somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প । কাম

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটার সাথে আমার যৌন সম্পর্ক ছিল প্রায় দেড় বছরের, তবে তা বিবাহ বহির্ভূত ছিল না, আমরা গোপনে বিয়ে করেছিলাম । যদিও বিয়ে নিয়ে আমি বেশি স্পর্শকাতর নই, তবে জেরিন ছিল অতিমাত্রায় সংস্কার আক্রান্ত, সে কোনভাবেই সার্টিফিকেট ছাড়া সেক্স করতে রাজি ছিল না । আমি কেবল ওর সাথে এক বিছানায় শুতে উদগ্রীব ছিলাম, শর্ত কোন বিষয়ই নয় সেক্ষেত্রে । আমরা তাড়াতাড়িই বিয়ের ঝামেলা শেষ করলাম । সব হয়েছিল জেরিনের পরিকল্পনা মতো, আমি কথা দিলাম দুই বছর পর স্বেচ্ছায় তাকে ডিভোর্স দিবো, এরপর সে তার বহুদিনের প্রেমিককে বিয়ে করবে ।

এটা আগাগোড়াই একটা চমকপ্রদ প্রস্তাব ছিল আমার জন্য । আমার তখন কিছু বান্ধবী থাকলেও এমন কেউ ছিল না যার সঙ্গে এক বিছানায় শোয়া যায়, শরীর দেখা যায় যার আদ্যোপান্ত, শরীরের মাতাল করা ঘ্রাণ শোঁকা যায় অবিরত । এটা নিয়ে প্রায়ই মনস্তাপে ভুগতাম আমি । মাঝে মাঝে ইচ্ছা হতো গণিকালয়ে যাই, তবে সাহস হয় নি কখনো । অবশ্য পরিচ্ছন্ন বেশ্যাদের স্তন চোষার মতো পর্যাপ্ত অর্থও আমার ছিল না । কিন্তু জেরিনও যে আমার মতো দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছে, তথ্যটা একটু অবাক করার মতোই ছিল । আমরা সবাই জানতাম জেরিন ফোর্থ ইয়ারের একটা ছেলের সাথে প্রেম করছে । বেশ ভালো ছেলে, সামাজিক আর আনুষ্ঠানিক ধাঁচের, একটু হয়তো নির্বোধ, তবে ওদের প্রেমটা বেশ দৃঢ়ই ছিল, দীর্ঘ দিনের, পারিবারিকভাবেও স্বীকৃত, আমরা এমনই জানতাম ।
জেরিন জানত আমার কোন প্রেমিকা ছিল না আর আমি চালচুলোহীন, আমার অর্থকষ্টও ছিল । যে কোন কারনেই হোক, আমাকে হয়তো তার নির্ভরযোগ্য আর জটিলতাহীন মনে হয়েছিল । সে আমার বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েছিল অল্প কয়েকদিনেই ।

পলিফোনিক রিংটোনের একটা সস্তা ফোন ছিল তখন আমার, ঐ ফোনে টাকা থাকতো না কখনোই । ব্যালেন্স শূন্য ফোনে কেউ কল করার প্রয়োজন বোধ করে না, কিন্তু জেরিন আচমকাই অনবরত ফোন করা শুরু করে । আমি ছিলাম মহা অব্যস্ত মানুষ, আমার ছিল অফুরন্ত সময় । বিদ্যুতের তারে বসে থাকা কাক, ড্রেনের জলে ভেসে চলা রঙ্গিন চকচকে পলিথিনের ব্যাগ আর ভাঙ্গা এবড়ো থেবড়ো রাস্তার উপর দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে যাওয়া কুকুর দেখেই আমি বেশিরভাগ সময় কাটাতাম ।
জেরিন তার উদ্দেশ্য জানাতে খুব দেরি করে নি । যদিও ব্যাপারটা আমাকে ভাবাচ্ছিল, আমি সন্দেহপ্রবন আর সতর্ক মানুষ, তাই জেরিন যখন অতি গোপনীয় প্রস্তাবটা দিলো, সহসাই আশংকামুক্ত হলাম, অবাক তো অবশ্যই ।

