
অচেনা রাস্তা সবকিছু দেখা যায় আবার পরিষ্কার দেখা যায় না এরকম রহস্যজনক স্বপ্ন কোনো কোনো সময় বিভিন্ন স্ট্রেস বিভিন্ন চিন্তাভাবনার ফলাফল স্বরূপ মানুষ দেখে থাকে কম বেশি, কিভাবে কিভাবে যেনো সেই রকম একটা সকলের স্বপ্ন দেখা পথে এসে পড়লাম আজ।
সন্ধ্যার আগে থেকেই কুয়াশার পরিমাণ অনেক বেশি সন্ধ্যার পর এখন চারপাশে ধোঁয়া ধোঁয়া। কিছু অন্ধকার; কিছু আলো; লাইটের আলোও ঘন অন্ধকারের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে অন্ধকার অন্ধকার ভাব করে আছে।
রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে যেতে যেতে দেখলাম আশেপাশে বখাটে ছেলেপেলেরা আড্ডা দিচ্ছে একজন দুইজন তিনজন করে অগণিত। তাদেরকে উপেক্ষা করলাম, সময়টা ভালো না, তারা সসম্মানে পথ ছেড়ে রাস্তা ফাঁকা করে দিল কেন না বুঝেও এটাই স্বাভাবিক ভেবে সামনে যে একটা মুদি দোকান সেখানে একটা মহিলা বসা; তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম আপনার দোকানে কি বিকাশ আছে।
মহিলা ফর্সা খুব বেশি বৃদ্ধা হয় নাই স্বাস্থ্য একদম ঠিকঠাক চেহারা অনেক বেশি মিষ্টি। এই ধরনের চেহারা দিয়ে হিন্দি সিনেমায় অনায়াসে মায়ের রোল প্লে করানো যায়। সে জানালো তার দোকানে বিকাশ নাই। তার দোকানে সোজাসুজি যে একটা রাস্তা পশ্চিম দিকে গিয়েছে সেই রাস্তা ধরে একটু আগালেই বিকাশের দোকান পাওয়া যাবে। এই কথাটা তিনি শেষ করে শেষ শব্দটা বললেন মা। আমার অভূতপূর্ব ভালো লাগলো মা ডাকটা উনার মুখে।
তার দেয়া সল্যুশন পছন্দ না হলেও সেই অন্ধকার চিকন অনেকটা পরিত্যক্ত রাস্তা দিয়ে সামনে হাঁটতে হাঁটতে কুয়াশার মধ্যে ডুবে যেতে যেতে দেখলাম শীতল বাতাস আসতেছে ডান পাশ দিয়ে, সেই খানে কোন বাড়িঘর নাই। একটা নাম মাত্র লেক যেখানে লোকজন ময়লা ফেলে ভরে রেখেছে; তার বাম পাশে একটা বড় টিনের ঘর ভেতর থেকে কুয়াশার মতো ধোঁয়া বের হচ্ছে। মনে হয় মশার উপদ্রব থেকে বাঁচার চেষ্টা। ভিতরে প্রায় ১০-১৫ জন লোক বসে আড্ডা দিতেছে। এভাবেও মানুষ ভাড়া থাকে, এত খোলামেলা এইরকম শীতে!
মিষ্টি চেহারার অল্প বৃদ্ধার কথা মতন সেইখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বুঝলাম জায়গাটা ভুল। আজ থেকে দশ বছর আগেও এই রাস্তা দিয়ে মানুষ হাঁটলেই ছিনতাই এর শিকার হতো সন্ধ্যার পর, ছুড়ি পেটের ভেতর ঢুকিয়ে মোবাইল নিয়ে পালানোর রেকর্ড আছে চোরদের; এখনো হয় ফেইসবুকে একটা গ্রুপে সেদিনও এই ব্যাপারে কাউকে কাউকে কথা বলতে দেখলাম এই জায়গাটা নিয়ে।
এই কথাগুলা মাথায় আছে তবুও আমি প্রায় স্বপ্নে দেখা সিনারি দেখে খুবই মিস্টেরিয়াস ফিলিংস উপভোগ করতেছিলাম ভিতরে ভিতরে, প্রায় হাফ কিলো অথবা কাছাকাছি হেঁটে আবার ব্যাক করতে লাগলাম একই রাস্তায়; এই পর্যন্ত চলাচলের সময় কেউ আমারে ক্রস করে যায় নাই আমিও কাউরে ক্রস করে যাই নাই মানে পুরা রাস্তায় আমি একলা ছিলাম।
আসতে আসতে দেখলাম যেই খোলা ঘরে ১০-১৫ জন লোক ছিল সেটা আসলে রিক্সার গ্যারেজ; সেই রাস্তা শেষ হওয়ার পরে আবার সেই মহিলার দোকানের সামনে এসে দেখলাম ভিতরে পুরুষ বসে আছে। সেই মহিলা কোথায় গেছে জিজ্ঞেস না করে হঠাৎ একটা থামানো অটো রিকশা দেখে সেই অটোর চালককে বললাম বিকাশে টাকা তুলতে যাবো প্রধান সড়ক অথবা মহা সড়কে নিয়ে চলেন কিংবা যেখানে বিকাশের দোকান আছে।
তার অটোতে গান বাজতেছে আমার সোনার ময়না পাখি কোন বা দেশে উইড়া গেলারে, গানের ভিতর ডুবে থাকতে থাকতে সে অটো চালাতে চালাতে দুইবার বিকাশের দোকান ক্রস করলেও কিছু বললাম না; গান ভালো লাগতেছিল।
কিছুদূর পর তুলনামূলক বড়ো একটা বিকাশের দোকানে আমাকে পৌঁছে দিয়ে অটোওয়ালা অপেক্ষা করতে থাকলো আমার ফেরার। ফিরে আসতে আসতে অটোর আবেগঘন আরেকটা গান শুনতে শুনতে অনুভব করলাম অন্ধকার পথ আর সচরাচর পরিবার পরিচিত লোকজনহীন জীবন উপভোগ করাও এক প্রকার ভালো ভাগ্য।
সামু ব্লগের জন্মদিনে আনন্দ অনুভব করছি, সবাইকে সামহোয়্যারইনব্লগের জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
ছবিঃ আমার তোলা

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


