবেন্ড? মায়া হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়তেই আশরাফুল তিন দিনের রাগ দুঃখ স্বপ্ন ভাঙ্গার কষ্ট এক করে বলল; তুমি একটা ইডিয়ট! ন্যূনতম রুচি থাকলে কেউ এই রকম একটা বলদকে বিয়ে করতে পারে না, আসলে এই যুগের মেয়েরা ভুল মানুষকে ভালবাসে ইউ নো, যে তোমার জন্য পারফেক্ট তার দিকে ফিরেও দেখলে না তার আগেই বিয়ে করে বসে রইলে, ইউ হেভ জাস্ট গন আউট অফ দি কমন অফ দি লস অফ হিউমান নেচার। ডিসগাস্টিং।
বলেই হন হন করে ঘরে চলে আসতে আসতে মায়ার ঘরের ভেতর থেকে উৎকট হাহা হিহির বিকট হাসি শুনতে শুনতে ব্যাগ গোছাতে গোছাতে আশরাফুল সিদ্ধান্ত নিল আজই বাড়ি যাবে সে, মায়ের পছন্দের মিনুকেই বিয়ে করবে, মায়া ফায়া নামক ডাইনীর পেছনে আর ঘোরাঘুরি করবেনা, কত বড় শয়তান বিয়ের কথা গোপন করে, ওর বিরুদ্ধে মান হানির মামলা করা দরকার। একটাই সমস্যা! মিনুকে নিয়ে এই ঘরে থাকবে কি করে ... দক্ষিনের ঘরটা তালা দিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় আশরাফুল।
এই ঘটনার পর এক বছর চলে গিয়েছে, মায়া যে মিনুর আপন ছোট বোন সেটা জানতে পেরেছে আশরাফুল বিয়ের দিনই যখন কাজী বিয়ে পড়ানো শেষ করলো তারপর পরই, কি লজ্জা!
পালিয়ে বিয়ে করেছিস ভালো কথা, একেবারে আশরাফুলের ঘাড়ে এসেই থাকতে হলো!!
বোনের বিয়ের কথা শুনে দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এসেছিল। বাবা-মা ও মেনে নিয়েছেন বড়টার বিয়ের মূহুর্ত তাই লোক জানাজানির ভয়ে।
এখন আশরাফুলের ও সুখের সংসার মিনুকে নিয়ে, সেই ফ্ল্যাটেই, দক্ষিণ পাশের দরজাটা বন্ধ করে দেয়া হয়নি বরং ওটা আরো বেশি খোলা থাকে, দক্ষিণের বেলকনি দুটা তো মিনুর আর মায়ারই, আশরাফুল দুই বোনের নানান কথা ও হাসাহাসি দূর থেকে শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে ভেতরে ভেতরে লজ্জায় লাল হয়ে যায় মায়া মিনুকে না জানি কি কি বলে!! মায়ার সেই অলস জামাইয়ের ও একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরি হয়েছে, সঙ্গত কারণেই তাকে আর অলস বলা যাচ্ছে না, জীবনের বাঁকে বাঁকে কত কি যে বৈচিত্র্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ৯:০৮