লেখক সাদাত হোসাইনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। তবে ফেইসবুকে আমি তাকে বহুদিন যাবত অনুসরণ করেছি। অনুসরণের মূলে ছিল তার একটা লেখা। লেখাকে কিছুটা ভাত রান্নার সাথে তুলনা করা যায়।
ভাত রান্নার সময় একটি ভাত টিপ দিলেই যেমন বাকি সব ভাতের অবস্থা বোঝা যায় লেখাও তাই। দু’ একটি লেখা পড়লেই বোঝা যায় লেখক আরও কি লিখতে পারেন।
প্রথমদিককার দু’ একটি পোস্ট পড়েই বুঝেছিলাম যে উনার লেখার চুম্বকত্ব ভাল। পাঠককে ধরে রাখতে সক্ষম।
“আরশিনগর” বইটা পড়তে গিয়েও আমার তা-ই মনে হয়েছে। পূর্ববর্তী পৃষ্ঠা সহজেই পরবর্তী পৃষ্ঠায় টেনে নিয়েছে এবং বইটা শেষ করেছি রাত আড়াইটায় যেখানে বারোটার পর আর রাত জাগাই হয় না।
বিষয়টা এমন নয় যে, আমি ফিকশনই পড়ি শুধু। দিনের নির্ধারিত তিন ভাগে একই সাথে আমি তিন চারটি বই পড়ি, কিন্তু বইটা হাতে নেয়ার পর দেখলাম যে সেটা বাকি বইগুলোর সময়ের কোটা কেড়ে নিয়েছে। এটাই আসলে লেখকের শক্তিমত্তা।
এই বইয়ের আম্বরি বেগম, মজিবর মিয়া, মিলি, আশিষ, ইমাম সাহেব, রুবিনা, সুজাতা, শুকরঞ্জন, লাইলি, লতু এমনকি মৃত নিলুফা বেগমও একটা ঘোরলাগা জগতে জীবন্ত হয়ে উঠে। আর সব কিছু ছাপিয়ে থাকে এক সমুদ্র মায়া নিয়ে আরশি চরিত্রটি। গভীর এই মেয়ের নৈঃশব্দ যেন সহস্র শব্দের চেয়ে বেশী কথা বলে।
তবে এই চরিত্রটির বিপরীত শক্তিশালী একটা পুরুষ চরিত্রের অভাববোধ রয়ে গেছে উপন্যাসে। তার পরও সার্বিক বিচারে বইটি ভাল লেগেছে।
যে কেউ খেয়াল করলে দেখবেন যে, বাংলা সাহিত্যে কিছুদিন যাবত একটা আকাল যাচ্ছে । বিদগ্ধজনের কাছে সাহিত্যের “মীনক্ষোভাকুল কুবলয়” জাতীয় অনেক সংজ্ঞা থাকতে পারে।কিন্তু আমার কাছে সাহিত্য মানে যা পাঠককে ধরে রাখে এবং বই শেষ হলেও সেসব চরিত্রের বন্ধন থেকে সে মুক্ত হতে পারে না।
ভবিষ্যতে যারা বাংলা সাহিত্যের হাল ধরবেন তাদের মধ্যে যে সাদাত হোসাইন অন্যতম হয়ে থাকবেন তাতে সন্দেহ নেই ।