somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৯৭১ এ আমার গলা টিপে হত্যা করতে চেয়েছিল তোদের পূর্বপূরুষ, তোরা তো তাদেরই সন্তান!

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকের এক দুপুর। জৈষ্ঠের খরতাপে যখন চারদিক শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে এমনি এক দুপুরে একদল মানুষরূপী হায়েনারা একটি ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে আনন্দোৎসবে মেতে উঠেছিল। হায়েনাগুলোর অতর্কিত আক্রমন এবং আগুনোৎসবে সেদিন ভস্ম হয়ে গিয়েছিল একটি পরিবারের সবকিছু। সমস্ত অন্ন-বস্ত্রসহ পুরো বাসস্থান, পরিবারটির চলার মত সামান্য আয়ের উৎস একটি দোকানের সমস্ত মালামালসহ সবকিছু পুড়ে ছাই করে দিয়েছিল রাজাকারগুলো। একটি গর্ভবতী ছাগল ছিল দাওয়ায় বাঁধা। ছাগলটিকে পর্যন্ত জীবন্ত পুড়ে মেরে ফেলেছিল হায়নাগুলো।

প্রাণ ও সম্ভ্রম বাঁচানোর তাগিদে সেদিন আমার মা-বাবা-কাকা-কাকী ও দাদী দৌড়ে পালিয়েছিল এক বস্ত্রে। দূরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছিল তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কীভাবে ছাইয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। রাজাকারগুলো পারলে তাদেরও জীবন্ত পুড়ে ফেলত কীনা বলা যায় না।

না, আমার তখনো জন্ম হয়নি, আমার জন্ম হয়েছে আরো ছয় বছর পর। জন্ম হয়নি আমার বড় বোনেরও। কিন্তু একটি পরিবারকে পথে বসিয়ে দিতে যা কিছু করার সবই করেছিল তোদের পূর্বপুরুষ। তারপর আজ ৩৯ বছর পার হয়ে গিয়েছে। এই ৩৯ বছরের ৩৭ টা বছর ধরে আমার পরিবারের করতে হয়েছে অবিরত সংগ্রাম। সে সংগ্রামের কিছু কথা না বললেই নয়।

৭২ এ আমার পরিবার এক জেলা থেকে আরেক জেলায় মাইগ্রেশন করে কেবল ২ খানা মাদুর এবং ২ খানা কাথা নিয়ে। মাইগ্রেশনের পূর্বে সামান্য জমিটুকু বিক্রি করে মহাজনের দায় শোধ করে যেতে হয়েছিল। সুন্দরবন আবাদের যে সামান্য জমিকে সম্বল করে তাঁরা মাইগ্রেশন করেছিলেন সে জমি তখন বাস এবং চাষ দুটোরই অযোগ্য ছিল। অন্যের বাড়িতে উদ্বাস্তু হয়ে বসবাস, অন্যের বাড়িতে কামলা খাটা, তারপর ধীরে ধীরে নিজেদের জমিটুকুকে বাস ও চাষযোগ্য করে তুলেছিল আমার বাবা-কাকা।

ব্লগের রাজাকারের বাচ্চাগুলো কখনোই বুঝবি না যে একজন মানুষ কীভাবে অন্যের বাড়িতে কামলা খাটে, তোরা কখনোই বুঝবি না যে একজন গর্ভবতী মা কীভাবে সন্তান পেটে নিয়ে মাটি কেটে ঘরের পোঁতা বাধে, তোরা কখনোই বুঝবি না যে কীভাবে একজন মানুষ অর্ধপেটা খেয়ে জীবনধারণ করে।

আজ আমার এখানে পৌঁছানোর কথা নয়। এই ডিসেম্বরে আমার হাতে ল্যাপটপ থাকার কথা ছিল না। কোন রাজাকারের বাচ্চার বিরুদ্ধে আমার বিষোদগার করার কথাও ছিল না। আমার হাতে থাকার কথা ছিল কাস্তে কিংবা কোদাল। তোদের পূর্বপূরুষরা আমার পরিবারকে নিঃস্ব করে দিয়ে তাই-ই চেয়েছিল। বাদ সেধেছে আমার মা-বাবা। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমই আমাকে আজ এ অবস্থানে তুলে এনেছে এবং তোদের পূর্বপূরুষের কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করার দাবী তুলছি আমি। আমার যে ভবিষ্যতকে গলা টিপে হত্যা করে দিয়েছিল তোদের পূর্বপূরুষরা তা সফলতার মুখ দেখেনি। তাই আজ আমার কণ্ঠে সোচ্চার দাবী ওঠে তোদের পূর্বপূরুষদের কৃতকর্মের জবাবদিহীতার। না, রাজাকারের বাচ্চাগুলোর কাছে আমার কোন প্রশ্ন নেই। ওরা তো তাদেরই সন্তান। তবে প্রশ্ন রয়েছে ব্লগীয় সুশীল ভেকধারীদের কাছে, ধর্ম নিয়ে কিছু বললেই যাদের সুশীলতা চাগার দিয়ে ওঠে।

পারলে নিচের প্রশ্নগুলোর জবাব দিয়ে যান-

কী কারণে সেদিন আমার পরিবার তথা এই অনাগত আমি'র ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল? সে কি কেবলই মুক্তিযুদ্ধ? কই, আমাদের তখনকার সেই গ্রামে তো অনেক মুসলমান ছিল, তাদের তো কারো ঘর পোড়েনি? তাহলে আমাদের ঘর পুড়ল কেন? সে গ্রামে তো এখনো বেশ কয়েকজন রাজাকার, যারা আমাদের ঘর পুড়েছিল, তারা বেশ বহাল তবিয়তে আছে। কী করে আছে? কেন আছে?

জানি আপনাদের কাছে কোন উত্তর পাব না। পাওয়ার আশাও রাখি না।

*পোস্টটি ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে লিখেছিলাম। সেদিন ইন্টারনেটের বাইরে থাকায় দেয়া হয়নি। আজ দিবনা দিবনা করেও দিয়ে ফেললাম। কে জানে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত.................সে তো অনেক সময়!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:৩৪
৭২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×