somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহনা (৩য় পর্ব)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যার পরের অন্ধকার চারদিকে ছড়িয়ে গিয়েছে, নিজস্ব প্রোপার্টিতে অফিস করার জন্য এই অফিসের মালিকেরা শহরের অনেকটা বাইরে চলে এসেছেন। অফিস বাস মিস হয়ে গেলে নরমাল যেকোনো গাড়ি ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে যায় অফিস স্টাফদের জন্য, উবার ও এই বিরানভূমিতে আসতে চায়না, চুরি ছিনতাই এক্সিডেন্ট সবকিছুর জন্য বিখ্যাত এই এলাকা, এ পর্যন্ত চার পাঁচজন পিয়ন ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে, এক্সিডেন্ট করে হাড় ভেঙেছে হাত পায়ের।

অহনা ওলির কথা মাথা থেকে বের করতে পারছেনা, হাত চেপে ধরার সময় কষে একটা লাথি মেরে দেয়া যেত ওটার মুখের উপর। আচ্ছা এমন যদি হয় রবিবার অফিসে এসে শুনবে ওলি ওর ধাক্কায় সিঁড়ি থেকে পরে ঘাড় মটকে মরে গেছে? আর যদি এই জন্য ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়! তারপর যদি হত্যার দায়ে ওর ফাঁসি হয়? চিন্তার ভয়াবহ ডালপালা মাথায় ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় চাকরিটা ছেড়েই দেবে এই শপথ নিয়ে একটা অটো পেয়ে উঠে যায় সেটাতে, জাস্ট মেইন রোড পর্যন্ত যেতে পারলেই হবে এরপর সিএনজি, বাস কিছু একটা জোগাড় হয়েই যাবে।

লম্বা জার্নি আর মন ভার করা দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা অপমান নিয়ে অহনা বাসার দরজায় সামনে পৌঁছে অনেক গুলো জুতা দেখে বুঝতে পারে গেস্ট এসেছে। ভেতরে ঢুকে গেস্ট রুমের সামনে দিয়ে আসার সময় দেখে মামা-মামী মামাতো বোন, মামাতো বোনের হাজবেন্ড কে।
উনার এই বাসায় আসা নতুন, সৌদি আরব ছিল; আরবে বসে মোবাইলে বিয়ে হয়েছিল মামাতো বোন আসমার সাথে দুই বছর আগে, যে কারণে বোনের হাজবেন্ডকে দেখা হয় নাই এর আগে। তাদের সালাম দিয়ে ভিতরে এসে দেখে ওর মা রান্না ঘরে, ফল কাটছে; টেবিলে সাজিয়ে রাখা গ্লাস পাশে সফট ড্রিংকস, অহনাকে বললেন

- এসেছিস! এত দেরি হলো কেনো ? জ্যাম ছিল? ড্রেসটা চেঞ্জ করে নাস্তাগুলো একটু দিয়ে আয়, একা একা একদম হাঁপিয়ে উঠেছি, রাতের জন্য রান্নাবান্না শুরুই করিনি , তোর বাবা বাজার থেকে মুরগি এনেছে; গরুর মাংস এনেছে; ইলিশ মাছ এনেছে এত রান্না একা কিভাবে করব একটু সাহায্য কর, আর হ্যাঁ একটা সুন্দর ড্রেস পড়িস, আসমার জামাই একটা সম্বন্ধ এনেছে তোর জন্য, ছেলে ভালো; সৌদি আরব থাকে, ভালো চাকরি করে, ঢাকায় পাঁচতলা বাড়ি আছে নিজেদের, ছবি রেখেছি তোর টেবিলে ছবিটা দেখ।

অফিসের ঘটনায় বিধ্বস্ত অহনা ওয়াশরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকে চুপচাপ কিছুক্ষণ। ওর ইচ্ছে করছে বাসা থেকে বের হয়ে দূরে কোথাও গিয়ে বসে থাকতে। জীবন যুদ্ধের সাথে যেন আর পেরে উঠছে না।

নাস্তা গেস্ট রুমে নিয়ে যায় অহনা, টেবিলে রাখা ছেলেটার ছবি দেখে এসেছে ও, সৌদি আরবের আমিরদের মতন গেটআপ, মাথা রুমাল দিয়ে ঢাকা, তারপরও কপাল অনেকটা বেরিয়ে আছে সম্ভবত মাথায় চুল নাই,চেহারার ভিতরে একটা লুচু লুচু ভাব আছে, চোখ দুটোয় ধূর্ত ভাব প্রবল।
অহনার ছেলেটির ছবি দেখে অস্বস্তি লেগেছে। কিন্তু সে কথা কাউকে বলা যাবে না, বাবা-মাকে তো না ই, এ যাবৎকালে যত সমন্ধ এসেছে অহনার হ্যাঁ চেহারা করেই থাকতে হয়েছে, কোন কোন ছেলে পক্ষ আবার নানা রকম কন্ডিশন দিয়ে ওকে রিজেক্ট করে চলে গিয়েছে ভাবা যায়! এই সমাজে বিয়ের ব্যাপারটায় অতিরিক্ত টাকাওয়ালা বাবাদের একমাত্র মেয়েরা এগিয়ে। তাদের কোন দোষ নাই পাত্রপক্ষের কাছে। সমস্ত দোষ অনেক গুলো ভাই বোনওয়ালা অল্প টাকার বাবার মেয়েরা নিয়ে বসে থাকে।