জেরিন অবস্থা সম্পন্ন পরিবারের মেয়ে ছিল, রক্ষণশীলও বলা যায় কিছুটা । তাকে ছেলেবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের সংস্কার গুলে খাওয়ানো হয়েছে । যদিও সরাসরি দেখা বা কথা বলার সময় জেরিনকে বেশ জড়সড় আর দ্বিধান্বিত লাগতো কিন্তু ফোনে জেরিনকে মনে হতো অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী, অকপট আর বুদ্ধিমান । মেয়েটাকে পছন্দ না করার কোন কারন ছিল না । হিজাব পরতো সে ঢোলা সৌদি বোরখার সাথে । তার অনিন্দ্য কমনীয় মুখ আর বিস্ময়কর নীল চোখই যথেষ্ট ছিল যে কাউকে মোহান্ধ করতে ।

আমরা ঠিক করলাম আমাদের একান্তে কথা বলা উচিত কোন নিরব অথবা নির্জন জায়গায় । এক মঙ্গলবার আমরা ক্লাসে না গিয়ে কাপ্তাই লেকে গেলাম । বর্ষার জলে লেকটা থই থই করছিল, লেকের জলে কয়েকটা রাজহাঁস আর একটা শিয়াল ভাসছিল । আমি তাকে বললাম তোমার তো প্রেমিক আছে, যার সাথে তোমার বিয়েও ঠিক হয়ে আছে, তবু কেন আমার প্রেমিকা হতে চাইছো ।
- আমি ওকেই বিয়ে করবো, তাকে ভালবাসি আমি, সে নিরীহ আর সৎ । এদের সঙ্গে নির্ঝঞ্ঝাটে পৃথিবীতে থাকার সময়টা কাঁটিয়ে দেয়া যায় । কিন্তু সে অতিমাত্রায় ধার্মিক, ভীতুও, অবশ্য আমিও বোরখা পরি, নামাজ পড়ি নিয়মিত । জেরিন এরপর একটু থেমে নিচু আর স্পষ্ট গলায় বলল, তুমি হয়তো বাগাড়ম্বর ভাববে, তবে এটা সত্য, বহু শব্দহীন রাত আমি না ঘুমিয়ে কাটাতে বাধ্য হচ্ছি । আমার পুরো শরীর ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে ওঠে, সারা শরীরে বর্ণনাতীত যন্ত্রণা । এভাবেই কাটছে অজস্র দীর্ঘ রাত, শীতল নিস্তব্ধ ভোর, নির্জন দুপুর আর বিষণ্ণ আবছা গোধূলি । মাঝে মাঝে অপ্রকৃতিস্থ মনে হয় নিজেকে । তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছো আমার ব্যাপারটা, আমি যতদূর জানি মেয়েরা তোমাকে পছন্দ করে না, তোমার আশে পাশে ঘেঁষে না । তুমিও আমার মতো তৃষ্ণার্ত আর বুভুক্ষ ।
- এটা আসলেই ভয়াবহ, শারীরিক এবং মানসিক দুদিক দিয়েই ।
- আমি মহসিনকে অসংখ্যবার বলেছি, সে বিয়ের আগে সেক্স করতে কোনভাবেই রাজি নয়, এমনকি গোপনে বিয়েও সে করবে না । আমি বহুভাবে তাকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, আমার ভাবতে কষ্ট হয়, আমি তাকে ভালবাসি, তাকে ঠকাতে চাই না আমি । অথচ পৃথিবী সরল নয়, চাইলেও এখানে কেউ নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সব নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না ।
- এখন কি করবে ভাবছো ।
- আমরা গোপনে বিয়ে করবো যদি তুমি রাজি থাকো । দুই বছরের জন্য । এরপর তুমি আমাকে ডিভোর্স দেবে । সারা জীবনের জন্য চাপা পড়ে যাবে এই দুই বছর ।