অহনাকে দেখে হাসলেন প্রত্যেকে
-বসো মা বসো আমার কাছে বসো মামী বলার পর মামাতো বোনের ও মনে হলো অহনা তার পাশে বসুক সে তার মায়ের উপর দিয়ে বললো
-আরে তুই আমার কাছে আয়, তুই নাকি চাকরি করছিস? পাবলিক বাসে আসা যাওয়া করিস নাকি অফিসের গাড়ি আছে?
-অফিসের গাড়ি আছে আপা, কিন্তু কোন কারনে গাড়ি মিস হয়ে গেলে সিএনজি অথবা পাবলিক বাসে আসতে হয়।
-সে কি! পাবলিক বাসে, ছি! ওসব বাসে কি চলাফেরা করা যায় নাকি? মেয়েদের এখানে সেখানে হাত দেয় পুরুষেরা, কোন মেয়ে বলতে পারবে যে তার গায়ে পুরুষেরা হাতাহাতি করে নাই পাবলিক বাসে।
-অতোটা খারাপ ও না আপু, আর অফিসের গাড়ি তো আছে, আর্জেন্ট কিছু থাকতে পারে না? গাড়িতে উঠলেই খালি পুরুষেরা হাতাহাতি করে কে বলেছে তোমায়।

আসমার বিয়ের পরই কোনভাবে শ্বশুরবাড়ির মাধ্যমে একটা গাড়ি পেয়েছে ব্যবহারের জন্য, তার পড়াশোনা একদম শূন্যের কোঠায় বিবাহ সূত্রে নতুন বড়লোক আর বিয়ের দুই বছর পর জামাই পেয়ে মাথা আউলায়ে গেছে।
আসমার জামাই এই ফাঁকে বললেন
-অহনা তো তেমন ফর্সা না তোমার থেকেও গায়ের রং চাঁপা।
বাস্তবতা হচ্ছে অহনার মত ফর্সা মেয়ে কমই দেখা যায়, লম্বা ফর্সা হালকা-পাতলা গড়নের মিষ্টি চেহারার মেয়ে অহনা। বরং তার স্ত্রী আসমার গায়ের রং শ্যামলা এই ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলার মানে বোঝে অহনা, দুলাভাইয়ের আগে প্রধান সম্পর্ক উনি পাত্র পক্ষ, কাজেই মেয়ে পক্ষকে সত্য মিথ্যা সমালোচনা করে পঁচাতে হবেই, এটাই এ দেশের সোসাইটির পুরাতন রেওয়াজ।
নিজেদের কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতা ধরে নিয়ে বোবার মতন বাবা এবং মা বসে আছেন পাশেই, তাদের উদ্দেশ্য করে আসমার সৌদি জামাই বললেন
-আপনাদের বাড়ি কয় তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে করছেন? -তিন তলা!!
- মাত্র তিন তলা! তাও ইনকমপ্লিট, একতলা করে রেখেছেন, এটা কোন কথা! এটা কিন্তু চরম বোকামি করে ফেলছেন আঙ্কেল যাই বলেন না কেন।
বাবা কাঁচুমাচু করে বললেন
-না মানে অনেক আগের বাড়ি তো সেই সময় এই বেশি ছিল, এখন দুই ছেলে আছে দেশের বাইরে, জব করছে, দেশে এসে তারা যা করার করবে।
- কিশে জব করে আপনার ছেলেরা, তার চোখ চকচক করে উঠলো, বোঝা যাচ্ছে পাত্র তার নিজের কেউ। অহনার একেও ইচ্ছে করছে মুখ বরাবর কষে একটা লাথি মারতে, লাথি মেরে সিঁড়ি দিয়ে নিচে ফেলে দিতে।
মানুষের মনে যা চায় তার এক ভাগ ও বাস্তবে করতে পারে না, ওর মাথা ব্যাথা করছে বলে সবার কাছ‌ থেকে বিদায় নিয়ে ভেতরে চলে আসে।
তারা ফিরে গেলো রাতের ডিনার শেষে মধ্য রাত করে। প্রায় প্রত্যেক বৃহস্পতিবার অথবা শুক্রবার এই এক ভাবে যাচ্ছে এখন জীবন। সবকিছুর ভিড়ে অহনার অফিসের ঘটনা মনে পড়ে কিন্তু বাসার যা পরিস্থিতি চাকরিটা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা আপাতত মাথা থেকে উইথড্র করে ও, ধীরে গভীর ঘুমিয়ে তলিয়ে যায়। চলবে...

প্রথম পর্বের লিঙ্ক

২য় পর্বের লিঙ্ক
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:২০
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রের অনুপস্থিতি: এক অনালোচিত প্রশ্ন?

লিখেছেন মুনতাসির, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

সত্যজিৎ রায়, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত, তাঁর চলচ্চিত্র, গল্প এবং গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা বাস্তববাদী চরিত্র, সমাজচিত্র, এবং গভীর দার্শনিকতা নিয়ে আলোচিত। তবে তাঁর কাজের মধ্যে একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×