প্রায় দেড় বছর সব ঠিকঠাকই চলেছে । আমরা সুযোগ পেলেই সবার আড়ালে চলে যেতাম শহর ছেড়ে, সারাদিনের জন্য রাঙ্গামাটি, নীলগিরি অথবা কলাতলী সমুদ্র পাড়ের কোন হোটেলে । আমরা অবিরাম সেক্স করতাম আর সমুদ্রের নীল জলে ভিজতাম । অদ্ভুত উদ্দাম একটা সময় ছিল সেটা । আমি যেন কল্প জগতে ভাসছিলাম, আমার অর্থাভাবও কেটে গেছিল । জেরিন আমাকে প্রচুর টাকা দিতো । সময়টা ছিল আনন্দের-সুখের, আমি অনেক ভালো বোধ করতাম ঐ সময়টায়, রাতে এবং দিনে, আমার কোন দুঃখবোধ ছিল না তখন ।
কিন্তু সুসময় সম্ভবত ধরে রাখা যায় না দীর্ঘ দিন, ফুরিয়ে যায় কল্পনার চেয়েও দ্রুত । একদিন হঠাৎই আমার ঘোর কাটল, জেরিন আমাকে বলল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্সের যাবতীয় কাজ সেরে ফেলতে, সে তার বহু বছরের প্রেমিককে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে করতে যাচ্ছে । যদিও ব্যাপারটা ঘটারই কথা ছিল, তবু অকল্পনীয় আর অসম্ভব মনে হচ্ছিলো সবকিছু । আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম কিছু মুহূর্তের জন্য, সবকিছু যেন থমকে গেলো আচমকা, যেভাবে প্রচণ্ড ঝড় শুরুর পূর্বে কালো মেঘে ঢেকে যায় সূর্য, দমকা হাওয়া সহসাই পথ হারায় কোন প্রান্তরে, থমথমে শীতল অনুভূতি ছড়ায় ক্ষণিকের জন্য, কেবল কিছু শুকনো পাতা আর মিহি বালি ভাসে বাতাসে, সাথে ভাসে একটা হাহাকার ভরা উৎকণ্ঠার পূর্বাভাসের গন্ধ ।

আচমকাই যেন খটখটে বাস্তবে আছড়ে পড়লাম, জেরিনের দেয়া শর্তটা মনে পড়লো আমার । তার পুরুষ ছিল, সে একজনকে ভালোবাসতো, আর তাকেও একজন ভালোবাসতো । ভালোবাসার তার অভাব ছিল না, তার দরকার ছিল প্রেম, সে আমার কাছে এসেছিল প্রেমের জন্য । আমি তাকে প্রেমের সব আনন্দই দিয়েছিলাম । কিন্তু আমাকে ভালোবাসার কেউ ছিল না । জেরিন আমাকে প্রেম দিয়েছিল, ভালোবাসাও হয়তো কিছু কিছু । আমি কেন তাকে ছেড়ে দিবো, আমারও ভালোবাসা দরকার, একইসাথে প্রেমও । আমি কোনভাবেই নিজের আনন্দকে বিসর্জন দিতে পারি না ।
আমি জেরিনকে আমার ভালোবাসার কথা বললাম । সে আইনত আমার স্ত্রী, আমার অপারগতা তাকে জানালাম আমি ।
জেরিন কয়েক মুহূর্ত আমার দিকে তাকিয়ে ছিল নিস্পলক পাথরের মূর্তির মতো, এরপর আচমকাই নিঃশব্দে জ্ঞান হারালো ।

অনেক বছর পর যখন জেল থেকে বেরুলাম আমি, সব কিছুই পাল্টে গেছে ততদিনে । জেরিন প্রবাসী এক ছেলেকে বিয়ে করে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছে । আমার সব সহপাঠী বাচ্চাদের স্কুলের ব্যাগ নিয়ে দৌড়াচ্ছে । আমি যেই পুরনো একতলা বাড়িটার চিলেকোঠায় থাকতাম সেটা ভেঙে বহুতল ভবন হয়েছে । জেরিনের সেই প্রভাবশালী ভাইটা স্ট্রোকে মারা গেছে, যে মিথ্যা মামলায় আমার বহু বছর জেলে থাকার বন্দোবস্ত করেছিল । অথচ আমি কেবল ভালবেসেছিলাম, আর কিছুই না ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫২
৩৮টি মন্তব্য ৩৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×